চেন্নাইয়ে প্রতিবাদ। বৃহস্পতিবার। ছবি : পিটিআই।
কাবেরী নিয়ে তামিলনাড়ুর ক্ষোভের আঁচ ভালই টের পেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু ভোটমুখী কর্নাটকের কথা মাথায় রেখে একটি কথাও বলেননি তিনি। আর তাতে তামিলনাড়ুর পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার মোদীর তামিলনাড়ু সফরের প্রতিবাদে গায়ে আগুন দিয়েছেন ধর্মলিঙ্গম নামে এক ব্যক্তি। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ দিন একজোট হয়ে পথে নামে রাজ্যের প্রায় সবক’টি দল। চেন্নাইয়ে মোদীর যাত্রাপথে বহু জায়গা মোড়া ছিল কালো পতাকায়। যেখানে কালো পতাকা দেখানোর সুযোগ ছিল না, সেখানে ওড়ানো হয়েছে কালো বেলুন! ডিএমকে, এমডিএমকে সমর্থকেরা গায়ে কালো জামা চড়িয়ে পথে নেমেছিলেন! উঠেছে ‘গো ব্যাক মোদী’ স্লোগান। এমনকী সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যাশট্যাগ দিয়ে ‘গো ব্যাক মোদী’ প্রচার চালিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
কাবেরী নিয়ে তামিল দলগুলির নজিরবিহীন ঐক্যে এমনিতেই চাপে বিজেপি। শাসক এডিএমকে-কে কাছে টানতে তারা সক্রিয় হলেও রাজ্য রাজনীতির আবেগের কথা মাথায় রেখে সুর বদলেছে তারাও। তার মধ্যেই মোদী তথা বিজেপির চাপ বাড়িয়ে এ দিন অভিনেতা-রাজনীতিক কমল হাসন বলেন, কাবেরী নিয়ে তামিলনাড়ুকে সুবিচার দিন প্রধানমন্ত্রী।
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, কাবেরী নিয়ে তামিলনাড়ুর সঙ্গে কর্নাটকের বিরোধ নতুন নয়। কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি ঘোরালো হয়েছে অন্য কারণে। একে তো দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকার পরে ফেব্রুয়ারিতেই সুপ্রিম কোর্ট কাবেরী নিয়ে বোর্ড গড়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রকে। সেই নির্দেশ মানার অর্থ ভোটমুখী কর্নাটকে বিজেপির আত্মহত্যা! অন্য দিকে, কাবেরীর জলের উপরে কর্নাটক এবং তামিলনাড়ুর বিস্তৃত এলাকার কৃষি নির্ভরশীল। কিন্তু লাগাতার কম বৃষ্টির জন্য কাবেরীর বাঁধগুলিতে জলস্তর ভয়াবহ ভাবে নেমে গিয়েছে। ফলে প্রবল সঙ্কটে দুই রাজ্যের কৃষকই। একাধিক আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। এমনিতেই কৃষক সমস্যা নিয়ে জেরবার মোদী। তাতে নয়া মাত্রা যোগ করেছে কাবেরী জলবিবাদ।
কর্নাটক ভোটের মুখে কাবেরী নিয়ে এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতি সব দিক দিয়েই সমস্যা বাড়াচ্ছে বিজেপির। সামনেই কর্নাটকে ভোট। সেখানে কংগ্রেসকে হারিয়ে ক্ষমতা পুনরুদ্ধার মোদী-অমিত শাহের কাছে সম্মানের লড়াই। এই অবস্থায় কাবেরী প্রশ্নে তামিলনাড়ুকে শান্ত করতে গেলে কর্নাটকে বিজেপি মহাসঙ্কটে পড়বে। অন্য দিকে, কাবেরী বোর্ড গঠন নিয়ে মোদী সরকার যত টালবাহানা করবে, তামিল আবেগ তত বিজেপির বিপক্ষে যাবে। তবু কর্নাটকের কথা মাথায় রেখে এখনও পর্যন্ত নীরব থাকার পথই নিয়েছেন মোদী।