National News

উপমহাদেশে খেলা ঘুরিয়ে দেবে রাফাল: চুক্তির ভূয়সী প্রশংসায় বায়ুসেনা প্রধান

এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধনোয়া বলেন, ‘‘রাফাল উপমহাদেশে আসার পরে খেলা ঘুরে যাবে, এই যুদ্ধবিমানের অনেক রকমের সক্ষমতা রয়েছে।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:১৬
Share:

রাফাল চুক্তিকে ‘সাহসী পদক্ষেপ’ আখ্যা দিয়েছেন বায়ুসেনা প্রধান। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সরকারকে স্বস্তি দিয়ে রাফাল যুদ্ধবিমানের এবং রাফাল চুক্তির ভূয়সী প্রশংসা করলেন ভারতের বায়ুসেনা প্রধান। রাফাল একটি ‘ভাল এয়ারক্র্যাফ্ট’ এবং ভারতের হাতে এই যুদ্ধবিমান এলে উপমহাদেশে ‘খেলা ঘুরে যাবে’— বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে এমনই মন্তব্য করলেন এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধনোয়া। শুধু রাফালের প্রশংসা করেই থামেননি বায়ুসেনা প্রধান। অনিল অম্বানীর সংস্থার সঙ্গে রাফাল নির্মাতা সংস্থা দাসোর চুক্তির নেপথ্যে সরকারের বা বায়ুসেনার কোনও ভূমিকা নেই বলেও তিনি এ দিন মন্তব্য করেছেন।

Advertisement

এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধনোয়া বলেন, ‘‘রাফাল উপমহাদেশে আসার পরে খেলা ঘুরে যাবে, এই যুদ্ধবিমানের অনেক রকমের সক্ষমতা রয়েছে।’’ তিনি জানিয়েছেন, ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে শুধু যুদ্ধবিমান কেনা হচ্ছে না, অনেক উন্নত মানের আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাপনাও পাচ্ছে ভারত। বায়ুসেনা প্রধানের কথায়, ‘‘সেরা অস্ত্রশস্ত্র, ভারতের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে বিশেষ ধরনের উন্নীতকরণ, নির্মাতাদের কাছ থেকে দীর্ঘতর সময়ের জন্য সহায়তা পাওয়া... রাফাল চুক্তিতে আমরা অনেক রকমের সুবিধা পাচ্ছি।’’

মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিপুল অঙ্কের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যখন রাফাল চুক্তি নিয়ে দেশজোড়া হইচই ফেলার চেষ্টা শুরু করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী, ঠিক তখনই বায়ুসেনা প্রধানের এমন একটি সাংবাদিক সম্মেলন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। রাফাল যুদ্ধবিমান এবং রাফাল চুক্তির প্রশংসায় বায়ুসেনা প্রধান এ দিন যা বলেছেন, তাকে হাতিয়ার করার চেষ্টা শুরু করেছে শাসক বিজেপি। আর বিরোধী কংগ্রেস বিস্ময় প্রকাশ করতে শুরু করেছে রাফাল বিতর্কে বায়ুসেনা প্রধানের অংশগ্রহণ নিয়ে। এই প্রথম বার নয়, আগেও বায়ুসেনা প্রধান একাধিক বার রাফাল চুক্তির প্রশংসায় মুখ খুলেছেন। এ দিন ফের বায়ুসেনা প্রধান বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করায় কংগ্রেস অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। সরকারের নির্দেশেই বিরোধী পক্ষের মোকাবিলা করতে বায়ুসেনা প্রধানের মতো পদাধিকারী মাঠে নামছেন বলে কংগ্রেসের ইঙ্গিত। বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয় বলে কংগ্রেসের তরফে মন্তব্য করা হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: অহিংসা দিবসেই কৃষক মিছিলে চলল লাঠি, জল-কামান, কাঁদানে গ্যাস

ইউপিএ জমানায় যে দামে ফ্রান্সের কাছ থেকে রাফাল কেনার কথা হয়েছিল, তার তিন গুণ দামে নরেন্দ্র মোদী রাফাল কেন কিনছেন? প্রায় সব মঞ্চ থেকেই রাহুল গাঁধী সম্প্রতি এই প্রশ্ন তুলছেন। রাহুলের নির্দেশে জনসভায়, পথসভায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই একই প্রশ্ন বার বার তুলছেন অন্য কংগ্রেস নেতারাও। বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকার অনেক বারই রাহুল তথা কংগ্রেসের আক্রমণের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রাহুল ব্রিগেড ক্রমশ চড়াতেই থেকেই সুর। এ বার খোদ বায়ুসেনা প্রধান বি এস ধনোয়া সাংবাদিক সম্মেলন করে রাফাল যুদ্ধবিমানের এবং রাফাল চুক্তির প্রশংসা করায় কংগ্রেস কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গেল বলে বিজেপি মনে করছে। কংগ্রেস অবশ্য মনে করছে, রাফাল বিতর্কে বিজেপির অস্বস্তি যে বাড়ছে, তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

বায়ুসেনা প্রধান এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে যা যা বলেছেন, তাতে কিন্তু রাহুল গাঁধীর তোলা অনেক প্রশ্নেরই জবাব রয়েছে। ভারতীয় বাহিনীর জন্য রাফাল ফাইটার জেট কিনতে ফরাসি সংস্থা দাসোর সঙ্গে ভারতীয় শিল্পপতি অনিল অম্বানীর চুক্তি কেন হল? কেন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যাল-এর সঙ্গে দাসোকে গাঁটছড়া বাঁধতে বলা হল না? প্রশ্ন কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের। ধনোয়া এ দিন বলেছেন, ‘‘দাসো-ই বেছে নিয়েছে তাদের সহযোগী সংস্থা কোনটি হবে। সরকার বা ভারতীয় বায়ুসেনার কোনও ভূমিকা এতে ছিল না।’’ হ্যালের সক্ষমতা নিয়েও এ দিন আলগোছো প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তিনি। ধনোয়া জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে হ্যাল সামগ্রিক উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়সীমা মেনে কাজ করার ক্ষেত্রে হ্যালের সমস্যা রয়েছে বলে বায়ুসোনা প্রধানের দাবি। সুখোই-৩০, জাগুয়ার, মিরাজ-২০০০-এর মতো যুদ্ধবিমানগুলির আধুনিকীকরণের কাজ হ্যাল সময় মতো শেষ করতে পারেনি বলে ধনোয়া এ দিন জানান।

আরও পড়ুন: মুসলিম বলে সুবিচার পাননি, তাই হিন্দু হলেন আখতার!

ইউপিএ জমানায় কথা হয়েছিল, ১২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনবে ভারত। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর সরকার আপাতত ৩৬টি রাফাল কেনার জন্য চুক্তি করেছে। ১২৬-এর বদলে কেন ৩৬? এ প্রশ্নও তুলেছে বিরোধী দলগুলি। এয়ার চিফ মার্শাল ধনোয়া বুধবার জানিয়েছেন, বায়ুসেনার সঙ্গে আলোচনা করেই ৩৬টি রাফাল কেনার চুক্তি করেছে সরকার।

চিফ মার্শাল বি এস ধনোয়া বলেন, ‘‘রাফাল উপমহাদেশে আসার পরে খেলা ঘুরে যাবে, এই যুদ্ধবিমানের অনেক রকমের সক্ষমতা রয়েছে।’

উপমহাদেশের পরিস্থিতি এখন যে রকম, তাতে খুব দ্রুত ভারতীয় বায়ুসেনার সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মত। চিন-পাকিস্তানের যৌথ শক্তির মোকাবিলা যদি ভারতকে করতে হয়, তা হলে খুব দ্রুত যুদ্ধবিমানের সংখ্যা বাড়ানো দরকার, বলছে বিশেষজ্ঞদের হিসাব। রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা মিগ-২১, মিগ-২৭ যুদ্ধবিমানগুলিকে যে ভাবে ধাপে ধাপে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে, তাতে গত কিছু বছরে বেশ দ্রুতই কমেছে যুদ্ধবিমানের সংখ্যা। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যাল ‘তেজস’ নামে একটি লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট তৈরি করেছে। তেজস অনেক ক্ষেত্রেই মিগ বিমানগুলির স্থান নিতে পারে। কিন্তু যে সংখ্যক যুদ্ধবিমান যে সময়সীমার মধ্যে বায়ুসেনা চাইছে, ততটা তাড়াতাড়ি অতগুলি তেজস তৈরির সক্ষমতা হ্যালের নেই। তাই রাফালেই আস্থা রেখেছে নয়াদিল্লি।

যে সংখ্যক মিগ বসিয়ে দেওয়া হয়েছে, ততগুলি রাফাল কিন্তু কেনা হচ্ছে না। তার চেয়ে অনেক কমই কেনা হচ্ছে। কিন্তু বায়ুসেনা সূত্রে জানানো হচ্ছে, রাফাল যুদ্ধবিমান এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চমানের যুদ্ধবিমানগুলির অন্যতম। মিগের চেয়ে অনেক বেশি সক্ষম, অনেক বেশি আধুনিক। তাই বায়ুসেনা প্রধান বলছেন, ৩৬টি রাফাল হাতে এলে ভারতীয় বায়ুসেনার সক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যাবে।

রাফাল চুক্তিকে ‘সাহসী পদক্ষেপ’ আখ্যা দিয়েছেন বায়ুসেনা প্রধান। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের সামনে তিনটে অপশন ছিল— কিছু একটা ঘটার জন্য অপেক্ষা করা, আরএফপি (রিকোয়েস্ট ফর প্রোপোজাল) প্রত্যাহার করে নেওয়া অথবা আপৎকালীন ভিত্তিতে (যুদ্ধবিমান) কেনা। আমরা আপৎকালীন ভিত্তিতেই কিনলাম। রাফাল এবং এ-৪০০, দুটো চুক্তিই ভারতীয় বায়ুসেনার শক্তিবৃদ্ধি ঘটাবে।’’

রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ কেনার চুক্তিও প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার পথে। আগামী সপ্তাহেই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে মস্কো মঙ্গলবারই জানিয়েছে। বায়ুসেনা প্রধানের মন্তব্যে স্পষ্ট যে, এস-৪০০ কেনার চুক্তিতেও তিনি খুশি।

(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদেরদেশবিভাগে ক্লিক করুন।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন