Raghuram Rajan

বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে সরব রাজন

২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত অর্থনীতি হয়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে কোন দিকে, সেই প্রশ্নের উত্তরে রাজন বললেন শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের কথা।

Advertisement

অমিতাভ গুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৫১
Share:

আলোচনাসভায় রঘুরাম রাজন। —নিজস্ব চিত্র।

কলকাতায় তেমন ভাল কোনও বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হলে তিনি সেখানে পড়াতে আসতেই পারেন, জানালেন রঘুরাম রাজন। পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ রোহিত লাম্বার সঙ্গে তাঁর যৌথ ভাবে লেখা বই ‘ব্রেকিং দ্য মোল্ড: রিইম্যাজিনিং ইন্ডিয়া’জ় ইকনমিক ফিউচার’ নিয়ে কথা বলতে শুক্রবার কলকাতা লিটারারি মিট-এর আলোচনাসভায় এসেছিলেন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রাজন।

Advertisement

২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত অর্থনীতি হয়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে কোন দিকে, সেই প্রশ্নের উত্তরে রাজন বললেন শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের কথা। মনে করিয়ে দিলেন, দেশের প্রায় সব শিশুকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার কাজে ভারত যতখানি সফল, তাদের স্কুলে ধরে রাখার ক্ষেত্রে ততখানি নয়। উচ্চশিক্ষায়, প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে ভারতের পক্ষে বিশ্বশক্তি হয়ে ওঠা সম্ভব, যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি মন দেয় নতুন উদ্ভাবনের দিকে, শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে তার যোগ নিবিড় হয়।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের লনে আয়োজিত আলোচনাসভায় তখন তিলধারণের জায়গা নেই, এমনই রকস্টার-সুলভ জনপ্রিয়তা রাজনের। উচ্চশিক্ষায় কলকাতা ও বঙ্গের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে তিনি বললেন, এই শহরকে কেন্দ্র করে যদি একাধিক বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা যায়, সেটা রাজ্যের আর্থিক ছবিও বদলে দিতে পারে। টেনে আনলেন আমেরিকার বস্টন শহরের কথা। এক কালের নিতান্ত ছোট ও অর্থনৈতিক ভাবে গুরুত্বহীন এই শহরটিতে আছে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), হার্ভার্ড-সহ প্রথম সারির একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে কাজ হয় একেবারে আধুনিকতম প্রযুক্তির, আর তার টানেই ক্রমে সেখানে ভিড় জমাল আন্তর্জাতিক পুঁজি। পাল্টে গেল বস্টনের চেহারাও। কলকাতার ক্ষেত্রেও তা না হওয়ার কোনও কারণ নেই।

Advertisement

কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যে পরিমাণ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলে, তাতে কি দুনিয়ার সেরা পণ্ডিতদের আকর্ষণ করতে পারবে কলকাতা? রাজনের উত্তর, না। ইদানীং যে ভঙ্গিতে রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন, তা শিক্ষার পরিবেশের পক্ষে নেতিবাচক বলেই মনে করেন রাজন। বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এমন হওয়া দরকার, যেখানে ছাত্র-শিক্ষক-গবেষকরা খোলা মনে কাজ করতে পারবেন, মতামত আদানপ্রদান করতে পারবেন। তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারি পুঁজির পক্ষে, কিন্তু একই সঙ্গে জানালেন, অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রতিক কালে যে সব ঘটনা ঘটেছে, তা কোনও ভাবেই সমর্থন করা যায় না। বললেন, সত্যিই যদি কলকাতায় কোনও উদারবাদী বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার চেষ্টা হয়, তিনি সেখানে পড়াতে আসতেই পারেন।

ভারতের বিশ্বশক্তি হয়ে ওঠার পথ হিসাবে তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃত্রিম মেধার উপরে জোর দিলেন রাজন। বললেন, নির্মাণশিল্পে ভারতের বিশ্বশক্তি হয়ে ওঠা কঠিন, কারণ অন্য অনেক দেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে অনেক বেশি। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতীয়রা গোটা দুনিয়ায় প্রথম সারিতে কাজ করছেন। তাঁদের হাত ধরেই এই ক্ষেত্রে ভারতীয় শিল্পের বিশ্বশক্তি হয়ে ওঠা সম্ভব। এবং, কৃত্রিম মেধাকে ব্যবহার করা যায় উন্নয়নের অন্যান্য ক্ষেত্রেও। প্রাথমিক স্কুলে লেখাপড়ায় সাহায্য করার জন্যও ব্যবহার করা যায় কোনও বিশেষ ভাবে তৈরি বট।

মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের আর্থিক উন্নতি হলেই যে দেশের উন্নয়ন হয় না, তার জন্য সবাইকে নিয়ে চলতে হবে, মনে করিয়ে দিলেন রাজন। সেই চলার পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি অস্ত্র হল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। তাঁর মতে, ‘সতেজ শরীরে সজাগ মন’, স্বাধীনতার একশো বছর পূর্তিতে উন্নত দেশ হয়ে ওঠার জন্য এটাই ভারতের মন্ত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন