BJP

মনীষী-তালিকা নিয়ে প্রশ্ন বহু

দলের দাবি, ‘বামফ্রন্ট বা পরে তৃণমূল বাংলার এই মনীষীদের প্রাপ্য মর্যাদা দেয়নি, বরং বিস্মৃতির অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।’

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:০২
Share:

ঋষি অরবিন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও চিত্তরঞ্জন দাশ। ছবি সংগৃহীত।

ঋষি অরবিন্দের দর্শন অনুসরণ করতে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। উনবিংশ শতকের বাঙালি কবি মনোমোহন বসুর লাইন উদ্ধৃত করে আত্মনির্ভর হওয়ার কথা বলেছেন। বিজেপি শীর্ষ সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের আগে প্রায় দেড়শো জন প্রখ্যাত বাঙালির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যাঁদের ‘পোক্ত জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তি অথবা ইতিহাস’ রয়েছে। দলের দাবি, ‘বামফ্রন্ট বা পরে তৃণমূল বাংলার এই মনীষীদের প্রাপ্য মর্যাদা দেয়নি, বরং বিস্মৃতির অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।’ এঁদের নিয়ে জেলায় জেলায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির।

Advertisement

যাঁরা এই তালিকায় রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, চিত্তরঞ্জন দাশ, বাঘা যতীন, ভারতের অগ্রগণ্য নারী চিকিৎসক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়, কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রমুখ। রয়েছেন হিন্দু মহাসভার নেতা আশুতোষ লাহিড়ী। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, ‘লক্ষ্য হল সোনার বাংলাকে ফিরিয়ে আনা। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটানো। আর সে ক্ষেত্রে এই সব দার্শনিক, সাহিত্যিক, নেতাদের স্মরণ করা প্রয়োজন যাঁরা ভারতের মাটিতে প্রোথিত থেকেও বিশ্বকে নজরে রেখেছেন।’ বিজেপির এক নেতার কথায়, “বাম এবং তৃণমূল ইচ্ছাকৃত ভাবেই এঁদের দূরে ঠেলে রেখেছে। আমরা প্রত্যেকটি জেলা চিহ্নিত করছি, যেখান থেকে যিনি উঠে এসেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থেকে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়—প্রত্যেককে নিয়ে অনুষ্ঠান করা হবে বিভিন্ন জেলায়।’’

ইতিহাসের অধ্যাপক এবং তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ সুগত বসুর বক্তব্য, “প্রধানমন্ত্রী ঋষি অরবিন্দের কথা বলেছেন ঠিকই কিন্তু তাঁর অরবিন্দের লেখা আরও পড়া উচিত বলে মনে করি। যদি উনি তা পড়তেন এবং অধীত জ্ঞান অনুসরণ করতেন তা হলে রাজ্যগুলির ঘাড়ে কেন্দ্রের অপশাসন চাপাতেন না।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: শহরে কৃষক সমাবেশ ১৬ই, জারি প্রতিবাদ

সুগতবাবুর ব্যাখ্যা, “১৯১৪ সালে আর্য পত্রিকায় অরবিন্দ ‘স্পিরিট অ্যান্ড ফর্ম অব ইন্ডিয়ান পলিটি’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ লেখেন। সেখানে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় লিখেছিলেন, ভারতের ঐক্য তৈরি হতে পারে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সঠিক প্রয়োগের উপর। কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা ভারতে চলতে পারে না।’’ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সঙ্গে বিজেপি তথা আরএসএএসের আদর্শগত ফারাক কয়েক যোজন বলেই মনে করেন তিনি। তাঁর কথায় “দেশবন্ধুর মৃত্যুর সময়ে নেতাজি ছিলেন মান্দালয়ের কারাগারে। পরের বছর অর্থাৎ ১৯২৬ সালে তিনি একটি দীর্ঘ লেখা লেখেন। সেখানে নেতাজি বলেছিলেন, চিত্তরঞ্জন নিজে হিন্দু ছিলেন, কিন্তু তাঁর মতো মুসলমানদের বন্ধু আর কেউই ছিলেন না।’’ এমন এক জন মানুষের সঙ্গে আরএসএস কী ভাবে সংযুক্ত হতে পারে এই প্রশ্ন তুলেছেন সুগতবাবু। তাঁর কথায়, “শ্যামাপ্রসাদের সঙ্কীর্ণ রাজনীতির ধারা ক্ষীণ হয়ে আসছে। তাই এই নামগুলির প্রয়োজন হচ্ছে।’’

বিজেপি নেতা তথাগত রায় অবশ্য বলছেন, কোনও রাজনৈতিক কারণে এই মনীষীদের সম্মান দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে না। তাঁর কথায়, “এই সব স্মরণীয় ব্যক্তিদের এত দিন বিস্মৃতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এই জাতীয়তাবাদী ব্যক্তিত্বদের অন্যরা প্রাপ্য মর্যাদা না দিলেও বিজেপি দেবে বলে মনস্থ করেছে।’’ তথাগতবাবু বলেন, “সেই ব্যক্তি সেকুলার ছিলেন কি না, সেই প্রশ্নটাই অবান্তর। সেকুলার শব্দটি তো ঢুকেছে স্বাধীনতার পর পঞ্চাশের দশকের শুরুতে। মুসলিম লিগের কাছে স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে আসা কিছু নেতার স্বরূপ প্রকাশিত হওয়ার পর। আরএএস যখন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে একটি সম্প্রদায় দেশভাগের ফলে গাছেরটাও খাচ্ছে তলারটাও কুড়াচ্ছে। তখন টনক নড়ার ফলে এই শব্দটির আমদানি করা হয়েছে। আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি তাঁদেরই, যাঁরা দেশের জন্য অবদান রেখেছেন। অবশ্যই মুজফফর আহমেদ বা জ্যোতি বসুকে কোনও সম্মান আমরা দেব না। ওঁরা দেশের ক্ষতি করেছেন।’’

আরও পড়ুন: করোনা টিকার উদ্বোধনেও রাজনীতির নারদ-নারদ

ইতিহাসবিদ তনিকা সরকার মনে করেন, যে ব্যক্তিদের তালিকায় রাখা হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশকে চাইলেও রাজনৈতিক ভাবে ‘আত্মসাৎ’ করতে পারবে না বিজেপি তথা আরএসএস। তাঁর বক্তব্য, “প্রথমত এই অবহেলা করার তত্ত্বটাই তো ভুল। যাঁরা রাজনীতি, সমাজনীতি, সাহিত্য, নারীবাদ নিয়ে কাজ করেন, তাঁরা এই ব্যক্তিদের শ্রদ্ধার জায়গায় রেখেছেন। কোনও সরকার বা রাজনৈতিক দলের তো কাজ নয়, বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে উৎসব করা, বা মূর্তির রাজনীতি করা।’’ তিনি বলেন, “বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যে আনন্দমঠ ছাড়া ঘোরতর মুসলিম বিদ্বেষ কোথাও নেই। বরং তিনি হিন্দু ধর্মের সমালোচনাও করেছেন ক্ষেত্র বিশেষে। কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন ব্রাহ্ম। তাঁর এবং তাঁর স্বামীর অনেক সমাজসংস্কারমূলক উদারপন্থী কাজ রয়েছে। এঁদের রাজনৈতিক ভাবে নিজের করে নেওয়া সম্ভব নয় আরএসএসের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন