নিউ ইয়র্কে রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।
বিদেশের মাটিতে ‘উন্মাদনা’র এই চেনা ছবিটা এত দিন ছিল নরেন্দ্র মোদীকে ঘিরে।
ছবিটা বদলে গেল অনেকটাই। সপ্তাহের ভরা কাজের দিনে নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে নিজস্বী তোলার ধুম, হাতে পোস্টার ‘এনআরআই’জ ফর রাহুল’, আর স্লোগান ‘রাহুল গাঁধী জিন্দাবাদ’।
এত দিন আরএসএস-বিজেপি বলত, সনাতন ভারতের প্রতিনিধি তারাই। দেশের ফেরার আগে মার্কিন সফরের শেষ লগ্নে সে তত্ত্ব খারিজ করে রাহুল গাঁধী শুনিয়ে এলেন, কংগ্রেস সংগঠন শতাব্দী প্রাচীন হতে পারে। কিন্তু তার দর্শন হাজার হাজার বছরের প্রাচীন ভারতের। সহিষ্ণুতা, সম্প্রীতি, অহিংসা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের। মোদী জমানায় সেটাই নষ্ট হচ্ছে। সে কারণেই বিদেশের মাটিতেও তাঁকে শুনতে হচ্ছে, ভারতের সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতির পরিবেশের কী হল? রাহুলের সফরসঙ্গী স্যাম পিত্রোদার কথায়, ‘‘জনপ্রিয়তা, জাতীয়তাবাদের নাম করে আসলে বিভাজন ছড়ানো হচ্ছে। সেটা উদ্বেগের।’’
রাহুলের সফরের গোড়ার দিকে তাঁর কিছু মন্তব্য ঘিরে রে-রে করে উঠেছিল বিজেপি। কিন্তু সফর যত এগিয়েছে, রাহুলের আক্রমণের কৌশলও তত বদলেছে। তা হয়ে উঠেছে অনেক পরিণত। আর বিজেপির পক্ষে তার মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউ ইয়র্কে প্রবাসী কংগ্রেসের অনুষ্ঠানে রাহুল যেমন সুকৌশলে বলেছেন, ‘‘ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকানদের সঙ্গে দেখা করার সময় আমি বলার আগেই তাঁদের প্রশ্নে আমি বিস্মিত। তাঁদের সিংহভাগ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন— ভারতের সহিষ্ণুতা, সম্প্রীতির কী হল?’’
এর পরেই রাহুল যোগ করেন, ‘‘হাজার বছর ধরে ভারত বিশ্বকে সম্প্রীতির পথ দেখিয়েছে। আর এখন একটা শক্তি দেশে বিভাজন আনছে। এটা বিপজ্জনক। বিশ্বে ভারতের বদনাম হচ্ছে। অনেক দেশই মনে করে, হিংসার পরিবেশেও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উত্তর হল ভারত। এই সম্পদকে আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। কংগ্রেসকে তা রক্ষা করতে হবে। ভারতের সম্মান বড় বিষয়। প্রতিপক্ষ যা-ই হোক, গাঁধীর মতোই মূল্য চুকিয়ে সত্যের জন্য লড়াই করতে হবে।’’ রাহুলের কথার প্রতি পরতে ছিল মোদীকে বিঁধে একটি বিকল্প পথের সন্ধান দেওয়া। একই সঙ্গে কংগ্রেসের ঐতিহ্যকে বিদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। রাহুলের নির্দেশে কংগ্রেসও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করছে, ‘আপনার ঐতিহ্যকে জানুন’।
রাহুল কৃষি-শিল্পে রোজগার বাড়ানো, একবিংশ শতাব্দীর উপযুক্ত শিক্ষা-স্বাস্থ্য ব্যবস্থার রূপরেখাও পেশ করেছেন বিদেশে। রাহুলের কৌশলী আক্রমণে বিজেপি আজও চুপ। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ সকালে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনের এক অনুষ্ঠানে বললেন কৃষি আয় দ্বিগুণ করার কথা। সওয়াল করলেন কৃষকদের খুচরো ক্রয়, পাইকারি বিক্রয় পদ্ধতি উল্টে দেওয়ার পক্ষে, যাতে কেউ তাদের লুঠ করতে না পারেন। যা শুনে কংগ্রেস বলছে, রাহুলের আক্রমণ ফেরাতে না পেরেই এই সব কথা। আর এ সব তো আগেও বলেছেন মোদী। কাজে তার উল্টো করেছেন। ফলে কৃষক আত্মহত্যা বেড়েছে। অর্থনীতিরও সর্বনাশ হয়েছে।