নরেন্দ্র মোদীর ভূস্বর্গ জয়ের প্যাকেজাস্ত্রকেই বিহারে বিজেপির জয়ের পথে কাঁটা করে তুলতে চান রাহুল গাঁধী! বিহারের মন জয়ে মোদীর বড় ভরসা সওয়া লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ। সেই ভরসার মূলে ঘা দিতে চায় কংগ্রেস। বিধানসভা ভোটের আগে ভূস্বর্গের জন্যও বড়সড় প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল মোদী সরকার। কংগ্রেসের বক্তব্য, প্যাকেজের নামে আসলে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরকে। বিহারের মানুষ সতর্ক না হলে একই ভাবে বেকুব বনতে হতে পারে বিহারকেও।
ঠিক এক বছর আগে বন্যায় বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল কাশ্মীরে। রাজ্যে তখন কংগ্রেস ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের জোট সরকার। সামনে ভোট। কেন্দ্রে সদ্য ক্ষমতায় আসা মোদী সরকার প্রতিশ্রুতি দেয়, পুনর্গঠনের জন্য যত টাকা লাগে, দিল্লি তা দেবে। কংগ্রেসের অভিযোগ, গোড়ায় ৪৪ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন অমিত শাহরা। কারণ, বিজেপি তখন ‘মিশন চুয়াল্লিশ’-এর মাধ্যমে কাশ্মীরে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে। এখন এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, সেই ঘোষণা ছিল নিতান্তই ফাঁপা।
এই অভিযোগের সপক্ষে কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ মনে করিয়ে দেন, কেন্দ্র থেকে জম্মু-কাশ্মীরকে প্রথম কিস্তির সাহায্য হিসেবে দেওয়া হয়েছিল ১,৬০২ কোটি টাকা। তা-ও খাতায় কলমে। বাস্তবে ৪৩ কোটি টাকা দিয়ে কেন্দ্র বলে, রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলে টাকা রয়েছে। সেখান থেকেই খরচ করা হোক। এর পরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ১,৬৬৭ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন ঢাক পিটিয়ে। কিন্তু ক’দিন বাদে প্রায় নিঃশব্দে জানিয়ে দেওয়া হয়, রাজ্যের পুরনো দায় কেটে নিয়ে আসলে দেওয়া হবে মাত্র ৮২৯ কোটি টাকা।
কংগ্রেস এ ভাবে মাঠে নামার আগে থেকেই অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী নীতীশকুমার বিহার প্যাকেজ নিয়ে আক্রমণ শানাচ্ছেন মোদীকে। তাঁরও বক্তব্য, ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রীর ওই সওয়া লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ফাঁকা ঘোষণা ছাড়া কিছুই নয়। রাহুল সেই আক্রমণকেই আরও জোরালো করে তুলতে চান কাশ্মীর প্যাকেজের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে। বার্তা দিতে চাইবেন যে, প্যাকেজাস্ত্রে ধোঁকা খেয়েছে ভূস্বর্গ। বিহার যেন বোকা না বনে।
শুধু কাশ্মীরের প্যাকেজ নয়, সেনাবাহিনীর জন্য ‘এক পদ এক পেনশন’ প্রকল্পের দৃষ্টান্তও আজ তুলে ধরেন কংগ্রেসের নেতারা। অভিষেক বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরে পিডিপি-বিজেপি সরকার চলছে। তা সত্ত্বেও ধোঁকা দিচ্ছে কেন্দ্র। ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্যাকেজ ঘোষণা করে শেষ পর্যন্ত বেকুব বানানোটা মোদী সরকারের মজ্জায় রয়েছে। শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, গোটা মন্ত্রিসভা এখন সরকারি প্রকল্প ঘোষণাতেও মিথ্যা আওড়ায়।’’ এক পদ এক পেনশন প্রসঙ্গে কংগ্রেসের অভিযোগ, ইউপিএ জমানায় এই প্রকল্পের বাস্তবায়ণের যে রূপরেখা তৈরি করা হয়েছিল, তার থেকে অনেকটাই সরে গিয়েছে মোদী সরকার। এই প্রকল্প ঘোষণার ক্ষেত্রেও মিথ্যা বলছে। কোনও সেনাকর্মী স্বেচ্ছাবসর নিলে ওই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন কি না সেটাও স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে না। অর্থাৎ এই সরকার সেনাকর্মীদেরও ঠকাতে চাইছে। এটা ভাল যে, প্রাক্তন সোনাকর্মীরা সরকারের চালাকিটা ধরে ফেলেছেন।