বাস্তব চিত্র হল, যে কোনও দূরপাল্লার ট্রেনে চার মাস আগে লাইন দিয়ে বা ইন্টারনেটে সময় মতো টিকিট কাটতে না পারলে আর টিকিট পাচ্ছেন না যাত্রীরা। অপেক্ষমান তালিকায় তাঁদের নাম ঝুলে যাচ্ছে। কিন্তু রেলের হিসাব বলছে, যাত্রী কমছে।
কী বলছে রেলের হিসাব?
দেশ জুড়ে রেলে প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রী সংখ্যা কমছে। রেলের হিসাবে, গত বছরের তুলনায় এ বছর মেল-এক্সপ্রেস এবং শহরতলির লোকাল ট্রেনে প্রথম পাঁচ মাসেই যাত্রী সংখ্যা কমছে প্রায় ১৫ কোটি। একই অবস্থা মালগাড়িতে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রেও। ফলে একদিকে যাত্রী সংখ্যা, অন্যদিকে পণ্য পরিবহণ কমে যাওয়ায় নেমে গিয়েছে রেলের আয়ের সূচকও। এ অবস্থায় উদ্বিগ্ন মন্ত্রক জোনগুলি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে।
রেল মন্ত্রক সূত্রের খবর, ২০১২-’১৩ সালে যাত্রী পরিবহণের হার ছিল সব চাইতে বেশি। ওই বছর যাত্রী সংখ্যা ছিল প্রায় ৮৪২.১ কোটি। ২০১৪-’১৫ সালে ৮২৫ কোটি। ওই বছর প্রথম পাঁচ মাসে ছিল ৩৫৭ কোটি। এ বছর প্রথম পাঁচ মাসে হয়েছে ৩৪২ কোটি। অর্থাৎ প্রথম পাঁচ মাসে যাত্রীসংখ্যা কমেছে ১৫ কোটি।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রেও অবস্থা খুবই খারাপ। এ বছর মন্ত্রক যা লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছিল এখনও পর্যন্ত সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ তো দূর অস্ত্, এ বছর শেষ পাঁচ মাসে প্রায় ২৩০ লক্ষ টন কম পণ্য পরিহণ হয়েছে।
কিন্তু কেন কমে যাচ্ছে যাত্রী বা পণ্য পরিবহণ?
রেল মন্ত্রকের কর্তাদের কাছে এ ব্যাপারে তেমন কোনও ব্যাখ্যা নেই। রেল বোর্ডের কয়েক জন কর্তা বলছেন, যাত্রীরা রেল ছেড়ে এখন অন্য পরিবহণের দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তের একটা বড় অংশ এখন বিমানেই যাতায়াত করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এর প্রধান কারণ, সময় বাঁচানো। ওই রেল কর্তাদের কথায়, এখন বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলি ব্যবসা বাড়াতে এখন অনেক রকম সুবিধাও দিচ্ছেন। ফলে বিমানে যাত্রী বাড়ছে। আবার রেল কর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, স্বল্প দূরত্বেও যাত্রীদের অনেকেই এখন নিজেদের গাড়িতে যেতে চাইছেন। ফলে স্বল্প দূরত্বেও যাত্রী সংখ্যা কমছে।
যাত্রীরা বলছেন, দূরপাল্লার কোনও ট্রেনই খালি থাকছে না। আসন সংরক্ষণ করার প্রথম দিনেই ট্রেন ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ট্রেনেই অপেক্ষমাণ তালিকার সংখ্যা প্রায় নূন্যতম ৮০। ফলে তারপরেও কী করে যাত্রী সংখ্যা কমতে পারে? বোর্ড কর্তারা এর কোনও উত্তর দিতে পারেননি।
তবে কম্পিউটারের সিস্টেমের গোলযোগেও যাত্রীর সংখ্যা কমে যেতে পারে বলে মনে করেন রেলের প্রাক্তন কর্তারা। তাঁদের কথায়, কম্পিউটারে কোথাও কোথাও টিকিট বিক্রির হিসাবে গোলমাল হচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজন, ‘কম্পিউটার অডিট’। ট্রেনেও যথেষ্ট ভিড় রয়েছে। তারপরেও যাত্রীর সংখ্যা কমছে কেন? কিন্তু আলাদা করে ‘কম্পিউটার অডিট’ হয় না। অথচ এই অবস্থায় যা এখন বিশেষ প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রাক্তন রেল কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুরও। তাঁর কথায়, ‘‘কম্পিউটার অডিট করলেও গোলমাল ধরা পড়বে।’’ এবং ওই অডিট করাতে হবে রেল বাদে তৃতীয় কোনও সংস্থাকে দিয়ে বলেও মনে করেন সুভাষবাবু।
কিন্তু কারণ যাই হোক, যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ কমে যাওয়ায় রেলের আয় কমে গিয়েছে। কাজকর্ম নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে রেলের অভ্যন্তরে। তার উপরে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেও রেলের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সব মিলিয়ে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে রেল কর্তারা। আর ওই অস্বস্তি কাটাতে সরকারি ওয়েবসাইট থেকে রেলের যাত্রী সংখ্যা বা মাল পরিবহণের তুলনামূলক তালিকাটিই তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে কি রেলের স্বাস্থ্য ফিরবে? সেটাই এখন দেখার।