প্রবীণদের হাতেই রাশ! রাগ যাচ্ছে না রাহুলের

এর পর গুলাম নবি আজাদ, আহমেদ পটেলদের মতো অনেক কংগ্রেস নেতার সঙ্গেই কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কুশল বিনিময় হল। কিন্তু রাহুল তার ধারেকাছে গেলেন না।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৪৫
Share:

রাজঘাটে রাহুল গাঁধী।—ছবি এএফপি।

সংসদের সেন্ট্রাল হল। মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর ছবিতে ফুল দিয়ে পাশেই দাঁড়িয়ে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লালকৃষ্ণ আডবাণীও ফুল দিলেন। মোদীকে দেখে নমস্কার করলেন। মোদীও। তার পর সনিয়া গাঁধী। আড় চোখে প্রধানমন্ত্রীকে দেখলেন। ক্ষণিকের কুশল বিনিময়ও হল। পিছনেই রাহুল গাঁধী। ফুল দিয়ে মোদীর দিকে ফিরেও তাকালেন না। অথচ প্রধানমন্ত্রী অপেক্ষায় ছিলেন, রাহুল কখন তাঁর দিকে তাকান।

Advertisement

এর পর গুলাম নবি আজাদ, আহমেদ পটেলদের মতো অনেক কংগ্রেস নেতার সঙ্গেই কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কুশল বিনিময় হল। কিন্তু রাহুল তার ধারেকাছে গেলেন না। অথচ তার কিছু ক্ষণ পরেই যখন দিল্লির প্রদেশ কংগ্রেস দফতর থেকে রাজঘাট পর্যন্ত পদযাত্রা করলেন, তখন ছিলেন খোশমেজাজে। সামনে মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সুস্মিতা দেবকে দেখে হাসিমুখে তাঁর কাঁধে হাত দিলেন। আশেপাশে একঝাঁক তরুণ মুখ, যাঁদের সভাপতি হিসেবে রাহুলই নানা পদে বসিয়েছিলেন। রাহুলকে ঘিরে কংগ্রেস কর্মীদেরও পুরনো উন্মাদনা ফিরে এল। যে ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হল এসপিজি নিরাপত্তা কর্মীদের।

কিন্তু রাজঘাটে পৌঁছেই যে রাহুলের ‘মুড’ অনেকটা বদলে গেল, তা নজর এড়ায়নি কংগ্রেসের কিছু নেতার। সেখানে তখন সনিয়া উপস্থিত। মঞ্চে শুধু প্রবীণ নেতারাই। আহমেদ পটেল, গুলাম নবি আজাদ, মল্লিকার্জুন খড়্গে, মুকুল ওয়াসনিক, পি সি চাকো।

Advertisement

অনুষ্ঠান শেষে রাহুল-শিবিরের এক নেতা জানালেন, ‘‘আসলে রাহুল গাঁধীর রাগ এখনও পড়েনি। অনেকের উপরে রেগে আছেন তিনি। সামনে দু’টি বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে প্রায় রোজই বৈঠক হচ্ছে। প্রার্থী বাছাইও হচ্ছে। রাহুল নিজে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির সদস্য। তার উপর দলের প্রাক্তন সভাপতি। তা সত্ত্বেও দশ জনপথে সনিয়ার বাড়িতে বৈঠকে আসছেন না। সভাপতি পদ ছাড়ার পর একটিও বৈঠকে যোগ দেননি এ পর্যন্ত।’’

শুধু তা-ই নয়, এ দিনই মহারাষ্ট্রের ওয়র্ধা থেকে পদযাত্রা শুরু করার কথা ছিল রাহুলের। গত তিন মাস ধরে তার পরিকল্পনা করেছে কংগ্রেস। সপ্তাহ দুই আগে আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রাহুলের সফর নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণাও করা হয়েছিল। কিন্তু রাহুল যেতে রাজি হননি। এ দিন গাঁধী-পর্ব মেটার পর দশ জনপথে রাহুলের ঘনিষ্ঠ নেতা অশোক তানোয়ারও কার্যত সনিয়ার ‘বিরুদ্ধে’ আন্দোলন শুরু করেন। যাঁকে ক’দিন আগেই ভূপেন্দ্র হুডার চাপে ভোটমুখী হরিয়ানার কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন সনিয়া। নিজের ঘনিষ্ঠদের প্রার্থী করাতে চান তানোয়ার। সনিয়ার বাড়ির সামনে রীতিমতো মাইকে চেঁচিয়ে বলেছেন, ‘‘কোটি টাকায় বিক্রি হচ্ছে টিকিট।’’

রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতাদের মতে, দলে এখন প্রবীণেরা ফের রাশ তুলে নিয়েছেন। রাহুল সভাপতি থাকার সময়েও তাঁর সঙ্গে সহযোগিতা করেননি প্রবীণেরা। দলের কর্মসমিতির বৈঠকেই সেই ক্ষোভ খোলাখুলি জানিয়েছিলেন রাহুল ও তাঁর বোন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরে দলটা যাতে অন্তত আহমেদ পটেলদের হাতে পুরোপুরি চলে না-যায়, সেটি রুখেছেন রাহুল। কিন্তু ‘কামরাজ প্ল্যান’-এর মতো করে প্রবীণদের সরিয়ে নবীনদের আনার যে ভাবনা ছিল, তা হয়ে ওঠেনি।

দশ জনপথের ভিড়েই এক নেতা স্মরণ করালেন, ‘‘আজ কিন্তু শুধু গাঁধীজি ও লালবাহাদুর শাস্ত্রীর জন্মদিনই নয়, কে কামরাজের মৃত্যুদিনও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন