কংগ্রেসে জোবসের জাদু চান রাহুল

চেনা কথা, চেনা সুর। নিত্যদিন একই ভাবে নরেন্দ্র মোদীর নিন্দা। মাস পাঁচেক ধরে এ সব শুনে শুনে কংগ্রেস কর্মীরা যে আর সে ভাবে সাড়া দিচ্ছেন না সদ্য গত কালই দিল্লিতে রামলীলা ময়দানের কৃষকসভায় তা টের পেয়েছেন তিনি। ভিড় আছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৭
Share:

চিন্তন বৈঠকে তাঁর মন্ত্র স্টিভ জোবস। মন্দিরে হাতে গদা। মথুরায় রাহুল। সোমবার। ছবি: পিটিআই।

চেনা কথা, চেনা সুর। নিত্যদিন একই ভাবে নরেন্দ্র মোদীর নিন্দা। মাস পাঁচেক ধরে এ সব শুনে শুনে কংগ্রেস কর্মীরা যে আর সে ভাবে সাড়া দিচ্ছেন না সদ্য গত কালই দিল্লিতে রামলীলা ময়দানের কৃষকসভায় তা টের পেয়েছেন তিনি। ভিড় আছে। উচ্ছ্বাস নেই। তাই বুঝি চেনা বুলিতে বদল আনতে চেয়ে রাহুল গাঁধী এ বার জোবস-শরণে!

Advertisement

ডুবতে বসা ‘অ্যাপল’ যাঁর জাদু-ছোঁয়ায় ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, সেই স্টিভ জোবসের সাফল্যের মন্ত্র এ বার উত্তরপ্রদেশে প্রয়োগ করতে চান কংগ্রেস সহসভাপতি। যে রাজ্যে গত পঁচিশ বছরে কুর্সির ধারে-কাছে পৌঁছতে পারেনি কংগ্রেস। আর এখন তো রাজ্যে চার নম্বর রাজনৈতিক দল। এই অবস্থা থেকে দলকে টেনে তুলতে ব্লক, জেলা ও রাজ্য স্তরের নেতাদের নিয়ে মথুরায় আজ চিন্তন বৈঠক করেন রাহুল। তুলে আনেন জোবস প্রসঙ্গ। বলেন, ‘‘ঠিক মানুষকে ঠিক দায়িত্ব দিয়েছিলেন জোবস। কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ববোধ তৈরি করে প্রত্যেককে তাঁদের কাজের উদ্দেশ্য বোঝাতে পেরেছিলেন। প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঐক্যের পরিবেশ কায়েম করতে পেরেছিলেন। সমষ্টিগত সেই প্রয়াসই ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে!’’

উত্তরপ্রদেশে ঝিমিয়ে পড়া দলকে জোবস-জাদুর মন্ত্রে জাগাতে প্রয়াত অ্যাপল-কর্তার ব্যক্তিগত জীবনের গল্পও শোনান রাহুল! দলে ঐক্যের পরিবেশ তৈরি করতে বলেন, ‘‘কংগ্রেস কর্মীদের আগে দলের সেনানী ভাবা হতো। এখন প্রত্যেককে পরিবারের এক জন হিসেবে দেখি। কারও ভিন্ন মত থাকলে, তাঁর কথাও শোনা হবে।’’ দলের বেহাল দশার কথা কবুল করেও রাহুলের দাবি, মতাদর্শের দিক দিয়ে কংগ্রেস পয়লা নম্বরে। দলের প্রত্যেক কর্মীর মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস-ডিএনএ। তাঁরা দলের মতাদর্শ মানুষের সামনে তুলে ধরলেই সাফল্য আসবে।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি ক্ষমতায় থাকলেও গত লোকসভা ভোটে রাজ্যের ৮০টির মধ্যে ৭১টি আসন দখল করেছে বিজেপি। রাজ্যে কংগ্রেসের মূল লড়াইটা যে বিজেপির সঙ্গেই, রাহুল তা স্পষ্ট জানান দলের নেতাদের। সেই সূত্রেই নিয়মরক্ষার মতো করে আজও প্রধানমন্ত্রীকে বেঁধেন। তাঁর মতে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রাখতে পারছেন না মোদী। তিনি নিজেই নিজের যত ক্ষতি করছেন, কংগ্রেসের সবাই মিলে নামলেও ততটা করতে পারবে না। রাহুলের কথায়, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে কৃষকদের আর্থিক সুরাহার জন্য বড় বড় কথা বলতেন মোদী। এখন কৃষকরা ওঁর নাম শুনলে গালি দেন।’’ রাহুল নিশানা করেন আরএসএসের মতাদর্শকেও। তাঁর কথায়, ‘‘এটাই আরএসএসের অনুষ্ঠান হলে মোহন ভাগবত এসে বলতেন, আকাশ কালো। আপনাদেরও সেটাই বলতে হতো। কংগ্রেসে উপর থেকে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয় না।’’

তবে মোদী-সঙ্ঘের নিন্দা নয়, বরং রাহুলের মুখে জোবস-প্রসঙ্গ আজ কৌতূহল তৈরি করেছে তাঁর দলেও। কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতা কিছুটা বেসুরো গেয়েছেন এ নিয়ে। তাঁর কথায়, রাহুল ঠিক নেতাকে ঠিক দায়িত্ব দিতে পারলে দলের এমন করুণ দশা হতো না। পঞ্জাবে ভোট আসছে। সেখানে দলের সব চেয়ে মজবুত নেতা অমরেন্দ্র সিংহকে এখনও সংগঠনের দায়িত্ব দিচ্ছেন না। হরিয়ানায় ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা দলের সব থেকে জনপ্রিয় নেতা। তবু অশোক তাওয়ারেকে প্রদেশ সভাপতি করেছেন রাহুল।

তবে রাহুল-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের এক নেতা দাবি করেন, ঠিক লোককে ঠিক পদে বসানোর প্রক্রিয়া রাহুল শুরু করে দিয়েছেন। সংগঠনের জাতীয় স্তরে কোন কোন প্রবীণ নেতাকে দায়িত্বে রাখবেন তার নকশাও কার্যত তৈরি। সচিব পদে নেতা বাছতে তরুণদের ইন্টারভিউ চলছে। পঞ্জাবে অমরেন্দ্র বা তাঁর মনোনীত কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারে কংগ্রেস গত পাঁচ মাসে অনেকটা সফল হয়েছে। এ বার জোর দিতে চান সংগঠনে ঘাটতিগুলি পূরণে। মথুরায় সেই বার্তাই দিয়েছেন রাহুল।

ডুবতে বসা অ্যাপল সাফল্যের আলোয় ফিরেছিল জোবসের জাদুতে। তাঁর মন্ত্রে রাহুল কী পারবেন কংগ্রেসে কোনও জাদু দেখাতে? দলের বর্ষীয়ান নেতা ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র কিন্তু আজই মন্তব্য করেছেন, ‘‘বাস্তবের মাটিতে নেমে আসা উচিত রাহুলের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন