Rail Budget

এ বারেও পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিতে পারে রেল

ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেনের দেরি, যাত্রী সুরক্ষা ও খাওয়াদাওয়ার অবস্থাও তথৈবচ।

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ১৬:৫০
Share:

যাত্রী পরিষেবার মূল তিনটি বিষয়। একটি সময়ে পৌঁছনো। বাকি দু’টি হল সুরক্ষা এবং খাওয়াদাওয়া। তার পরে অন্যান্য। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে রেলের এই মূল তিনটি বিষয়ই উধাও হয়ে গিয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেনের দেরি, যাত্রী সুরক্ষা ও খাওয়াদাওয়ার অবস্থাও তথৈবচ।

Advertisement

গত দু’বছর রেল বাজেটে সুরক্ষার উপরে জোর দিতে গিয়ে পরিকাঠামোর উপরেই জোর দিয়েছে রেল। তাই নতুন ট্রেন ঘোষণা থেকে দূরে সরে পরিকাঠামোর উপরেই বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এ বারও সেই একই পথেই যাওয়ার সম্ভাবনা রেল বাজেটে। নতুন ট্রেন নয়, পরিকাঠামো বাড়ানোই আপাতত লক্ষ্য মন্ত্রকের।

গত বছর পুজোর আগে উত্তরপ্রদেশে পর পর চার চারটি রেল দুর্ঘটনা ঘটায় মুখ পুড়েছিল রেল মন্ত্রকের। ওই সব ঘটনার পরেই রেলবোর্ডের কর্তারা নড়েচড়ে বসেছিলেন। ওই সব দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উঠে এসেছিল রেললাইনে ফাটলের কথা। তার পরেই যাত্রী সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে তড়িঘড়ি রেল মন্ত্রক নতুন লাইন পাতার কাজ বন্ধ রেখেই পাতা লাইনগুলির রেল বদলানো শুরু করে। কিন্তু ওই কাজ করতে গিয়ে রেল লাইনের অভাব দেখা দেয়। তড়িঘড়ি রেল লাইন কিনতে ‘গ্লোবাল টেন্ডার’ ডাকা হয়। দেশের সর্বত্রই এখনও রেল লাইন বদলানোর কাজ চলছে।

Advertisement

এই রেল লাইনের পরিকাঠামো ঠিক হতে হতে আরও বছরখানেক সময় প্রয়োজন বলে মনে করছেন রেলকর্তারা। এবং এই কাজের জন্য চার দিকে যে ভাবে রেললাইন বন্ধ করে কাজ করতে হচ্ছে, তাতে ট্রেনের দেরি লেগেই রয়েছে। বিশেষ করে মুঘলসরাই থেকে নয়াদিল্লি। এমনিতেই ওই জায়গায় রেললাইনের ক্ষমতার থেকে প্রায় দেড়শো গুণ বেশি ট্রেন চলাচল করে। ফলে এমনিতেই জটে আটকে দেরি হয় ট্রেনের। তার পরে লাইনে ব্লক থাকলে তো আর কথাই নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেনে আটক যাত্রীদের দুর্ভোগ ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

যাত্রীদের ওই দুর্ভোগ কমানোর কোনও দাওয়াইও এ বারের বাজেটে থাকবে না বলেই মনে করছেন রেলকর্তারা। তবে তাঁদের বক্তব্য, এই লাইনের কাজে গতি আনার জন্য বাজেটে কিছু ঘোষণা হতে পারে বলে তাঁরা ধারণা।

দীর্ঘ ৯২ বছরের প্রথা ভেঙে ২০১৭-তে প্রথম সাধারণ বাজেটের মধ্যেই মিশিয়ে রেল বাজেট ঘোষণা শুরু হয়। এ বার দ্বিতীয় বারও এ ভাবেই ঘোষণা হবে রেল বাজেট। এ বারও বাজেটে আগের মতো জনপ্রিয় ঘোষণা না থাকারই সম্ভাবনা দেখছেন রেলকর্তারা। কিন্তু পরিকাঠামোতে জোর দেওয়া হলেও গত বাজেটে ঘোষিত উন্নয়নের প্রকল্পগুলির কতটা অগ্রগতি হয়েছে?

রেলকর্তারা বলছেন, গত বাজেটে ৫৫০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছিল রেলের জন্য। তার মধ্যে ২১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল নতুন লাইন পাতার কাজে। রেল সূত্রের খবর, লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৬০০ কিলোমিটার হলেও গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত নতুন লাইন পাতা হয়েছে ২ হাজার কিলোমিটার। এখনও অনেকটাই বাকি। বৈদ্যুতিকরণের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশই বাকি রয়েছে। তবে বেশির ভাগ ওভারব্রিজ এবং আন্ডারপাসের নির্মাণ কাজ শেষ করা গিয়েছে।

যদিও পরিকাঠামোতে নজর বাড়ায় দুর্ঘটনা অনেকটাই রোখা গিয়েছে বলে মনে করছেন রেলকর্তারা। পাশাপাশি, দুর্ঘটনা রুখতে পরিকাঠামো বদলানোর ছাড়াও আরও কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছে রেলবোর্ড। যার অনেকটাই এখন পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে। ওই সব ব্যবস্থা আগামী বছরে অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে মনে করছেন রেলকর্তারা। তেমনই বদলানো হচ্ছে ট্রেনের খাবার সরবরাহের নিয়মনীতিও।

তবে যে ভাবে দিনের পর দিন মাঝপথে ট্রেনের দেরির জেরে যাত্রীরা ভূগছেন, তাতে এই সব আশার বাণী শুনে আর কত দিন কাটাতে হবে সেটা সময়ই বলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন