বাড়ি ফিরছেন কাশ্মীরি পড়ুয়ারা

দরজা বন্ধ করে, ঘরে লুকিয়ে বসে থাকার থেকে শ্রীনগর বা কাশ্মীরের গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরে যাওয়াই শ্রেয় মনে করেছেন তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৪
Share:

—ফাইল চিত্র।

নিরাপদ আশ্রয়। মাথা গোঁজার ঠাঁই।

Advertisement

এই আহ্বানেও ঝুঁকি নেয়নি দেহরাদূন, অম্বালা বা গুরুগ্রামে পড়তে আসা কাশ্মীরের ছাত্রছাত্রীরা। দরজা বন্ধ করে, ঘরে লুকিয়ে বসে থাকার থেকে শ্রীনগর বা কাশ্মীরের গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরে যাওয়াই শ্রেয় মনে করেছেন তারা।

পুলওয়ামায় হামলার পর থেকেই নানা রাজ্যে কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীরা হেনস্থা ও হুমকির মুখে পড়ছেন। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক এজাজ আহমেদ রাঠের গত কয়েক দিন ধরেই দিল্লি ও আশেপাশের এলাকায় আতঙ্কিত ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। এজাজের হিসেবে, গত দু’দিনে উত্তরাখণ্ড ও পঞ্জাব থেকে অন্তত ২০০ থেকে ৩০০ জন ছাত্রছাত্রী কাশ্মীর উপত্যকায় ফিরে গিয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা উপত্যকায় ফিরতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই বেড়েছে বিমান ভাড়া। সোমবার দিল্লি-শ্রীনগর বিমানের ভাড়া ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। মঙ্গলবারের টিকিট কাটতে গিয়েও ছাত্রছাত্রীরা দেখেছেন, ভাড়া ১৫ থেকে ২০ হাজারের মধ্যে। পড়ুয়াদের বক্তব্য, তাঁরা ট্রেনে বা বাসে চেপে জম্মু যেতেও নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।

Advertisement

তবে পুণের কাশ্মীরি পড়ুয়ারা সোমবার রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রের এই শহরে তাঁরা কোনও অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। সেখানকার মানুষ খুবই সংবেদনশীল। তাঁরা আমাদের পাশে রয়েছেন। পুলওয়ামার জঙ্গিহানার নিন্দাও করেন এই ছাত্রছাত্রীরা।

ছাত্রছাত্রীদের থেকে সাহায্য চেয়ে ফোন এলে কাশ্মীরের পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার কাজ করছিলেন এজাজ। গত দু’দিনে নয়ডা, দিল্লি, চণ্ডীগড়ের অনেকেই ফেসবুক-টুইটারে জানিয়েছিলেন, কাশ্মীরের ছেলেমেয়েরা তাঁদের বাড়িতে নিরাপদে থাকতে পারেন। তা সত্ত্বেও কেন কাশ্মীরের ছেলেমেয়েরা থাকতে চাইছে না?

এজাজের মতোই জেএনইউ-য়ে কাশ্মীরের আর এক ছাত্র নেত্রী শেহলা রশিদের অভিযোগ, বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের হুঙ্কারই এর জন্য দায়ী। শেহলার অভিযোগ— বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের হুঙ্কারই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। উত্তরাখণ্ডে বজরং দলের আহ্বায়ক বিকাশ বর্মা নিজেই কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলায় দায় নিয়েছে। প্রকাশ্যে হুমকিও দিয়েছে।

সোমবার দিল্লির যন্তর মন্তরেই পুলওয়ামার ঘটনার পরে শান্তির কামনায় মহাযজ্ঞ করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল। কিন্তু তার সঙ্গে দেশে ইসলামিক জেহাদ নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলেছে তারা। দিল্লির সংসদ মার্গেও সোমবার জাতীয় পতাকা নিয়ে গাড়ি-বাইক-অটোর মিছিল হয়েছে। ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’ স্লোগানও উঠেছে।

আজ কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের যে ভাবে নিশানা করা হচ্ছে, তাতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরই হাত শক্ত হবে। সিআরপি নিজে কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের জন্য হেল্পলাইন খুলেছিল। সেখানেও ফোন আসছে। জম্মু-কাশ্মীর ছাত্র সংগঠনের হিসেব বলছে, পুলওয়ামায় ঘটনার পর তাদের কাছে অন্তত ৮০০ জন ছাত্রছাত্রী বা অভিভাবকের ফোন এসেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লা যৌথ বিবৃতিতে সব রাজ্যে কাশ্মীরিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন