নোট-বিতর্কের মধ্যেই রাহুলকে আমন্ত্রণ চিনের

ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যেই চলতি মাসে বেজিং সফরে যাচ্ছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। চিনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দলকে সঙ্গে নিয়ে সে দেশে যাচ্ছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৭
Share:

ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যেই চলতি মাসে বেজিং সফরে যাচ্ছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। চিনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দলকে সঙ্গে নিয়ে সে দেশে যাচ্ছেন তিনি।

Advertisement

বেশ কিছু বছর ধরেই চিন ও ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতামত আদানপ্রদানের রেওয়াজ চলে আসছে। একাধিক বার এমনই প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি-সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক দলের নেতারা চিন সফরে গিয়েছেন। ভারত সফরে এসেছেন চিনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতারাও। কিন্তু বর্তমানে যে রাজনৈতিক টানাপড়েন চলছে, তাতে রাহুলকে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

মোদী সরকারের সঙ্গে চিনের সম্পর্কের শুরুটা মধুর হলেও যত সময় এগিয়েছে, তিক্ততা বেড়েছে দু’দেশের। তা সে পরমাণু জ্বালানি সরবরাহকারী গোষ্ঠীতে ভারতের অন্তর্ভুক্তিতে বাধা দেওয়াই হোক কিংবা জইশ নেতা মাসুদ আজহারকে প্রশ্রয় দেওয়াই হোক। উরি কাণ্ডের পরে ভারত যখন ইসলামাবাদের প্রতি চূড়ান্ত ভাবে আক্রমণাত্মক হতে চাইছে, সেই উদ্যোগে পাঁচিল তুলতে চাইছে চিন। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উপর দিয়ে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরও যথেষ্ট চাপে রেখেছে ভারতকে।

Advertisement

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মোদী সরকারও চিনকে পাল্টা চাপ দেওয়ার সুযোগ ছাড়তে চাইছে না। দলাই লামাকে কাজে লাগিয়ে ভারতও বেজিংকে অস্বস্তির মধ্যে রাখতে চাইছে। দক্ষিণ চিনা সাগরে চিনের একাধিপত্য খর্ব করতে জাপান এবং আমেরিকার সঙ্গে নৌ মহড়াও দেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিকে বাণিজ্যিক ভাবে কাছে টানার চেষ্টা করছেন মোদী, যাতে চিনকে আটকানো যায়।

এই প্রেক্ষিতে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে রাহুলের আলোচনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলি কী ভাবে উঠে আসে, তা নজরে রাখতে চাইছে মোদী সরকার। বেজিং কোনও সমান্তরাল সখ্যের রাস্তা তৈরি করে মোদীকে অস্বস্তিতে ফেলার চেষ্টা করে কিনা, সেটাও দেখে নিতে চায় বিদেশ মন্ত্রক।

নোট বাতিল নিয়ে রাহুল লাগাতার আন্দোলন করছেন। নোট-বাতিলের পরে পরিস্থিতির চাপে দেশের মানুষ যে ই-ওয়ালেটের শরণাপন্ন হচ্ছেন, তাতে সবচেয়ে এগিয়ে পেটিএম। যাদের ৪০ শতাংশ মালিকানাই চিনা সংস্থা আলিবাবার। মোদী ও পেটিএমকে জড়িয়ে আগেই মুখ খুলেছেন রাহুল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিরোধী দলের নেতা নেত্রীরা অভিযোগ আনছেন, দেশের মানুষের সমস্যার বিনিময়ে ওই চিনা সংস্থার লাভ করিয়ে দিচ্ছে মোদী সরকার। এর ফলে চিন এ দেশের অনেক তথ্য পেয়ে যাচ্ছে। চিনে গিয়ে এই সংক্রান্ত কোনও কথা রাহুল তোলেন কিনা, সে দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।

ক্ষমতায় থাকুন আর না থাকুন—গাঁধী পরিবারের সঙ্গে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের রাজনৈতিক যোগাযোগ নতুন নয়। ইউপিএ জমানায় ২০০৭ সালে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে সে দেশে গিয়েছিলেন সনিয়া। তৎকালীন চিনা প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও ও প্রধানমন্ত্রী ওয়ান জিয়াবাওয়ের সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন। পরের বছর রাহুল এবং প্রিয়ঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে বেজিং অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন সনিয়া।

তবে এ বার রাহুলের সফর যথেষ্ট জটিল আবহাওয়ায়। নোট বাতিলকে নিয়ে ঘরের মাঠে ঝোড়ো ইনিংস খেলছেন রাহুল। চৈনিক পিচে তিনি কেমন খেলেন, সেটাই দেখার। রাহুলের সঙ্গে চিনে যাচ্ছেন গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, সুস্মিতা দেব প্রমুখ নেতা-নেত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন