Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ১০ হাজার কিলোমিটার পথ আজাদি মিছিল পৌঁছল দিল্লিতে

‘মেরি বেটি মাঙ্গে আজাদি’—হাত মুঠো করে স্লোগান তোলেন ভাঁওরি দেবী। সামনে বসা কয়েক হাজার মহিলা গলা মেলান, ‘আজাদি, আজাদি’।

‘গরিমা অভিযানে’ ভাঁওরি দেবী। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

‘গরিমা অভিযানে’ ভাঁওরি দেবী। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৮
Share: Save:

‘মেরি বেটি মাঙ্গে আজাদি’—হাত মুঠো করে স্লোগান তোলেন ভাঁওরি দেবী। সামনে বসা কয়েক হাজার মহিলা গলা মেলান, ‘আজাদি, আজাদি’।

আপনার জন্যই তো আজ এই মহিলারাও মুখ খুলছেন! প্রশ্ন শুনে লজ্জা পান ৫৫ বছরের প্রৌঢ়া। এক গাল হেসে, মাথার ঘোমটা টেনে দেহাতি টানে বলেন, ‘‘মি টু!’’

আমেরিকা-ইউরোপ, মুম্বইয়ের বলিউড থেকে রাজধানী দিল্লি, #মিটু আন্দোলনের ভবিষ্যৎবাণীও তখনও কেউ করেননি। কেউ ভাবেননি, একের পর এক মহিলা ফেসবুক-টুইটারে প্রকাশ্যে নিজের যৌন হেনস্থা, ধর্ষণ নিয়ে মুখ খুলবেন। তার জেরে এম জে আকবরের মতো মন্ত্রীকে পর্যন্ত পদত্যাগ করতে হবে।

এ সবের তিন দশক আগে রাজস্থানের ভাতেরি গ্রাম থেকে যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে মুখ খোলার আন্দোলন শুরু করেছিলেন ভাঁওরি দেবী। ১৯৯২ সালে নিজের গ্রামে বাল্যবিবাহ আটকাতে চাওয়ায় গণধর্ষণ করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু দমে না গিয়ে পাল্টা লড়াই করেছিলেন। সেই লড়াইয়েরই ফসল, কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা রোখার ‘বিশাখা গাইডলাইনস’।

আরও পড়ুন: ‘প্রাইম টাইম মিনিস্টার’, মোদীকে কটাক্ষ রাহুলের

সেই ভাঁওরি দেবীকে সামনে রেখেই প্রায় ১৫ হাজার মহিলা এবং পুরুষের ‘গরিমা অভিযান’ মিছিল শুক্রবার এসে পৌঁছল দিল্লিতে। যৌন হেনস্থার শিকার মহিলাদের নিয়ে দু’মাস আগে মুম্বই থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল। ২৪টি রাজ্যের ২০০টি জেলা ছুঁয়ে ১০ হাজার কিলোমিটার হাঁটা এই মিছিলের উদ্দেশ্য— যৌন হেনস্থা নিয়ে মুখ বুজে থাকার প্রথা ভাঙা। ভাঁওরির কথায়, ‘‘এই মুখের কুলুপ ভাঙতে হবে। আমাদের কিসের লজ্জা? যারা ধর্ষণ করেছে, লজ্জা তো তাদের। আঙুল তো তাদের দিকে উঠবে।’’ মিছিলে মহিলাদের পাশে পথ হেঁটেছেন পুরুষরাও। যাঁরা নির্যাতিতাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন।

আরও পড়ুন: প্রতারণা ও দুর্নীতি মামলায় লুক আউট নোটিস চন্দার নামে

বেশ কিছু অ-সরকারি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এই অভিযানের আহ্বায়ক আসিফ শেখ বলেন, ‘‘আসলে পরিবার, সমাজ এই নীরবতা চাপিয়ে দেয়। এই কারণেই ৯৫ শতাংশ ধর্ষণের অভিযোগ কখনও জানানোই হয় না। আর তা জানানো হলেও দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনা খুবই কম। কিন্তু ধর্ষিতাকে লজ্জা পেতে হবে, এই ধারণাই ভুল।’’ ২০১৬-র সরকারি হিসেব বলছে, ওই বছরে প্রতিদিন ১০৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু মাত্র ১৮.৯ শতাংশ মামলায় অভিযুক্তরা দোষী সাব্যস্ত হন।

বিচার পাননি ভাঁওরি দেবীও। তাঁর মামলা শেষ হওয়ার আগে পাঁচ জন অভিযুক্তের মধ্যে চার জনের মৃত্যু হয়। আসিফের হতাশা, ‘‘ভাঁওরি দেবীর জন্যই আমরা মিছিল নিয়ে জয়পুর থেকে তিরিশ মাইল দূরের ভাতেরি গ্রামে গিয়েছিলাম। কিন্তু যে দিন মিছিল পৌঁছয়, সভা হয়, সে দিন গ্রামের চার হাজার মানুষের এক জনও সেখানে হাজির হননি।’’

ভাঁওরি অবশ্য বলেন, এ সবে দমে গেলে চলবে না। পায়ের তলায় দমিয়ে রাখার জন্য এ সব অত্যাচার হবেই। কিন্তু দাবিটা বুঝে নিতেই হবে। গলা ফাটিয়ে স্লোগান তোলেন, ‘হাম হামারা হক মাঙ্গতে’। রামলীলা ময়দানে রব ওঠে, ‘নেহি কিসিকা ভিখ মাঙ্গতে।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE