কৃষকের দাবি নিয়ে মোদীর কাছে, চালে এগিয়ে রাহুল

ওস্তাদের মার শেষ দিনে! প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত দুর্নীতি ফাঁসের হুমকি দিয়ে গত দু’দিনে মোদী-বিরোধী রাজনীতির প্রায় সমস্ত আলোই শুষে নিয়েছেন তিনি। আজ ফের মাস্টার স্ট্রোক খেললেন রাহুল গাঁধী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:১৭
Share:

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রাহুল-সহ কংগ্রেসের নেতারা। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

ওস্তাদের মার শেষ দিনে!

Advertisement

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত দুর্নীতি ফাঁসের হুমকি দিয়ে গত দু’দিনে মোদী-বিরোধী রাজনীতির প্রায় সমস্ত আলোই শুষে নিয়েছেন তিনি। আজ ফের মাস্টার স্ট্রোক খেললেন রাহুল গাঁধী। নোট বাতিলের প্রশ্নে বাকি বিরোধীরা যখন সংসদে স্রেফ স্লোগান তোলাতেই সীমিত থাকলেন, তখন শীত অধিবেশনের শেষ দিনে অন্যদের তুলনায় আরও বেশ খানিকটা এগিয়ে গেলেন তিনি। সটান দেখা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। গত পনেরো দিন ধরে এর জন্য ‘হোম ওয়ার্ক’ করেছেন রাহুল। উত্তরপ্রদেশের জেলায় জেলায় ঘুরে নোট সঙ্কটে পীড়িত কৃষকদের দাবি সংগ্রহ করিয়েছেন। সেই সম্মিলিত দাবিপত্র প্রধানমন্ত্রীর সামনে ফেলে রাহুল আর্জি জানালেন— ওঁদের কৃষি ঋণ মকুব করা হোক। কৃষি পণ্যের সহায়ক মূল্যও বাড়াক সরকার।

উত্তরপ্রদেশে ভোট আসন্ন। সেই প্রেক্ষাপটে রাহুল আজ যখন এই মোক্ষম তাস খেলেছেন, তখন দৃশ্যত ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকেছেন মুলায়ম-মায়াবতীরা। নোট বাতিলের বিরোধিতায় সংসদে এ ক’দিন কংগ্রেসের সঙ্গে তালমিল রেখেই চলছিল সপা-বসপা। কিন্তু অধিবেশনের শেষ লগ্নে এসে কৌশলে রাহুল যে তাঁদের টেক্কা দিলেন, বুঝতে অসুবিধা হয়নি তাঁদের। ফলে গোঁসা দেখিয়ে রাহুল তথা কংগ্রেসের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাত-কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে আসেন উত্তরপ্রদেশের যুযুধান দুই নেতা-নেত্রী। রাষ্ট্রপতি ভবন অভিযান থেকে সরে আসেন বামেরাও। তবে আগে থেকে তৈরি করা স্মারকলিপিতে অবশ্য সকলেরই সই ছিল।

Advertisement

রাহুলের অবশ্য কর্মসূচি থেমে থাকেনি। তৃণমূল, সংযুক্ত জনতা-সহ বাকি বিরোধী দলগুলিকে কার্যত নেতৃত্ব দিয়ে আজ ফের রাষ্ট্রপতির কাছে মানুষের নোট সঙ্কটের কথা তুলে ধরেন কংগ্রেস সহ সভাপতি। সনিয়াও ছিলেন সঙ্গে। শুধু তাই নয়,অধিবেশন শেষ হতে নোট যন্ত্রণার বিরুদ্ধে প্রচারে আজই সংসদ থেকে সড়কে নেমে পড়েন রাহুল। দিল্লি থেকে দুপুরে উড়ে যান গোয়ার মারগাঁওয়ে। সেখানে দলের সমর্থকদের নিয়ে নোট-ধাক্কার প্রতিবাদে দু’ঘণ্টা পদযাত্রা করেন। তার পর সূর্য ঢলে পড়ার আগে সাগর সৈকতে এক জনসভা থেকে নোট বাতিল নিয়ে মোদীকে এক হাত নিয়ে বলেন, ‘‘কে বলছে এটা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক? দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষের ওপর আগুন বোমা ছোঁড়া হয়েছে।’’

বিরোধীরা পরের কথা, শাসক শিবিরের নেতারাই এখন স্বীকার করছেন, মোদী-বিরোধী রাজনীতিতে যেন রাতারাতি উত্থান হয়েছে রাহুলের। তিনিই কেন্দ্র-বিরোধিতার মুখ হয়ে উঠছেন। ফলে ভাল করে যাত্রা শুরুর আগেই রাহুলের রথ রোখার কৌশল নির্ধারণে বসেছেন জেটলি-অমিত শাহরা। এমনকী রাহুলের আগ্রাসন শীতল করার চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রীও। কংগ্রেস সহ-সভাপতি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে মোদী তাঁকে বলেন, ‘‘মাঝে মাঝে এ ভাবে দেখা করবেন!’’

এর পরও প্রশ্ন থেকে যায়, অন্য বিরোধী দলগুলিকে এ ভাবে পিছনে ফেলে দিয়ে কি ঠিক করলেন রাহুল?

এতে কি বিরোধী শিবিরে ফের ফাটল ধরতে পারে?

বস্তুত সপা-বসপা-র গোঁসা ভাঙিয়ে তাঁদের রাষ্ট্রপতি ভবনে নিয়ে যাওয়ার জন্য মায়া-মুলায়মের সঙ্গে আজ কথাও বলেন গুলাম নবি আজাদ। সনিয়া-মুলায়মেরও কথা হয়। তবে পরে রাহুল-ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা বলেন, প্রথম কথা হল, সংসদের অধিবেশনকে সামনে রেখেই এককাট্টা হয়েছিল বিরোধী দলগুলি। অধিবেশন শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন প্রতিটি দলই নিজের মতো রাজনীতি করবে। দ্বিতীয়ত, প্রত্যেকে নিজ নিজ রাজনৈতিক স্বার্থে এক ছাতার তলায় এসেছিল। সেই তাগিদ উবে না-গেলে তথাকথিত বিরোধী ঐক্যও টিকে থাকার কথা। বরং উল্টে এ-ও আশা করা যায়, আজকের পর উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের সঙ্গে সপা বা বসপা কোনও একটি দলের জোটের সম্ভাবনা বাড়বে। সর্বোপরি সার সত্য হল, ১৬টি বিরোধী দলের মধ্যে সর্বভারতীয় স্তরে উপস্থিতি ও গ্রহণযোগ্যতা আর কারও নেই। ফলে প্রাকৃতিক নিয়মে কংগ্রেসেরই নেতৃত্বে থাকার কথা ছিল। চ্যালেঞ্জ শুধু ছিল রাহুলের সামনে। তিনি কি পারবেন! এখনও পর্যন্ত রাহুলের পারফরম্যান্স ইতিবাচকই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement