নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করতে হবে, সেদিকেই নজর দিন-বাজেটের অভিমুখ ঠিক করে দিয়ে অরুণ জেটলিকে এমনই পরামর্শ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।
না দিয়ে উপায়ই বা কী! প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার আগে মোদীর প্রচারের মন্ত্র ছিল, ক্ষমতায় এলে প্রতি বছর নতুন ১ কোটি চাকরির সুযোগ তৈরি করবেন। বাস্তবে তা হয়নি। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা-এর মতো মোদীর নোট বাতিলের ধাক্কায় আরও মানুষ রোজগার হারিয়েছেন।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারির বাজেটকে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরে তাই আর এক বার চেষ্টা করতে চাইছেন মোদী-জেটলি। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, যে সব শিল্পে বেশি চাকরি হওয়ার সুযোগ রয়েছে সে সব ক্ষেত্রের জন্য বাজেটে ‘উপহার’ ঘোষণা হতে পারে। দেওয়া হতে পারে বিশেষ কর ছাড়, ঋণের ক্ষেত্রে সুদের উপর ভর্তুকি বা উৎসাহ ভাতা। বস্ত্র, পর্যটন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া, তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর পরিষেবা, পেট্রো-রসায়ন, বিমান ও জাহাজ মেরামতির মতো ক্ষেত্র অরুণ জেটলির নজরে রয়েছে। এই ক্ষেত্রগুলি যাতে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে পারে, তার জন্য কাঁচামাল বা যন্ত্রাংশের উপরে উৎপাদন শুল্ক বা আমদানি শুল্ক কমানো হতে পারে।
নরেন্দ্র মোদী নিজেও হাত গুটিয়ে বসে নেই। সরকারি সূত্রের খবর, তিনি নিজে শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্দেশ দিয়েছেন, নতুন চাকরি তৈরির জন্য দ্রুত কিছু পদক্ষেপ করতে হবে। কিন্তু সেই পদক্ষেপ যেন বাজেটের হিসেবনিকেশের সময় অর্থমন্ত্রী জেটলির কাছে বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ক্যাবিনেট সচিব পি কে সিন্হা ও শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তারা এখন মাঠে নেমে পড়েছেন। সূত্রের খবর, উপকূলবর্তী এলাকায় কর্মসংস্থান তৈরির জন্য বাজেটে ‘কোস্টাল এমপ্লয়মেন্ট জোন’-এর ঘোষণা হতে পারে। যেখানে কারখানা তৈরি করে অন্তত ১০ হাজার লোকের চাকরির সুযোগ তৈরি করতে পারলে পাঁচ বছরের জন্য ‘কর ছুটি’-র সুবিধা মিলতে পারে।
নীতি আয়োগের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ দেশে প্রতি মাসে নতুন ১০ লক্ষ তরুণ-তরুণী চাকরি খুঁজতে বের হচ্ছেন। অর্থাৎ বছরে ১ কোটি ২০ লক্ষ নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হওয়া প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর বছরে এক কোটি চাকরি বা রোজগারের সুযোগ তৈরির প্রতিশ্রুতি কোনও স্বপ্ন নয়, সামাজিক চাহিদা।’’
কিন্তু বাস্তব ছবিটা কেমন? সরকারি শ্রম ব্যুরোর হিসেব বলছে, যে আটটি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয় ২০১৫-তে সেখানে মাত্র ১ লক্ষ ৩৫ হাজার নতুন চাকরি তৈরি হয়েছে। ২০১৪-তেই এই সংখ্যাটা ছিল ৪.২১ লক্ষ। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘২০১৩-তেও ৪.১৯ লক্ষ নতুন চাকরি তৈরি হয়েছিল। মোদী জমানায় ২০১৫-য় কর্মসংস্থান তৈরির অঙ্কটা ২০০৯-এর পরে সবচেয়ে কম। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি কতখানি ফাঁপা, তা এতেই স্পষ্ট।’’ মনমোহন সিংহের প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে বিজেপি অভিযোগ তুলত, আর্থিক বৃদ্ধির হারই শুধু বাড়ছে। নতুন চাকরি তৈরি হচ্ছে না। এখন কংগ্রেস বলছে না বাড়ছে আর্থিক বৃদ্ধির হার, না তৈরি হচ্ছে নতুন চাকরির সুযোগ।
বড় শিল্পের জন্য ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের জন্য ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া’, ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা’-এর মতো নানা প্রকল্প ঘোষণা করেছেন মোদী। তার পরেও বাজেটে নতুন চাকরির সুযোগ তৈরির জন্য অর্থমন্ত্রীকে চাপ দিচ্ছেন। অর্থনীতিবিদদের একাংশের প্রশ্ন, তবে কি ধরে নিতে হবে যে এই সব প্রকল্প কার্যকর হয়নি? তাই তৈরি হয়নি কাজের সুযোগও?
আমজনতার চাহিদাও যে নতুন চাকরি, রোজগারের সুযোগ, তা-ও টের পেয়েছেন অরুণ জেটলি। ফেসবুক-টুইটারে ভোটাভুটির মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রক জানতে চেয়েছিল, বাজেটে কোন দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আমজনতার রায়, যেখানে বেশি চাকরি হবে সেখানেই।
মোদী বার বার জানিয়েছেন, তাঁর কাছে বড় বড় শিল্পপতিদের থেকেও ছোট বা মাঝারি উদ্যোগপতিদের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ এঁরা অনেক বেশি মানুষকে রোজগারের সুযোগ করে দেন। কিন্তু নোট বাতিলের ফলে ছোট-মাঝারি শিল্পই ধাক্কা খেয়েছে সবচেয়ে বেশি। বছরের শেষ রাতের বক্তৃতায় মোদী ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ গ্যারান্টি এবং সুদের হারে ভর্তুকি ঘোষণা করেছিলেন। বাজেটে আরও উপহার আসতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রকের ইঙ্গিত।