Advertisement
E-Paper

গুজরাত জয়ে তিন তরুণ তুর্কিই তাস রাহুলের

গুজরাতে বিজেপি-রাজের বিরুদ্ধে পাতিদার, ওবিসি ও দলিতদের আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিন তরুণ তুর্কি। এঁদের কাছে টানার বদলে বিজেপি নেতৃত্ব এক সময় উল্টে আক্রমণাত্মক হয়েছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৩০
হার্দিক পটেল, অল্পেশ ঠাকুর এবং জিগনেশ মেবাণী।

হার্দিক পটেল, অল্পেশ ঠাকুর এবং জিগনেশ মেবাণী।

হার্দিক পটেল, অল্পেশ ঠাকোর, জিগনেশ মেবানি— গুজরাত-যুদ্ধে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে এই তিন মূর্তিই তুরুপের তাস হয়ে উঠছেন রাহুল গাঁধীর।

গুজরাতে বিজেপি-রাজের বিরুদ্ধে পাতিদার, ওবিসি ও দলিতদের আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিন তরুণ তুর্কি। এঁদের কাছে টানার বদলে বিজেপি নেতৃত্ব এক সময় উল্টে আক্রমণাত্মক হয়েছিলেন। বিজেপিকে ধাক্কা দিতে সেটাকেই কাজে লাগিয়ে এই তিন নেতাকে কাছে টানতে চাইছিলেন রাহুল। কাকে কত আসন দেওয়া হবে, কংগ্রেসের ইস্তেহারে কতখানি সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে, তা নিয়েও টানাপড়েন চলছিল। আপাতত তিন নেতাই কেউ ঠারেঠোরে, কেউ স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেসকেই ভোট দেওয়ার জন্য প্রচার করবেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: চাকরি দিন, না হলে গদি ছাড়ুন, মোদীকে আক্রমণ রাহুলের

গুজরাতের ভোটারদের মধ্যে শুধু পাতিদারদের ভোটের ভাগ ১৪ শতাংশ। কিন্তু দলিত, ওবিসি, পাতিদার মিলিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়ায় প্রায় ৬০ শতাংশ। সেই ভোট বাক্সে টানাই লক্ষ্য কংগ্রেস নেতাদের। সে কারণেই এই নেতাদের দাবিকে আলাদা ভাবে গুরুত্ব দিয়ে মাঠে নেমেছেন রাহুল নিজে।

হার্দিক পটেল গুজরাতে পাতিদারদের জন্য সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলনের প্রধান মুখ। একই ভাবে ওবিসি-আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছেন অল্পেশ ঠাকোর। যিনি ইতিমধ্যেই কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। জিগনেশ আবার গুজরাতে দলিতদের উপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের স্বর।

কলেজের ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা হার্দিকের প্রথম কাজ ছিল গ্রামের বাসস্ট্যান্ডে পানীয় জলের বন্দোবস্ত করা। সেখান থেকেই ২০১৫-য় গুজরাত জুড়ে পাতিদার আন্দোলনের প্রধান নেতা হয়ে ওঠেন ২৪ বছরের এই তরুণ। হার্দিকের বোন মোনিকা ওই বছরই রাজ্য সরকারের বৃত্তির জন্য আবেদন করেও ব্যর্থ হয়। হার্দিক দেখেন, মনিকার এক বান্ধবী ওবিসি কোটায় সেই একই স্কলারশিপ পেয়ে যায়। তার পরেই হার্দিক দাবি তোলেন, ওবিসি কোটায় পাতিদারদেরও জায়গা দিতে হবে। তৈরি হয় ‘পাতিদার অনামত আন্দোলন সমিতি’। এদের আন্দোলনের ধাক্কায় রীতিমতো কাঁপন ধরে শাসক বিজেপির অন্দরে।

উল্টো দিকে পাতিদারদের আন্দোলনের বিরুদ্ধেই ওবিসি-দের পাল্টা লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অল্পেশ। শুরু করেছিলেন গুজরাত ক্ষত্রিয়-ঠাকুর সেনা দিয়ে। লক্ষ্য ছিল, ওই সম্প্রদায়ের তরুণদের মদের নেশা থেকে মুক্ত করা। কিন্তু রাজনীতির নিয়মে ও বিজেপি বিরোধিতায় হার্দিক ও অল্পেশ একই বিন্দুতে চলে এসেছেন।

অন্য দিকে জিগনেশের উত্থান মোদী-জমানায় গোরক্ষক বাহিনীর বিরোধিতা করে। সৌরাষ্ট্রের উনায় গো-রক্ষক বাহিনী দলিতদের উপর অত্যাচার চালায়। তার বিরুদ্ধে দলিত অস্মিতা যাত্রায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জিগনেশ। যার পেশাদার জীবন শুরু হয়েছিল সাংবাদিকতা থেকে। জিগনেশের নেতৃত্বেই দলিতরা মৃত গরুর চামড়া ছাড়ানোর পেশা ছেড়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।

কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, শুধু ওবিসি-পটেল-দলিত ভোটের অঙ্কে নয়। গুজরাতের ৪.৩৩ কোটি ভোটারদের মধ্যে চল্লিশের কম বয়সী ভোটারদের সংখ্যা ২.২৪ কোটি। সে দিক থেকেও এই তরুণ তুর্কিরা কংগ্রেসকে সাহায্য করবেন।

একটা চিন্তা অবশ্য এখনও রয়েছে। তা হল, হার্দিক পটেলদের দাবি মেনে কতখানি সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে কংগ্রেস? কারণ, ওবিসি-রা হলেন রাজ্যের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ। সেই ওবিসি কোটার মধ্যে থেকেই পটেলদের সংরক্ষণ দিলে ওবিসি-রা ক্ষুব্ধ হতে পারে। কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, তাঁরা পাতিদার ও অন্যান্য আর্থিক অনগ্রসর শ্রেণির জন্য ২০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা করতে রাজি। কংগ্রেস সরকারে এলে তার জন্য বিলও আনা হবে। ৪৯.৫ শতাংশের বেশি সংরক্ষণ দেওয়ার ঝুঁকি নিতে রাজি নন কংগ্রেস নেতারা।

এই পরিস্থিতিতে ঠিক হয়েছে, আগামী সপ্তাহে কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল পাতিদার নেতাদের সঙ্গে সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনায় বসবেন। হার্দিক পটেল নিজেও সেখানে হাজির থাকবেন। সেখানেই প্রচার এবং ভোটের কৌশল নিয়ে কথা হবে সব পক্ষের। লক্ষ্য গুজরাত।

Alpesh Thakore Hardik Patel Jignesh Mevani Rahul gandhi Gujarat Assembly Election 2017 Election Congress BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy