কর্তব্যপরায়ণ: রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রণব মুখোপাধ্যায়। সোমবার। ছবি: পিটিআই।
আর এক মাস। চব্বিশে জুলাইয়ের পর থেকে তো অখণ্ড অবসরে জীবন কাটানোরই কথা।
কিন্তু ‘অবসর’ শব্দটিতে অভ্যস্ত নন কাজপাগল রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। রাজনৈতিক জীবন থেকে সরে গিয়ে যখন রাষ্ট্রপতি হলেন, তখনই বলেছিলেন, ‘প্রতি দিন সংসদ এবং রাজনৈতিক জীবনের উত্তেজনাকে মিস করছি।’’ রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ শেষের পর তাই অন্য ভাবে ব্যস্ত থাকতে চাইছেন প্রণব। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রনীতি এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে তাঁর। জানা গিয়েছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, কূটনীতি এবং অস্ত্র সংগ্রহ নীতি নিয়ে গবেষণার সুযোগও থাকবে এই প্রতিষ্ঠানে।
কবে এই প্রতিষ্ঠান অথবা ফাউন্ডেশন আনুষ্ঠানিক ভাবে কাজ শুরু করবে, তার কোনও সময়রেখা এখনও তৈরি হয়নি। রাষ্ট্রপতিভবন থেকে তাঁর নতুন রাজাজি মার্গের বাংলো যাওয়ার প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগবে। সময় লাগবে নিজেকে নতুন পরিস্থিতিতে গুছিয়ে নিতেও। আর তার পরেই কাজ শুরু করতে দিতে চাইছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
জানা গিয়েছে, দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন চিন্তাবিদ, গবেষক, অধ্যাপক, রাষ্ট্রনেতা, অর্থনীতিবিদ, অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের এক ছাদের তলায় এনে বছরের বিভিন্ন সময়ে সম্মেলনের আয়োজন করবে এই প্রতিষ্ঠান। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের চিন্তাভাবনার আদানপ্রদান হবে। গোটা বছরের বক্তৃতা এবং অন্যান্য কাজকে একত্রিত করে বছরে একটি বা দু’টি বই প্রকাশ করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
ওয়াকিবহাল শিবিরে বক্তব্য, যে হেতু দীর্ঘ পাঁচ দশক সক্রিয় ভাবে জাতীয় রাজনীতির শীর্ষস্থানে থেকেছেন এবং অর্থ, বিদেশ-সহ বিভিন্ন মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন, সেই সুবাদে তাঁর পরিচিতি এবং যোগাযোগ বিশ্বজুড়ে। শুধু বাংলাদেশ অথবা সার্কভুক্ত দেশগুলিই নয়, রাশিয়া, ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন সময়ের রাষ্ট্রনেতার সঙ্গেও বন্ধুত্ব রয়েছে তাঁর। হামিদ কারজাই, নওয়াজ শরিফ, কন্ডোলিজা রাইস, ভ্লাদিমির পুতিন— তালিকাটা দীর্ঘই। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে আফ্রিকার নেতাদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে তাঁর। ফলে তাঁর ফাউন্ডেশন আয়োজিত সম্মেলনগুলির প্যানেল যথেষ্টই চোখধাঁধানো হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ফাউন্ডেশনের নাম নিজের নামে করতে এখনও নারাজ প্রণববাবু। সাধারণ ভাবে কোনও গ্রন্থাগার, গবেষণাকেন্দ্র, থিংক ট্যাঙ্ক বা ফাউন্ডেশন সাধারণত যে ব্যক্তির উদ্যোগে এবং নেতৃত্বে গড়ে ওঠে, তাঁর নামেই হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রণববাবু নিজের নামটি বাইরেই রাখতে চাইছেন।