গুজরাত আর হিমাচলের ভোট যতই এগিয়ে আসছে, চরমে পৌঁছচ্ছে রাজনীতির তরজা।
হিমাচলের ভোটের ঠিক চার দিন আগে রবিবার পরস্পরকে নিশানা করলেন রাহুল গাঁধী ও নরেন্দ্র মোদী। রাহুল বললেন, মানুষের দুর্দশা মেটাতে না পারলে সিংহাসন খালি করে দিন প্রধানমন্ত্রী। আর কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় তুলে মোদীর দাবি, দুর্নীতিই তাদের একমাত্র পরিচয়।
এমনকী নোট বাতিল নিয়ে পদক্ষেপ না করার জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীকেও আক্রমণ করেছেন মোদী। বলেছেন, ‘‘যশবন্তরাও চহ্বাণ কমিটি নোট বাতিলের পরামর্শ দিয়েছিলেন ইন্দিরাকে। কিন্তু তিনি তা করেননি, দেশের উপরে গিয়ে দলের স্বার্থ দেখেছিলেন। ইন্দিরা সে কাজ করেননি বলেই আমাকে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’’
হিমাচলে ভোট ৯ নভেম্বর। শেষ পর্যায়ে প্রচারের হাওয়া এমনিতেই গরম। তার মধ্যেই রাহুল আজ মোদীকে আক্রমণ করতে বেছে নিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়াকে। টুইটারে কংগ্রেস সহ-সভাপতি রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। গত বুধবারই রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলি ভর্তুকি দেওয়া রান্নার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সিলিন্ডার প্রতি ৪ টাকা ৫০ পয়সা। আর ভর্তুকি বিহীন রান্নার গ্যাসের দাম সিলিন্ডার প্রতি ৯৩ টাকা করে বেড়েছে। পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ানোর সেই সিদ্ধান্তের কথা টেনে এনে মোদীকে নিশানা করে এ দিন হিন্দিতে টুইট করেন রাহুল— ‘‘মেহেঙ্গি গ্যাস, মেহেঙ্গি রেশন/ বন্ধ করো খোখলা ভাষণ/ দাম বাঁধো, কাম দো/ ওয়ারনা খালি করো সিংহাসন।’’ অর্থাৎ, গ্যাস, রেশনের দাম বেড়ে চলেছে, এই সময়ে ফাঁকা প্রতিশ্রুতিগুলি বন্ধ করুন। রাশ টানুন জিনিসের দামে। কাজ দিন, না হলে সিংহাসন ছাড়ুন। এতটা ঝাঁঝিয়ে মোদীকে ক্ষমতা ছাড়ার হুঁশিয়ারি এর আগে রাহুল সে ভাবে দেননি।
আরও পড়ুন: গুজরাত জয়ে তিন তুর্কিই তাস রাহুলের
আক্রমণের জবাব দিয়েছেন মোদীও। প্রধানমন্ত্রী আজ ছিলেন হিমাচলের উনা ও পালমপুরের মতো এলাকাগুলিতে। হিমাচলের বেশ কয়েকটি জায়গায় জনসভা করেন মোদী। শেষ পর্বে প্রচারের ঝাঁঝও ছিল কড়া। সনিয়া-রাহুল গাঁধীর দলকে নিশানা করে মোদী বলেন, ‘‘দুর্নীতিই হল কংগ্রেসের একমাত্র পরিচয়।’’ রাহুল তাঁকে আক্রমণ করেছেন রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে। আর মোদী টেনে আনেন ভর্তুকির প্রসঙ্গ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘নেতারা রাজকোষ লুঠ করতেন ভর্তুকির নামে। অতীতে ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে গিয়েই ৫৭ হাজার কোটি টাকা রাজকোষ থেকে চলে গিয়েছিল।’’
নোট বাতিলের বর্ষপূর্তি— ৮ নভেম্বরকে ‘কালা দিবস’ হিসেবে পালন করবে কংগ্রেস। এই প্রসঙ্গে আজ কংগ্রেস তো বটেই ইন্দিরা গাঁধীকেও টেনে এনেছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘নোট বাতিলে কিছু লোকের ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। তাঁরাই কালা দিবস করার কথা বলছে। তবে কুশপুতুল জ্বালিয়ে আমাকে ভয় দেখাতে পারবে না কংগ্রেস। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার লড়াই চলবেই।’’
মোদীর মন্তব্য, ‘‘যখন প্রয়োজন ছিল, ইন্দিরা গাঁধী তখন নোট বাতিলের জন্য পদক্ষেপ করেননি। উনি যদি সে সময়ে পদক্ষেপ করতেন, আমাকে এত বড় কাজ করতে হতো না।’’ প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘‘নোট বাতিলের পরে তিন লক্ষেরও বেশি সংস্থা বন্ধ। এই ধরনের ৫০০০টি সংস্থা নিয়ে তদন্ত করে প্রায় ৪০০০ কোটির দুর্নীতির খোঁজ মিলেছে। অন্যদের নিয়ে তদন্ত চলছে।’’
হিমাচলের ভোটাররা বিজেপির দিকেই সাড়া দিতে চলেছে, সেই দাবি করেন মোদী। বলেন, ভোটের ফল হবে এক তরফা। অবশ্য ভোট যুদ্ধে কংগ্রেসকে হারানোই শেষ কথা নয় বলেই প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। এর আগেও হিমাচলে গিয়ে কংগ্রেসকে ‘উইপোকা’-র সঙ্গে তুলনা করেছিলেন মোদী। বলেছিলেন, ‘‘উপরের দিক থেকে মাটি সাফ করলেই চলবে না। তা হলে উইপোকারা ফিরে আসবে। কংগ্রেস হল উইপোকার মতো। ওদের সরকারে আসা থেকে আটকালেই চলবে না। শিকড় থেকে উৎখাত করতে হবে।’’
রাহুল গাঁধী বার বার গুজরাত সফর করছেন। নোট বাতিল, জিএসটি নিয়ে তোপ দাগছেন। পাল্টা আক্রমণে প্রধানমন্ত্রীও। গুজরাত ও হিমাচলের ভোটাররা এ বার রাহুল কিংবা মোদী— কার কথা শোনেন, এখন সেটাই দেখার।