প্রতীকী ছবি।
তিনি সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনও তাঁর উল্টো দিকে!
সীতারাম ইয়েচুরিকে রাজ্যসভায় পাঠানোর জন্য আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের প্রস্তাব খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে এ বার দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে সিপিএম কোন পথে হাঁটবে? একই সঙ্গে প্রশ্ন, ২০১৮-র হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে কি প্রকাশ কারাট ও কেরল শিবির ইয়েচুরিকে পদ থেকেই উৎখাত করবে?
বিজেপি ও কংগ্রেসের সঙ্গে সমদূরত্ব রেখে চলার নীতি বেঁধে দিয়ে গিয়েছেন কারাট। ইয়েচুরি সেই লাইন পেরিয়ে মোদী সরকারের মোকাবিলায় কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়ার রাস্তা খুলতে চান। যাতে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী জোটে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএম একমঞ্চে আসতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থে একই পথে হাঁটতে মরিয়া সূর্যকান্ত মিশ্র-বিমান বসুরাও। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে রাজ্যসভায় যাওয়া ছিল বস্তুত তারই মহড়া। কিন্তু মহড়াতেই হোঁচট খেলেন ইয়েচুরি-সূর্যকান্ত। কারাট, কেরলের পিনারাই বিজয়নদের মূল যুক্তি ছিল, কংগ্রেসের সমর্থনে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের রাজ্যসভায় যাওয়া চলবে না। পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটি, দুই স্তরেই ভোটাভুটিতে প্রমাণিত, সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতারা এখনও কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি বোঝাপড়ায় যেতে নারাজ।
ইয়েচুরি শিবিরের যুক্তি, ভোটাভুটিতে হার হলেও দু’টি লাভ হল। এক, কে কোথায় দাঁড়িয়ে, তা স্পষ্ট হয়ে গেল। দুই, বঙ্গ ব্রিগেড যে কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া চায়, তা নথিভুক্ত হল। এই কারণেই তাঁরা ভোটাভুটি পর্যন্ত বিতর্ক টেনে নিয়ে
গিয়েছেন। উল্টো দিকে কারাট শিবিরের দাবি, ভোটাভুটি তাঁরাও চেয়েছিলেন। যাতে প্রমাণ হয়ে যায়, ইয়েচুরি আসলে ‘সংখ্যালঘু সরকার’-এর প্রধান! তা প্রমাণ করে এ বার আগামী পার্টি কংগ্রেসেই ইয়েচুরিকে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে উৎখাতের প্রস্তুতি শুরু করতে চাইছে কারাট শিবির। দলীয় সূত্রের খবর, হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে কারাট শিবিরের ঘোড়া হয়ে উঠবেন পলিটব্যুরোয়
তেলুগু নেতা বি ভি রাঘভুলু।
এই অবস্থায় কারাট শিবিরের বিরুদ্ধে সূর্যবাবু-বিমানবাবুরা চাইলেও জোরালো লড়াই দিতে পারছেন না। কারণ, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে ৬ বছরে বড় কোনও আন্দোলনই গড়ে তুলতে পারেননি
তাঁরা। সংগঠনের হাল করুণ। এখন তাঁরা এমন করছেন যেন পশ্চিমবঙ্গের হয়ে ইয়েচুরি রাজ্যসভায় থাকলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে! সূর্যবাবুদের যুক্তি ছিল, ইয়েচুরি রাজ্যসভায় থাকলে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হতে পারতেন। এমনিতেই কোণঠাসা সিপিএমের সংসদে শক্তি বৃদ্ধি জরুরি। কারাট শিবিরের প্রশ্ন, ইয়েচুরি রাজ্যসভায় গেলেও বাংলায়দলীয় সংগঠনের কী লাভ হতো? কেরলের মতো ত্রিপুরাও কেন্দ্রীয় কমিটিতে মত দিয়েছে, বিজেপি-র মোকাবিলায় অন্য কারও সঙ্গে বোঝাপড়ার আগে নিজের শক্তি বাড়াতে হবে।