আকবর রোড জুড়ে বিছানো সারি সারি বাজি। সলতেয় আগুন লাগতেই বিকট শব্দে দাপাচ্ছে রাজধানীর সকাল।
সূত্রটি সেখান থেকেই নিলেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেস সভাপতি হয়েই সরাসরি নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে বললেন, ‘‘দেখুন, আগুন যখন লাগে, তা নেভানো কত মুশকিল। বিজেপিকে সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করছি। বিজেপি গোটা দেশে আগুন লাগিয়ে হিংসা ছড়ায়। আর তার মোকাবিলায় কংগ্রেসের শক্তি দলের কর্মীরা।’’
রাহুল গাঁধীর অভিষেক মঞ্চ। সেখান থেকে মোদীর উপরে এল ত্রিমুখী আক্রমণ। রাহুল, সনিয়া গাঁধী, মনমোহন সিংহ— ছাড়লেন না কেউই। পরতে পরতে মোদীকে নিশানা করেও কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে নিজের ‘আদর্শ’ বোঝাতে রাহুল বললেন, ‘‘ওরা আগুন লাগায়, আমরা নেভাই। ওরা ভাঙে, আমরা জুড়ি। ওরা ক্রোধ দেখায়, আমরা ভালবাসি। ওদের আর আমাদের ফারাক এটাই।’’ সেই সঙ্গে কংগ্রেস সভাপতির সংযোজন, ‘‘মতান্তর থাকলেও বিজেপির সকলকে আমরা ভাই-বোন মনে করি।’’
ঠিক এই ঝাঁঝটিই চাইছিলেন কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। বিশেষ করে নতুন সভাপতির থেকে। নিরাশ করেননি রাহুল। বললেন, ‘‘একুশ শতকে নিয়ে যেতে চায় কংগ্রেস। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী চাইছেন মধ্যযুগে নিয়ে যেতে। মানুষকে এখন তাঁর বিশ্বাসের জন্য পেটানো হয়, খাবার নিয়ে হত্যা করা হয়। চলছে মানুষকে দমানো, মুখ বন্ধ করা ও মিথ্যা দিয়ে বিভ্রান্ত করার রাজনীতি। যেন এক জন ব্যক্তিই সব জানেন। ভাবতে বাধ্য করা হচ্ছে সম্প্রীতিতে দেশ চলবে না। ব্যক্তির ইমেজটাই সব।’’
মনমোহনও বললেন, ‘‘রাহুল এমন সময়ে দায়িত্ব নিচ্ছেন, যখন দেশে ভয়ের রাজনীতি ছাপিয়ে যাচ্ছে আশার রাজনীতিকে। রাহুল নিশ্চয়ই বদল আনবেন।’’ আর ‘মা’ সনিয়ার কথা, ‘‘ছোট থেকে হিংসা ও দুঃখ সহ্য করেছে রাহুল। আমার ছেলে বলে তারিফ করব না। কিন্তু রাজনীতিতে এসে যে ভয়ঙ্কর ব্যক্তিগত আক্রমণের মুখোমুখি হতে হয়েছে, সেটি তার হৃদয়কে শক্ত করেছে। নির্ভয় করেছে। ওর সহ্যশক্তি ও দৃঢ়তায় গর্ব হয়। কিছুতেই আমরা পিছু হঠব না।’’
কংগ্রেস নেতাদের মতে, প্রথম দিনেই রাহুল বুঝিয়ে ছেড়েছেন, তাঁর লড়াইটা সরাসরি মোদীর সঙ্গে। মোদীর বিকল্প পথের ভাষ্য প্রচার করেই ধাপে ধাপে বাজিমাত করতে চান তিনি। গুজরাতে ভোটের ফল অনুকূলে হলে এখনই আরও চাঙ্গা হবে দল। না হলেও মুষড়ে পড়ার কোনও কারণ নেই, এই বার্তা দিতে দলের দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের পথটি বাতলে দিলেন রাহুল। ভোটের হার-জিত নয়, মোদী ও বিজেপির সঙ্গে দলের আদর্শ ও আঙ্গিকের ফারাককেই হাতিয়ার করতে চাইলেন।
প্রধানমন্ত্রীকে এ ভাবে আক্রমণ করায় এ দিন রে-রে করে উঠে বিজেপি। তাদের প্রশ্ন, সনিয়া কি বলতে চাইছেন, মোদীই তৈরি করেছেন রাহুলকে? ১৩২ বছরের পুরনো দলের এত মোদী-আতঙ্ক? রাহুল যে আগুন লাগানোর কথা বলছেন, তিনি কি জানেন তাঁর দলের ইতিহাস? বিভাজনের রাজনীতির কারিগর তারাই। কয়লা কেলেঙ্কারিতে মধু কোড়ার জেল হয়েছে এ দিন। সেই প্রসঙ্গ টেনে দুর্নীতির প্রশ্নেও কংগ্রেসকে বিঁধেছে বিজেপি। তাদের কটাক্ষ, প্রজন্মের বদল হলেও কংগ্রেসের মানসিকতা বদলায়নি।