মাঠে বসে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা। সোমবার অমেঠীতে রাহুল গাঁধী। — নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রে মোদী সরকারের মূল্যায়ন করতে গিয়ে দশে শূন্য দিলেন রাহুল গাঁধী। তবে এখানেই থামছেন না সনিয়া-পুত্র। মোদী সরকারের ব্যর্থতা তথা ‘কৃষক ও গরিব বিরোধী’ নীতি নিয়ে প্রচারের জন্য দশ দিকে লোক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। যাতে কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতারা দেশের সব বড় শহরে গিয়ে সভা বা সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরতে পারেন। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারেন সরকারের ব্যর্থতা ও ‘ডিগবাজি’ খাওয়ার দিকগুলি। যেমন, কলকাতায় রাহুল পাঠাচ্ছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা তথা রাজস্থানের তরুণ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সচিন পায়লটকে।
রাহুল নিজে আজ ছিলেন অমেঠীতে। প্রায় চার মাস পর নিজের নির্বাচন কেন্দ্রে গেলেন রাহুল। সেটাও হয়ে উঠল বিজেপিকে জবাব দেওয়ার চেষ্টা। কারণ অমেঠীকে সময় না দেওয়া নিয়েও রাহুলকে জব্দ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। যেমন, সম্প্রতি রাহুল যখন লোকসভায় রাহুল তখন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব, অভিযোগ আনছেন, অমেঠীতে ফুড পার্ক তৈরির প্রস্তাব বাতিলের পিছনে রয়েছে বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতি— ঠিক সেই সময় অমেঠীতে গিয়ে হাজির হন স্মৃতি ইরানি। পরে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী হলেও লোকসভা ভোটে এই স্মৃতিই অমেঠীতে রাহুলের কাছে হেরেছিলেন। যেন তারই জবাব দিতে স্মৃতি কটাক্ষ ছোড়েন, ‘‘এলাকার সাংসদ নিরুদ্দেশ! যিনি নিজের নির্বাচন কেন্দ্রেরই খেয়াল রাখেন না, তিনি দেশের কী খেয়াল রাখবেন?’’
সেই অমেঠীতে আজ কংগ্রেসের আয়োজন ছিল নজর কাড়ার মতো। পারদ চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। তাতেও অমেঠীর পথে থইথই মানুষ! কখনও গাড়ি থেকে নেমে সেই ভিড়ে মিশে গিয়েছেন রাহুল। কখনও ‘চৌপাল’ করে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কখনও বা করেছেন পদযাত্রা। তাঁর মুখে বেজেছে অবশ্য একই রেকর্ড, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু এক বারও কৃষকদের ঘরে গিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করেননি, তাঁদের সমস্যা কী?’’ বলেছেন, ‘‘অচ্ছে দিন আনবেন প্রচার করেছিলেন মোদী। কিন্তু দূরবিন দিয়েও তা দেখা যাচ্ছে না। এক বছরে না তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ, কৃষকরা না পেয়েছেন কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য। শ্রমিকের কল্যাণেও কিছুই হয়নি।’’ অমেঠীতে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, তা হলে প্রথম এক বছরের কাজ নিয়ে সরকারের মূল্যায়ন তিনি কী ভাবে করবেন? জবাবে রাহুল বলেন, ‘‘কৃষক ও শ্রমিকদের প্রসঙ্গে বলতে পারি দশে শূন্য পেয়েছে সরকার। কর্পোরেট ও পুঁজিপতিদের জন্য দশে দশ।’’
সরকারের এক বছর পূর্ণ হবে ২৫ তারিখ। তার আগে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এই প্রচারটাই রাহুল গোটা দেশে ছড়িয়ে দিতে চান। আগে এ ধরনের ক্ষেত্রে কংগ্রেস দিল্লিতে একটা সাংবাদিক বৈঠক করেই থেমে থাকত। দলের নেতাদের নড়ানো যেত না। কিন্তু মোদী সরকারের বর্ষপূর্তির সন্ধিক্ষণে দেশ জুড়ে সরকার-বিরোধী প্রচারের জন্য এ বার দলের শীর্ষ সারির নেতাদের নিয়ে ষাট জনের টিম তৈরি করেছেন রাহুল। তাতে রয়েছেন পি চিদম্বরম, গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা, অম্বিকা সোনি, সলমন খুরশিদ, শাকিল আহমেদের মতো নেতারা।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, কর্মসংস্থান, কৃষি, বিনিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্র ধরে ধরে গত এক বছরের সরকারের কাজের পরিসংখ্যান নিয়ে তাঁদের হাতে একটি রিপোর্ট তুলে দিয়েছে রাহুলের দফতর। কোন কোন ক্ষেত্রে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থেকে ডিগবাজি খেয়েছে মোদী সরকার সেই তালিকাও দেওয়া হয়েছে। যেমন, বছরে আড়াই কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। সরকারেরই হিসেব বলছে, মাত্র দেড় লক্ষ মানুষ কাজের সুযোগ পেয়েছেন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমে ১.১ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে, শিল্প উৎপাদনের বৃদ্ধির হার রেকর্ড হারে কমেছে ইত্যাদি। দেশের সব বড় শহরে গিয়ে এ সব তথ্য তুলে ধরবেন কংগ্রেস নেতারা।
দলের এক নেতার কথায়, ‘‘মোদীর মিথ্যার ডঙ্কা বাজানোর বিরুদ্ধে কার্পেট বম্বিং হবে দেশ জুড়ে।’’ সূত্রের খবর, এই সময়টা রাহুল হয়তো নিজের রাজ্য সফর বন্ধ রাখবেন। সরকারের বর্ষপূর্তির পরের দিনই যাবেন কেরল সফরে।