ভূত মেলা বন্ধ করতে গুলি চলল পলামুতে

কেউ দুলে দুলে মাটিতে মাথা ঠুকছে, কেউ আবার নিজের মাথার চুল কেটে সামনে জ্বলতে থাকা আগুনে ছুড়ে ফেলছে। কেউ মানুষের খুলি নিয়ে পুজো করছে। ভুত, প্রেত, ডাইনিদের ‘মোকাবিলা’-র আস্ত একটা বাজার। এখানেও স্টল রয়েছে। কয়েকশো ওঝা, গুণিন দোকান খুলে বসেছে এখানে। ঝাড়খণ্ডের পলামু জেলার নওডিহি থানা এলাকার সরাইডিহি গ্রাম। ঝড়িয়া নদীর ধারে। মেলার নামও দেওয়া হয়েছে ভূত মেলা।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচি শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:০৫
Share:

নদীর বুকে চলছে ‘ভূত-ঝাড়া’। সরাইডিহির মেলায়। — নিজস্ব চিত্র।

কেউ দুলে দুলে মাটিতে মাথা ঠুকছে, কেউ আবার নিজের মাথার চুল কেটে সামনে জ্বলতে থাকা আগুনে ছুড়ে ফেলছে। কেউ মানুষের খুলি নিয়ে পুজো করছে।

Advertisement

ভুত, প্রেত, ডাইনিদের ‘মোকাবিলা’-র আস্ত একটা বাজার। এখানেও স্টল রয়েছে। কয়েকশো ওঝা, গুণিন দোকান খুলে বসেছে এখানে। ঝাড়খণ্ডের পলামু জেলার নওডিহি থানা এলাকার সরাইডিহি গ্রাম। ঝড়িয়া নদীর ধারে। মেলার নামও দেওয়া হয়েছে ভূত মেলা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তথাকথিত ডিজিটাল ইন্ডিয়া থেকে কয়েক লক্ষ যোজন দূরের এই জগত্। সাধারণ গ্রামের মানুষের বদ্ধ কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসই এই ভূত মেলার ভিত্তি। তা বিক্রেতাদেরও মূলধন। স্থানীয় গ্রামবাসীদের কথায়, সরাইডিহিতে এই মেলা এ বারই প্রথম বসলেও এই এলাকায় ভূত মেলা নতুন কিছু নয়। পলামুর হায়দারনগরে প্রতি বছর দশেরার পরে বসে ভূত মেলা। দিনে গড়ে আট থেকে দশ হাজার মানুষ ভিড় করেন সেখানে। শুধু স্থানীয়রাই নন, আশপাশের জেলা, এমনকী বিহার থেকেও মানুষ আসেন এখানে। কেউ আসেন ভূত ঝাড়াতে, কেউ আসেন বশীকরণ দ্রব্য কিনতে, কেউ বা আসেন গ্রামে ডাইনির খোঁজে। শুধু ওঝাই নয়, মেলায় থাকেন হাতুড়েরাও। হায়দার নগরের ভূত মেলার সাফল্য দেখেই এ বার সরাইডিহিতেও পুজোর আগে আসর জমিয়েছে ভূত মেলা।

Advertisement

অন্য বার পুলিশ নিস্ক্রিয় থাকলেও এ বার সক্রিয় হয়ে উঠেছে তারা। গত কাল মেলা বন্ধ করতে গিয়ে ‘গণ-বিক্ষোভ’ সামলাতে গুলিও চালাতে হয় পুলিশকে। পলামুর জেলাশাসক কে শ্রীনিবাসন বলেন, ‘‘আমরা যখন জানতে পারলাম স্থানীয় মুখিয়া ও কয়েক জনের উদ্যোগে এই ভূত মেলা সরাইডিহিতে বসতে চলেছে তখনই তা বন্ধ করার নির্দেশ দিই। কিন্তু তা-ও এই মেলা বসে। তাই মেলা বন্ধ করতে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হই।’’

তবে গত কাল মেলা বন্ধ করতে গিয়ে আক্রমণের মুখে পড়ে পুলিশ। পুলিশের বন্দুক কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে জনতা। শেষ পর্যন্ত পুলিশকে গুলি চালাতে হল। রফিক আহমেদ নামে এক যুবক পুলিশের গুলিতে মারাও যায়। এর পরেই প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিই কি আইন করে বা পুলিশ দিয়ে বন্ধ করা যাবে এই অন্ধবিশ্বাসের মেলা? এডিজি এস এন প্রধানের কথায়, ‘‘সেটা পরের কথা। কিন্তু মেলা কোনও ভাবেই চলতে দেওয়া যাবে না। এখান থেকে নানা অপরাধেরও জন্ম হচ্ছে। রমেশ ভূইয়া নামে এক ওঝাকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

ভূত ভর করেছে এই অপবাদে প্রায়ই মানুষকে নানা অমানবিক শাস্তি দেওয়া হয়। প্রশ্ন উঠেছে, এর জন্য সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি সচেতনতা প্রচারে কেন তেমন ভাবে উদ্যোগী হচ্ছে না?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন