বৃদ্ধতন্ত্রের অবসান ঘটাতে কার্যত বিদ্রোহ শুরু হল কংগ্রেসে। দলের এক ঝাঁক তরুণ নেতা ও সম্পাদক পাল্টা আক্রমণ শুরু করলেন রাহুল গাঁধীর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা প্রবীণ নেতাদের বিরুদ্ধে। এই বর্ষীয়ানরা নিজে থেকে দলের পদ না ছাড়লে, তাঁদের দরজায় দরজায় রিপোর্ট কার্ড ঝুলিয়ে অপদস্থ করারও হুমকি দিচ্ছেন এই নবীন নেতারা। দশ জনপথের ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতারাই মানছেন, দলের সওয়াশো বছরের ইতিহাসে এমনটা দেখা যায়নি।
দলে বর্ষীয়ানদের মৌরসিপাট্টা ভাঙার চেষ্টা বেশ কিছু দিন ধরেই চালাচ্ছেন কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল। কিন্তু বৃদ্ধতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর ঘনিষ্ঠ কিছু নেতা মুখ খুললেও কাজের কাজ তেমন হয়নি। উল্টে বর্ষীয়ানরাই রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন লোকসভা ভোটের পর থেকে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে ওই ভরাডুবিই হয়তো অনুঘটকের ভূমিকা নিল এ বার।
কংগ্রেস সংগঠনে তরুণদের ওজন বরাবরই কম। বয়সে প্রবীণ সাধারণ সম্পাদক তথা ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরাই হাইকম্যান্ড কাঠামোর ধারক ও বাহকের ভূমিকা পালন করে এসেছেন। এ বার কিন্তু আওয়াজটা উঠল সংগঠনের ভেতর থেকেই। বিদ্রোহের সূচনা করতে গত কাল গভীর রাতে দিল্লির পঞ্জাব ভবনে বৈঠকে বসেছিলেন এআইসিসি-র ১৬ জন সম্পাদক। আজ তাতে সামিল হন কংগ্রেসের আরও কিছু সম্পাদক ও এক ঝাঁক তরুণ নেতা। তাঁরা আজ বৈঠক করে দু’টি চিঠির খসড়া চূড়ান্ত করেন। একটি পাঠান কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর কাছে, অন্যটি দলের সব বর্ষীয়ান সাধারণ সম্পাদকের কাছে। সনিয়াকে লেখা চিঠিতে অবিলম্বে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠক ডাকার আর্জি জানানো হয়েছে। যাতে একা রাহুলের উপরে ব্যর্থতার দায় না চাপিয়ে লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের কারণ খতিয়ে দেখতে সবিস্তার আলোচনা করা যায়। আর দ্বিতীয় চিঠিটি দলের সব বর্ষীয়ান সাধারণ সম্পাদকের কাছে সরাসরি প্রশ্ন রাখা হয়েছে, রাহুলের নেতৃত্ব দুর্বল করার জন্য দলেরই কিছু নেতা যখন সচেষ্ট, তখন তাঁরা পাল্টা মুখ খুলছেন না কেন? কেন তাঁরা মূক-বধিরের মতো আচরণ করছেন এই বিষয়ে?
কংগ্রেসের সম্পাদকরা আগে কখনও বর্ষীয়ানদের বিরুদ্ধে এ ভাবে প্রশ্ন তোলেননি। এত দিন কার্যত তাঁরা করণিকের কাজই করে এসেছেন সংগঠনে। কিন্তু রাহুল সহসভাপতি হওয়ার পর দলে সম্পাদকদের গুরুত্ব বেড়েছে। এবং তাঁরাই এখন জনার্দন দ্বিবেদী, আহমেদ পটেল, দিগ্বিজয় সিংহের মতো কংগ্রেসের বর্ষীয়ানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেমেছেন। দলের একটি সূত্র বলছে, এর পিছনে খোদ রাহুলেরই হাত রয়েছে। কারণ, সংগঠনে রদবদল করতে চাইলেও তাঁর নিজের পক্ষে ওই প্রবীণ নেতাদের সরে দাঁড়াতে বলাটা সম্ভব নয়। পর্দার আড়াল থেকে প্রিয়ঙ্কা বঢরাও এ ব্যাপারে সক্রিয় রয়েছেন বলে কংগ্রেসের ওই সূত্রটির দাবি।
দলের একাধিক সম্পাদকের বক্তব্য, রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রিয়ঙ্কাকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়ার জল্পনা এই বর্ষীয়ানরাই উস্কে দিয়েছিলেন। এঁরা সাংগঠনিক দায়িত্ব না ছাড়লে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করে তাঁদের পদ ছাড়তে বলা হবে। অকেজো সাধারণ সম্পাদকদের দরজায় দরজায় রিপোর্ট কার্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।