Bihar Assembly Election 2025

ইতিহাস গড়ব, নয় হারিয়ে যাব, বিহারে পণ পি কে-র

নরেন্দ্র মোদী নন, রাহুল গান্ধী নন। নীতীশ কুমার নন, তেজস্বী যাদবও নন। এই জনস্রোতের ছবি যাঁকে ঘিরে, তিনি পূর্ণ সময়ের রাজনীতিতে এখন স্নাতকই হননি! আর এই ছবি এক দিনে এক জায়গার নয়।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:৩৯
Share:

বিহারে দ্বিতীয় দফার ভোটের শেষ দিনে প্রচারে প্রশান্ত কিশোর। — নিজস্ব চিত্র।

রাস্তায় পিল পিল করছে মাথা। সার দিয়ে গাড়ি। মূল কনভয়ের সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে এলাকার কর্মী-সমর্থকদের বাহনও। রাস্তার ধারে মোবাইল হাতে ছবি তোলার হিড়িক। একটা গাড়ির মাথায় বসে আশীর্বাদ কুড়োচ্ছেন প্রার্থী। পাশ দিয়ে যাওয়া বাসের জানলা থেকে ঝুঁকে পড়ে প্রশ্ন আসছে, ‘‘স্যর কোথায়?’’ প্রশ্ন শুনে গাড়ির সামনের বাঁ দিকের আসন থেকে মাথা তুললেন তিনি। আকুল বাসযাত্রীর বাড়িয়ে দেওয়া হাত ছুঁতে বেজায় কসরত করতে হল ‘স্যর’কে! ‘‘আপনাকেই এ বার সবাই মিলে ভোট দেব’’, জানলা দিয়ে ঘোষণা ছুড়ে দিয়ে ধীর লয়ে বেরিয়ে গেল বাস।

নরেন্দ্র মোদী নন, রাহুল গান্ধী নন। নীতীশ কুমার নন, তেজস্বী যাদবও নন। এই জনস্রোতের ছবি যাঁকে ঘিরে, তিনি পূর্ণ সময়ের রাজনীতিতে এখন স্নাতকই হননি! আর এই ছবি এক দিনে এক জায়গার নয়। ভোটের প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকে জেলায় জেলায় নানা জনপদে এই চিত্রই পুনরাবৃত্তি করে চলেছেন তিনি।

দেখতে দেখতে মনে হচ্ছে, কলকাতায় তৃণমূল কংগ্রেসের পরামর্শদাতা সংস্থার কর্ণধার থাকাকালীন তাঁদের কার্যালয়ে বসা প্রশান্ত কিশোর আর এই লোকটার অনেক ফারাক। সেই পি কে শুনতেন বেশি, এই পি কে একই কথা একই মাপে জায়গায় জায়গায় কৌশলগত ভাবে বলে চলেছেন। ভোট-কুশলীর নেপথ্য জীবন ছেড়ে ময়দানে এসে যেন রাজনীতিকে সবক শেখাতে নেমেছেন! গোটা বিহারে রাজা ভোজ থেকে গঙ্গু তেলি পর্যন্ত সবাই যখন কপ্টারে উড়ছেন, পি কে রাজ্য চষছেন গাড়িতে। তাঁর ‘জন সুরাজে’র তহবিলে ঘোষিত ভাবে ২৪১ কোটি টাকা আয় আছে গত বছর। টাকার স্রোত নিয়ে প্রশ্ন, জল্পনাও আছে। কিন্তু ধুরন্ধর পি কে জীবন সংগ্রামী বিহারিদের দেখাতে চান, তাঁদের জীবন পাল্টে দেওয়ার জন্য তাঁর আবির্ভাব হয়েছে। নেতাগিরি করার জন্য নয়।

বিহারের এ বারের বিধানসভা ভোটে তিনিই ‘এক্স ফ্যাক্টর’, নানা মহলে চর্চা তেমনই। এনডিএ-র ভোট কেটে তিনি মহাগঠবন্ধনকে অস্বস্তিতে ফেলবেন নাকি ব্রাক্ষণ সমর্থনে ভাগ বসিয়ে বিজেপির সমস্যার কারণ হবেন, সেই প্রশ্নেও আলোচনা বিস্তর। এমন আলোড়ন তোলা দলের নেতা হিসেবে নিজে ভোটে দাঁড়াননি, এই অবস্থানই বা কেন! পি কে-র মতে, ‘‘বিধায়ক বা মন্ত্রী, এমনকি মুখ্যমন্ত্রী হলেও তার আয়ু কত দিন হয়? বিহারকে যদি বদলে দেওয়া যায়, তা হলে লোকে বরং অনেক বেশি মনে রাখবে!’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘আমি নই, বিহারের এই ভোটে প্রকৃত ‘এক্স ফ্যাক্টর’ পরিযায়ী শ্রমিকেরা। যারা ব্যাগ কাঁধে ভিন্ রাজ্যে কাজে যায়, উৎসবের সময়ে গরু-ছাগলের মতো গাদাগাদি করে ফেরে, তারাই বিহারের ভাগ্য বদলে দিতে পারে।’’

উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজনীতিকের ভিড়ে ঠাসা বিহারের জমিতে পি কে-র কথা শুনতে সত্যিই অন্য রকম লাগে। অক্লান্ত ভাবে তিনি বলে যাচ্ছেন, ‘‘জাত-পাত, যাদব-মুসলিম বা ব্রাক্ষণ-দলিত, মোদী-নীতীশ না লালু— এ সব অনেক বছর ধরে হয়েছে। তিন বছর ধরে বিহারে ঘুরে ঘুরে আমরা বলছি, বাচ্চাদের শিক্ষা ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভোট দিন এ বার, বদল আনুন।’’ ভোটের মাঝে প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, বিহারের মানুষ যাতে রাজ্যেই কাজ করতে পারেন, তার জন্য তাঁরা ‘রোডম্যাপ’ তৈরি করছেন। অমিত শাহ শুনিয়েছেন শিল্পায়নের আশ্বাস। প্রথম দফার নির্বাচনের দিন আরজেডি-র সাংসদ মিসা ভারতী আবেদন করেছেন, ‘‘ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে এ বারের ভোটটা দিন।’’ চর্চা হচ্ছে, এ সবই ‘পি কে এফেক্ট’। অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠী যেমন স্পষ্টই মন্তব্য করেছেন, ‘‘ভোট আসবে যাবে। কিন্তু পি কে যা বলছেন, সেটা বলার লোক বারবার আসবে না। ভেবে দেখা উচিত।’’

রাজ্যে গত বছর বিধানসভার কয়েকটা আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে জন সুরাজ কিন্তু তেমন দাগ কাটতে পারেনি। এ বার পি কে-কে ঘিরে শহরাঞ্চলে যা ভিড়, গ্রামের ভিতরে তেমন প্রভাব অন্তত দৃশ্যত নেই। ভিড়ের মধ্যেও তরুণ যত, মহিলাদের উম্মাদনা তেমন চোখে পড়ার মতো নেই। তার চেয়েও মোক্ষম প্রশ্ন, জাত-পাতের সমীকরণে অভ্যস্ত বিহার কি পি কে-র অন্য সিলেবাস পড়তে চাইবে? প্রার্থী তালিকায় ২২ জন চিকিৎসক, ১১ জন পিএইচডি, ৫৫ জন স্নাতকোত্তর, ৮৫ জন কৃষিজীবিকে দিয়ে ডালি সাজিয়েছেন পি কে। ঔরঙ্গাবাদের বেসরকারি সংস্থার গাড়িচালক কিশোর পাসোয়ান বলে দিলেন, ‘‘এত ভিড় এমনি এমনি হয় না। কিছু আসন ওরা আনবেই।’’

আর পি কে-র ভবিষ্দ্বাণী? ‘‘হয় ইতিহাস গড়ার অংশীদার হব, নয়তো ইতিহাসে হারিয়ে যাব! বিহারের ইতিহাস রচনাটাই আসল কথা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন