‘প্রাইম টাইম মিনিস্টার’, মোদীকে কটাক্ষ রাহুলের 

পুলওয়ামা প্রসঙ্গ তুলে এ দিন তিরুপতির জনসভায় ‘প্রচারলোভী’ মোদীকে বিঁধেছেন রাহুল। তাঁর কথায়, ‘‘এই আচরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর লজ্জা হওয়া উচিত। তিনি নিজেকে জাতীয়তাবাদী বলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৩
Share:

দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকার ‘সোল শান্তি পুরস্কার’ নিয়ে ফিরলেন নরেন্দ্র মোদী। জানালেন, ওই টাকা খরচ হবে ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পে। পুরস্কার মঞ্চ থেকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বার্তা দিয়ে বললেন, ‘‘এই পুরস্কার দেশবাসীর।’’ দিল্লি বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েই হাত নাড়লেন অনুগামীদের উদ্দেশে। পিটিআই

‘প্রাইম টাইম মিনিস্টার’ আর তাঁর ‘ফটো শুট সরকার’! পুলওয়ামায় যখন জওয়ানের রক্ত ঝরছে, তখন হাস্যমুখে ক্যামেরার সামনে প্রধানমন্ত্রী। উত্তরাখণ্ডের জঙ্গলে, নৌকায় চড়ে ব্যস্ত শুটিংয়ে। রাহুল গাঁধীর থেকে তাই নতুন দু’টি তকমা আজ ‘অর্জন’ করে নিলেন নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

তাতে অবশ্য দমেননি মোদী। ‘সোল শান্তি পুরস্কার’ নিয়ে শুক্রবার রাতে দেশে ফেরেন তিনি। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। জানা গিয়েছে, দিল্লির বিজেপি কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা যেন মোদীর ছবি-সহ প্ল্যাকার্ড হাতে বিমানবন্দরের বাইরে জড়ো হন। গাড়ির পাদানিতে দাঁড়িয়ে যথারীতি তাঁদের দিকে হাত নাড়েন মোদী। কার্যত একটা ছোটখাটো রোড-শোই সেরে ফেলেন। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী কতটা ‘প্রচারলোভী’ এই ঘটনা তার আরও একটা প্রমাণ। পুলওয়ামার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলি যখন রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রায় বন্ধ রেখেছে, তখন মোদী নিজেদের কর্মসূচিতে অনড়। প্রচারের ফায়দা লোটার বিন্দুমাত্র সুযোগ হাতছাড়া করতে তিনি নারাজ। একই পথে হাঁটছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।

পুলওয়ামা প্রসঙ্গ তুলে এ দিন তিরুপতির জনসভায় ‘প্রচারলোভী’ মোদীকে বিঁধেছেন রাহুল। তাঁর কথায়, ‘‘এই আচরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর লজ্জা হওয়া উচিত। তিনি নিজেকে জাতীয়তাবাদী বলেন। কিন্তু পুলওয়ামায় যখন ৪০ জওয়ানের রক্ত ঝরছে, সে সময় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে তিনি নিজের উপর ছবি বানাচ্ছেন। বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নেই জওয়ানদের যন্ত্রণার। মৃত্যুমুখী জওয়ানদের সাহায্যের থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ ক্যামেরার সামনে হাসিমুখে দাঁড়ানো, নৌকাবিহার করা। এখনও নিহত জওয়ানদের পরিবারের কাছেও যাননি তিনি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ১০ হাজার কিলোমিটার পথ আজাদি মিছিল পৌঁছল দিল্লিতে

মোদীর শুটিংয়ের ছবি ফাঁস করে গত কাল থেকেই খড়গহস্ত কংগ্রেস। আক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে, কংগ্রেসের প্রকাশ করা সব ছবিই পুলওয়ামার ঘটনার আগের। হামলার খবর পেতে প্রধানমন্ত্রীর ২৫ মিনিট দেরি হয়েছে। তার পরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে ফোনে দফায় দফায় কথা বলেন তিনি। আবহাওয়া এমনিতেই খারাপ ছিল। তার উপর পুলওয়ামার ঘটনা হওয়ায় রুদ্রপুর যাওয়া বাতিল করে মোবাইল ফোনে নমো-নমো করে সভা করেন। রাম নগর গেস্ট হাউসে বসে ফের সকলকে ফোন করেন। দেরিতে খবর দেওয়ার জন্য ডোভালের উপরে রেগেও যান। প্রধানমন্ত্রী কিছু খাননি এই গোটা সময়। পৌনে সাতটা নাগাদ বরেলী পর্যন্ত সড়ক পথে এসে দিল্লি ফেরেন।

আরও পড়ুন: ভোট বর্ষণের আশাতেই কি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এত গর্জন

কিন্তু কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি প্রশ্ন তুলেছেন, একে তো সচিবালয়ের এটি আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নয়। দুই, প্রধানমন্ত্রী যদি পুলওয়ামার ঘটনা জানতেন, তা হলে রুদ্রপুরের সভায় তার উল্লেখ করলেন না কেন? পুলওয়ামার ঘটনা ঘটেছে দুপুর ৩টে ১০ মিনিটে। আর দূরদর্শন প্রধানমন্ত্রীর মোবাইল ফোনে বক্তৃতা সরাসরি সম্প্রচার করেছে বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে। সেই বক্তৃতায় পুলওয়ামার উল্লেখ নেই। জওয়ানদের স্মৃতিতে নীরবতা পালনের কথাও নেই।

মোদীর শুটিং নিয়ে নতুন ছবি

তৃতীয় সব থেকে বড় যে প্রশ্নটি কংগ্রেস তোলে তা হল, হামলার দু’ঘণ্টা পরেও যদি সে কথা প্রধানমন্ত্রী না জানেন, তা হলে সেটা তো জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকে আশঙ্কার বিষয়! পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর দেশ। তাদের হামলার দু’ঘণ্টা পরেও প্রধানমন্ত্রীর মুখে একটি শব্দও নেই! তা হলে কি তাঁকে জানানো যায়নি? তিনি মোবাইলে বক্তৃতা দিতে পারেন, কিন্তু তাঁকে মোবাইলে হামলার খবর জানানো যায় না? একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই এর জবাব দিতে পারেন। যে কারণে রাহুল টুইট করেছেন, ‘‘৪০ জওয়ানের মৃত্যুর পরেও ‘প্রাইম টাইম মিনিস্টার’ ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। দেশের হৃদয় ও নিহত জওয়ানদের ঘরে দুঃখ ছড়িয়ে পড়েছে, আর তিনি হাসিমুখে ফটোশুট করছেন। #ফটোশুটসরকার।’’

রাজনাথ অবশ্য আজ বলেন, ‘‘আমাদের প্রধানমন্ত্রীর থেকে সহানুভূতিশীল আর কে হতে পারেন? কংগ্রেস রাজনীতি করছে।’’ কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে কি দেরিতে খবর দেওয়া হয়েছে? রাজনাথের জবাব, ‘‘যখনই খবর দেওয়া হয়েছে, তিনি ফোনে কথাবার্তা শুরু করেছেন। আমি মনে করি না, তাঁকে দেরিতে খবর দেওয়া হয়েছে।’’ ফলে রাজনাথ যা বলছেন আর প্রধানমন্ত্রী সচিবালয় যা বলছে, তার মধ্যেও অসঙ্গতি। তিরুপতিতে রাহুল বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সব বিবৃতি মিথ্যা।’’ বিজেপির প্রাক্তন মন্ত্রী যশবন্ত সিন্‌হারও দাবি, ‘‘১৪ তারিখ বিকেলে কী করছিলেন, মোদীই স্পষ্ট করুন।’’

বিজেপি এর পরে রাহুলকেই পাল্টা আক্রমণ করে। পুলওয়ামার ঘটনার পরেও রাহুল গুজরাতে আদিবাসীদের সঙ্গে নাচছিলেন, সেই ছবিও সামনে আনে বিজেপি। দল বলে, ‘‘ভুয়ো খবর ছড়ানো বন্ধ করুন রাহুল গাঁধী। আপনি হয়তো আক্রমণের খবর আগাম জানতেন, বাকিরা পরেই জেনেছে।’’ এ প্রসঙ্গে মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাহুল গাঁধী নন। দায়িত্ব মোদীরই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন