এনআরসি বিতর্ক

মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবের বিরোধিতায় সরব স্পিকার

রাজ্যপালের পর, এ বার বিধানসভার স্পিকার প্রণব গগৈও জাতীয় নাগরিক পঞ্জি গড়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর করা সুপারিশের বিরোধিতা করলেন। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ কেন্দ্রকে প্রস্তাব দিয়েছেন, ২০১৪ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের নাম নাগরিক পঞ্জিতে তোলা হোক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৫ ০৩:১৫
Share:

রাজ্যপালের পর, এ বার বিধানসভার স্পিকার প্রণব গগৈও জাতীয় নাগরিক পঞ্জি গড়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর করা সুপারিশের বিরোধিতা করলেন। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ কেন্দ্রকে প্রস্তাব দিয়েছেন, ২০১৪ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের নাম নাগরিক পঞ্জিতে তোলা হোক। কারণ ঝাড়াই-বাছাইয়ের পরে বিদেশিদের বাদ দিয়েই ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে নাম থাকা সকলেই ভারতীয়। রাজ্যপাল পদ্মনাভ বালকৃষ্ণ আচার্য ইতিমধ্যেই এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে জানিয়েছেন, ভোটার তালিকায় বহু বাংলাদেশির নাম থাকতে পারে।

Advertisement

আচার্য না হয় আরএসএস-বিজেপির সদস্য ছিলেন। কিন্তু বিধানসভায় স্পিকার প্রণব গগৈও মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ নাকচ করে নগাঁওতে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ঠিক পরামর্শ দিচ্ছেন না। আশা করি কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো আগের নিয়মেই এনআরসির কাজ চালাবে।’’ এর আগে, অসমীয়ার সংজ্ঞা নিয়েও স্পিকার বনাম মুখ্যমন্ত্রী কাজিয়া চরমে উঠেছিল। রাজ্যের ৫০টিরও বেশি দল-সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে ১৯৫১ সালকে অসমিয়া হওয়ার ভিত্তিবর্ষ হিসেবে নির্ধারিত করার সুপারিশ-সহ রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন স্পিকার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন।

এ দিকে, ২০১৪ সালের ভোটার তালিকা নিয়ে করা গগৈয়ের সুপারিশের বিরুদ্ধে বিজেপি তোপ দেগেই চলেছে। কংগ্রেস আজ পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করে, দল গগৈয়ের সঙ্গে একমত। অসমের অনেক ভূমিপুত্রের কাছে নাগরিক পঞ্জির জন্য প্রয়োজনীয় ১২টি শংসাপত্রের কোনওটিই নেই। সেই জন্যই মুখ্যমন্ত্রী ২০১৪ সালের ভোটার তালিকাকে নাগরিক পঞ্জির ত্রয়োদশ প্রামাণ্য নথি হিসেবে ধরার সুপারিশ কেন্দ্রকে পাঠিয়েছেন। কোনও ভারতীয়র নাম যাতে এনআরসি থেকে বাদ না যায় তা নিশ্চিত করাই কংগ্রেসের লক্ষ্য। তবে এ নিয়ে কেন্দ্র বা সুপ্রিম কোর্টের তরফে কোনও নতুন নির্দেশ না আসা অবধি বর্তমান পদ্ধতিতেই এনআরসির কাজ চলবে।

Advertisement

বিজেপি অভিযোগ তুলেছিল, কংগ্রেস অবৈধ বিদেশিদের সুরক্ষা দিচ্ছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র রিপুন বরা পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন ২০১৪ সালের ১৬ মের পরে সব বাংলাদেশিকে অসম ছাড়তে হবে। সেই প্রতিশ্রুতির কী হল? সাংসদ সর্বানন্দ সোনোয়াল, বিজয়া চক্রবর্তীরা বাংলাদেশ সীমান্তে পতাকা পুঁতে দাবি করেছিলেন অসমের এক ইঞ্চি মাটিও বাংলাদেশকে দেওয়া হবে না। মোদী ভূমি হস্তান্তর চুক্তি করার পরেও তাঁরা চুপ কেন? কেন স্থলসীমান্ত চুক্তির ফলে অতিরিক্ত ৫০ হাজার মানুষের বোঝা অসমের ঘাড়ে চাপাচ্ছে কেন্দ্র?’’ তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। অথচ এই তালিকা কিন্তু কেন্দ্র সরকার ও নির্বাচন আয়োগের তৈরি করা। বিজেপি যদি মনে করে তালিকায় বাংলাদেশিদের নাম রয়েছে তবে তারা নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছে না কেন?’’

তরুণ গগৈও বলেন, ‘‘বিজেপি ও রাজ্যপাল নিশ্চয়ই অবগত আছেন, ভোটার তালিকা আমরা তৈরি করিনি। তাহলে সন্দেহজনক তালিকা নিয়ে আমায় দায়ী না করে তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে কেন বলছেন না?’’ তিনি জানান, ১৯৯৭ সালে ভোটার তালিকা ঢেলে সাজার সময় ১৮ লক্ষ ডি বা ডাউটফুল-ভোটার চিহ্নিত করা হয়েছিল। নথিপত্র পরীক্ষার পরে পর্যায়ক্রমে সাড়ে ১৩ লক্ষ মানুষের নাম সন্দেহজনক ভোটারের তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে। বিদেশি শনাক্তকরণ আদালতে ২ লক্ষ ২০ হাজর নাম পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে এখনও ১,৪১,৭৩৩টি মামলা বিচারাধীন।

রাজ্যপাল আচার্যের বিরুদ্ধেও ফের সরব হয়েছে কংগ্রেস। সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করা হয়, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বাইরে গিয়ে, ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট সদস্য হিসেবে রাজ্যপাল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও আরএসএস সদস্যদের বেছে বেছে নিযুক্তি দিয়েছেন।’’

এ দিকে, এনআরসি প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আজ উজানি অসমের নানা চা-বাগান এলাকায় আটসা ও আসা পথ অবরোধ করে। রাজ্যের চা-বাগানগুলিতে ধর্মঘটও পালিত হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন