বরখাস্ত আপের ২০ জন বিধায়ক

আপ নেতৃত্ব চাইছিলেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাষ্ট্রপতি অন্তত তাঁদের বক্তব্য শুনুন। সেই সুযোগ না দিয়ে ছুটির দিনেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন কোবিন্দ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২২
Share:

টস: নয়াদিল্লিতে এক ব্যাডমিন্টন ম্যাচে। ছবি: পিটিআই।

অরবিন্দ কেজরীবালের দলের বক্তব্য না শুনেই রবিবার, ছুটির দিনে তাঁর দলের ২০ বিধায়ককে বরখাস্তের সুপারিশে সিলমোহর বসালেন রাষ্ট্রপতি।

Advertisement

এতে এখনই কেজরীবাল সরকারের পতনের আশঙ্কা না থাকলেও বড় ধাক্কা খেল আম আদমি পার্টি (আপ)। অনিবার্য হয়ে পড়ল ‘মিনি বিধানসভা ভোট’ও। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের ‘সময়’ ও ‘পদ্ধতি’ নিয়েই এখন তুলকালাম রাজনীতি। আপের নিশানায় বিজেপি ও নির্বাচন কমিশন। আর কংগ্রেস বলছে, আপে ভাঙন রুখতেই সিদ্ধান্ত পিছিয়ে সাহায্য করল বিজেপি। সব অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির নজরে নতুন ভোটের স্বাদ।

ঘটনাটি কী? দিল্লি বিধানসভায় আসন ৭০টি। মন্ত্রী হতে পারেন বড়জোর এর ১০% অর্থাৎ ৭ জন। মন্ত্রী হওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে পড়া ২১ বিধায়ককে বিভিন্ন দফতরের পরিষদীয় সচিবের পদে এনে বাংলো, গাড়ি ও আরও নানা সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল। আর সেই লাভজনক পদের বিতর্কই গড়ায় নির্বাচন কমিশনের কাছে। ২১ জনের মধ্যে এক বিধায়ক আগেই পদত্যাগ করেন। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সিলমোহরে আজ বাকি ২০ জন বরখাস্ত হলেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: সঙ্ঘাতের পথেই আপ, প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা ঘোষণা

আপ নেতৃত্ব চাইছিলেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাষ্ট্রপতি অন্তত তাঁদের বক্তব্য শুনুন। সেই সুযোগ না দিয়ে ছুটির দিনেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন কোবিন্দ। তা-ও হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত মামলার শুনানির ২৪ ঘণ্টা আগে। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের পরে সেই মামলা এখন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ল। হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে নতুন মামলা করা ছাড়া গতি নেই আপের।

চিন্তায় থাকলেও কেজরীবাল সম্ভবত ভেবেছিলেন, রাষ্ট্রপতি ছুটির দিনে সিদ্ধান্ত না-ও নিতে পারেন। শেষ মুহূর্তে ‘উপরওয়ালা’র উপরে ভরসা রেখেছিলেন টুইটে। এ দিন ভোরে পাঁচটার কিছু আগে লিখেছিলেন, ‘‘উপরওয়ালা কিছু একটা ভেবেই আমাদের ৬৭টি আসন দিয়েছেন। প্রতি পদে উপরওয়ালা আম আদমি পার্টির সঙ্গে রয়েছেন। নইলে আমাদের সাধ্য আর কতটুকু। ব্যস্, শুধু সত্যের পথটা ছেড়ো না।’’ রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত জানার কয়েক ঘণ্টা পরে সেই কেজরীই ক্ষোভ উগরে দেন দিল্লির এক সভায়, ‘‘গোটা দেশে কেজরীবালই শুধু দুর্নীতিগ্রস্ত! বাকি সবাই ইমানদার?’’ দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই হানায় কিছু না পেয়েই মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে ২০ জনকে।

আপের প্রশ্ন, এত কীসের তাড়া? রাষ্ট্রপতি ও কমিশনের উপরে বিজেপির এত চাপই বা কেন? মেয়াদ ফুরোনোর ঠিক আগে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এ কে জ্যোতি বরখাস্তের সুপারিশ করলেন, আর রাষ্ট্রপতি আপের বক্তব্য না শুনেই রবিবার সিলমোহর বসালেন নির্বাচন কমিশনের সুপারিশে! বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা যশবন্ত সিন্‌হার মতে, এটা ‘ন্যায়বিচারের গর্ভপাত!’ টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘বক্তব্য না শুনে, হাইকোর্টের রায়ের অপেক্ষা না করে এই সিদ্ধান্ত তুঘলকশাহি।’’

কংগ্রেস অবশ্য বলছে, সবটাই আপ-বিজেপির গড়াপেটা ম্যাচ। এ নিয়ে কংগ্রেসের অজয় মাকেনের ব্যাখ্যা, তিন সপ্তাহ আগে এই সিদ্ধান্ত হলে রাজ্যসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারতেন না। বিক্ষুব্ধদের কারণে ভাঙন ধরত দলে। নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে বিজেপি সিদ্ধান্ত পিছিয়েছে। এবং সিদ্ধান্ত ঠেকাতেই মাসখানেক আগে অরুণ জেটলির সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন কেজরীবাল। দু’দিন আগেও জিএসটি বৈঠকের নৈশভোজে দু’জনের ঘনিষ্ঠতার ছবি দেখা গিয়েছে। অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির মীনাক্ষী লেখির বক্তব্য, ‘‘প্রভাব খাটালে রাজ্যসভা ভোটের আগেই সিদ্ধান্ত হত। কমিশন নিজের গতিতেই স্বাধীন ভাবে কাজ করেছে।’’

বিজেপির পাখির চোখ এখন দিল্লির ২০টি আসন। গত ভোটে কেজরী-ঝড়ে যেখানে ৪টির বেশি আসন পায়নি তারা। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ৩৬। কেজরীর হাতে এখনও ৪৬ বিধায়ক। ফলে সরকার পড়ার ভয় নেই। কিন্তু আদালতে সুরাহা না পেলে নতুন ভোটে আসন ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ তাঁর সামনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন