গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজনৈতিক পরিস্থিতিটা ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে গোয়ায়। মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, সোমবার দুপুর পর্যন্ত তার কোনও রফাসূত্রই বেরোয়নি। এ দিকে শরিক দল মাহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টি (এমজিপি) এবং গোয়া ফরোয়ার্ড পার্টি (জিএফপি) ক্রমশ ‘চাপ’ বাড়িয়ে চলেছে বিজেপির উপর। বিজেপি চাইছে তাদের শিবির থেকেই কাউকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হবে। দলীয় সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে বিশ্বজিত্ রানে এবং প্রমোদ সবন্তের নামও প্রস্তাব করেন বিধায়করা। এই দৌড়ে প্রণব সবন্তের নাম এগিয়ে থাকলেও, শরিক দলগুলো তাঁকে মেনে নিতে চাইছে না বলেও সূত্রের খবর। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে তাতে গোটা বিষয়টি এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় শিবিরের কাছে।
মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের মৃত্যুর পরই পরিস্থিতিটা আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব কার হাতে তুলে দেওয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা করতে রবিবার রাতেই গোয়ায় ছুটে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। রাতভর দলীয় বিধায়ক এবং বিজেপির শরিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু তাতেও কোনও সমাধান সূত্র বেরোয়নি। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি করে বসেন মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টির নেতা সুদীন ধাবালিকার। তাঁর অভিযোগ বিজেপি এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এ দিন বেলা বাড়তেই চাপ বাড়ানোর কৌশল নেয় এমজিপি। ধাবালিকার হুঁশিয়ারি দেন, এর পর বিজেপিকে তাঁর দল সমর্থন করবে কি না তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে দলের কর্মসমিতির বৈঠকের পরই বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এমজিপি-র পাশাপাশি জিএফপি-ও বিজেপির উপর চাপ বাড়ানোর রণকৌশল নিয়েছে। সূত্রের খবর, জিএফপি প্রধান এবং রাজ্যের মন্ত্রী বিজয় সরদেশাইও চাইছেন তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হোক। সরদেশাই বলেন, “রাজ্যে জোট সরকারের ভবিষ্যত্ নিয়ে রাতভর বিস্তর আলোচনা হয়েছে। তবে এখনও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়নি। শরিক দলগুলো তাদের মতামত জানিয়েছে।”
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরও পড়ুন: এ বার রাজনীতির লড়াইয়ে রাজু শ্রীবাস্তব, কানপুর থেকে লড়বেন বিজেপির টিকিটে
আরও পড়ুন: রাজনীতির লড়াইয়ে ফের পুরনো ভূমিকায়, রাজ্য বিজেপির প্রচার গান
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ দিকে, বিজেপি ও শরিক দলগুলোর এই টানাপড়েনের মাঝেই রাজ্যপাল মৃদুলা সিংহের কাছে ছুটে গিয়েছেন রাজ্যের কংগ্রেস বিধায়করা। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে তাদের সরকার গড়তে দেওয়ার দাবি জানান রাজ্যপালের কাছে। বিরোধী দলনেতা চন্দ্রকান্ত কাভেলকার বলেন, “রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছি। আমাদের হাতে ১৪ জন বিধায়ক। তাই আমাদের সরকার গড়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। রাজ্যপালকে জানিয়েছি আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করব।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গোয়ার এই রাজনৈতিক সঙ্কটের ফায়দা তুলতে চাইছে কংগ্রেস। এক দিকে কংগ্রেসের সরকার গঠনের তত্পরতা, অন্য দিকে দুই শরিক দলের ‘চাপ’— সব মিলিয়ে তিন কাঁটায় বিদ্ধ গোয়া বিজেপি। যে কাঁটা তুলতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিজেপিকে।
বিজেপি বিধায়ক ফ্রান্সিস ডি’সুজার মৃত্যু এবং দুই কংগ্রেস বিধায়ক সুভাষ শিরোদকার ও দয়ানন্দ সোপতের ইস্তফায় গোয়ার বিধানসভার ৪০টি আসন থেকে সংখ্যাটা কমে দাঁড়ায় ৩৭-এ। পর্রীকরের মৃত্যুর পর এই মুহূর্তে সেই সংখ্যাটা ৩৬। যার মধ্যে ১২টি বিজেপির, কংগ্রেসের ১৪টি আসন। ডি’সুজার মৃত্যুর পরেই তড়িঘড়ি রাজ্যপাল মৃদুলা সিনহাকে চিঠি লিখে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছিল কংগ্রেস। এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে শরিক দলগুলোর দাবির কাছে বিজেপি নতস্বীকার করবে নাকি নিজের শিবিরের লোককেই মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসাবেন সে দিকে তাকিয়েই গোটা দেশ।
রাজ্য ও কেন্দ্র বিজেপির নেতারা পর্রীকরের শেষকৃত্যে হাজির হয়েছেন। এ দিন মিরামার সৈকতে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্য়াদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বরা পর্রীকরকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ইতিমধ্যেই গোয়া পৌঁছে গিয়েছেন।