চিনকে প্রশমিত করতে আপ্রাণ কূটনৈতিক প্রয়াস চালাচ্ছে নয়াদিল্লি। কিন্তু চিনা-বান্ধবদের সামলাতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে সাউথ ব্লকের। এমনই এক চিনা-বন্ধু মলদ্বীপ এ বার সরাসরিই ভারতীয় সাহায্যে তাদের অনীহার কথা ঘোষণা করে দিল। আজ ভারতকে সেনা-কপ্টার ও বাহিনী প্রত্যাহারের আর্জি জানাল সে দেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিনের সরকার। দীর্ঘদিন মলদ্বীপকে সেনা ও নাগরিক সাহায্য দিয়ে এসেছে ভারত। নয়াদিল্লির দেওয়া দু’টি কপ্টার একটা সময় পর্যন্ত যথেষ্ট চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছে মলদ্বীপকে। কিন্তু এখন সে দু’টি পরিত্যক্ত। জুনে চুক্তিও শেষ হয়ে গিয়েছে। মলদ্বীপের বক্তব্য, ‘আর সাহায্যের প্রয়োজন নেই।’
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, এর পিছনে বেজিংয়ের অদৃশ্য রিমোট কাজ করেছে। বেশ কিছু দিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে টালবাহানা চলছিল। এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বারবার জানিয়েছেন, মলদ্বীপের সঙ্গে হেলিকপ্টার চুক্তিটি নিয়ে কূটনৈতিক দৌত্য চলছে। কিন্তু আজ স্পষ্ট হয়ে গেল সেই দৌত্যে চিঁড়ে ভেজেনি। ভারতের থেকে অনেক পরে মলদ্বীপের সঙ্গে পাকাপোক্ত সম্পর্ক তৈরির কাজ শুরু করেছিল বেজিং। ২০১১ সালে সে দেশে দূতাবাস খোলে চিন। কিন্তু এর মধ্যেই দ্বীপরাষ্ট্রটিকে কার্যত হাতের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছে শি চিনফিংয়ের সরকার। সহজ সুদে ঋণ দিয়ে সেখানে একের পর এক রাস্তা ও বন্দর তৈরি করিয়েছে চিন। মালের বিমানবন্দর ঢেলে সাজিয়েছে। অন্য দিকে, মলদ্বীপও চিনের হাতে কিছু দ্বীপ অঞ্চল তুলে দিয়েছে উন্নয়নের জন্য। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, উন্নয়নের আড়ালে সেখানে নিজেদের কৌশলগত ঘাঁটি তৈরি করছে চিন যা ভারতের জন্য ত্রাসের কারণ।
তবে শুধু চিনের উস্কানিই নয়। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এর পিছনে ভারত-মলদ্বীপ বর্তমান তিক্ততাও কাজ করছে। চলতি বছরের গোড়ায় ইয়ামিন সরকারের বিরোধী-দমন নীতি নিয়ে নয়াদিল্লির সুর চড়ানোটাও ভাল চোখে দেখেনি মলদ্বীপের শাসক দল। তাই এই বার্তা। নয়াদিল্লি যথেষ্ট কড়া ভাবে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে মলদ্বীপে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেল। সে পরামর্শ মানেননি প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন। বরং তাঁর সরকার ভারতের বিরুদ্ধে কড়া বয়ান দিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে নয়াদিল্লি আয়োজিত ১৬ দেশের নৌ-মহড়া থেকেও সরে দাঁড়িয়েছিল মলদ্বীপ।