নীরব মোদী
ললিত মোদী দেশ ছেড়েছিলেন। নীরব মোদীও উধাও। বিপাকে ফেলে গিয়েছেন যাঁকে, তিনি নরেন্দ্র মোদী।
দাভোসে ওয়র্ল্ড ইকনমিক ফোরাম-এ গত ২৩ জানুয়ারি নরেন্দ্র মোদী শিল্পমহলের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন। সে ছবিতে প্রধানমন্ত্রীর পিছনের সারিতে হাসিমুখে নীরব। যা দেখে রাহুল গাঁধীর কটাক্ষ, ‘‘ভারত লুঠের নীরব গাইড। প্রধানমন্ত্রীকে আলিঙ্গন করো। তাঁর সঙ্গে দাভোসে হাজির হও।’’
প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার প্রতারণায় অভিযুক্ত নীরব। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তোলার ছ’দিন পরেই তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআইয়ে যান পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তার পরের দিন নীরব, তাঁর স্ত্রী অমি, ভাই নীশল ও মামা মেহুল চকসি-র বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। ৩১ জানুয়ারি লুক-আউট সার্কুলার। কিন্তু তার আগেই পাখি ফুড়ুৎ।
আরও পড়ুন: নোটবন্দিকে কাজে লাগিয়ে কালো টাকা সাদা করেছেন নীরব মোদী!
সূত্রের খবর, আটঘাট বেঁধে ১ জানুয়ারিই মুম্বই থেকে দেশ ছাড়েন নীরব। পাঁচ দিন পরে স্ত্রী অমি। অমি মার্কিন নাগরিক। গুজব, স্যুটকেস ভরে নিজের ডিজাইনার ড্রেসও নিয়ে যান তিনি। দেশ ছাড়েন মেহুল আর নীশলও। নীরবের মতো এই দু’জনও হিরে ব্যবসায়ী। নীশল বেলজিয়ামের নাগরিক। অর্থাৎ দাভোসে যখন মোদীর সঙ্গে দেখা হয় নীরবের, তিনি এবং তাঁর পরিবার তখনই ‘দেশছাড়া’। এর আগে আইপিএল-কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ললিতকে দেশ ছাড়তে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ না করে দেশ ছাড়েন বিজয় মাল্যও। অরবিন্দ কেজরীবালের বিস্ময়, ‘‘বিজেপির প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া এ সব সম্ভব?’’ কংগ্রেসের প্রশ্ন, ‘‘ছোট মোদীকে কে সাহায্য করল? রাঘববোয়ালটি কে?’’
নরেন্দ্র মোদী এখনও নীরব। আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ ক্ষুব্ধ। ‘‘ছোট মোদী! এ আবার কেমন ভাষা?’’ তাঁর পাল্টা হুঁশিয়ারি, ‘‘রাহুলও নীরবের অলঙ্কার প্রদর্শনীতে গিয়েছিলেন। মেহুলের সঙ্গে কংগ্রেস শীর্ষ নেতাদের ছবি রয়েছে।’’
কংগ্রেসের অভিযোগ, নীরব শুধু দাভোসে প্রতিনিধিদলে ছিলেন, তা-ই নয়। তিনি এবং নীশল সেখানে মোদীর সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। রবিশঙ্করের দাবি, ‘‘নীরব মোটেই প্রতিনিধিদলে ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের বৈঠকও হয়নি।’’
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবিতে নীরব তবে ঢুকলেন কী করে? সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, শিল্পপতিদের দলে কে থাকবেন, তা একটি বণিকসভা ঠিক করে। তখন নীরবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেনি। বেঙ্গালুরুর ব্যবসায়ী হরিপ্রসাদের অবশ্য দাবি, তিনি ২০১৬-তেই মেহুলের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অভিযোগ জানান। কংগ্রেসের প্রশ্ন, ‘‘পিএমও জানার পরেও মাছি গলে কী করে?’’ অনেকেরই কটাক্ষ, কালো ধন ফেরা দূরে থাক, সাদা ধনও বেরিয়ে যাচ্ছে! আইনমন্ত্রীর কেবল আশ্বাস, ‘‘নীরবের পাসপোর্ট প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কাউকে ছাড়া হবে না।’’