রেল নিয়ে ফের সরব হল শিলচর-লামডিং ব্রডগেজ রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি। তাঁদের অভিযোগ, ব্রডগেজ রূপায়ণ হলেও তা এই অঞ্চলের মানুষের বিশেষ উপকারে আসছে না। মিটারগেজ আমলের সমস্যাগুলি রয়েই গিয়েছে। সেই পুরনো কামরা, ঢিমেতালা গতি। বড় কয়েকটি স্টেশন বাদ দিলে কোথাও জল নেই, নেই বিদ্যুৎ। হাইলাকান্দি-সহ অধিকাংশ স্টেশনে হাতে লিখে টিকিট দেওয়া হচ্ছে। নেই টিকিট-মেশিন ইউটিএস।
কমিটির তিন আহ্বায়ক—অজয় রায়, সুশীল পাল ও অরুণাংশু ভট্টাচার্যের কথায়, শিলচর ও গুয়াহাটির মধ্যে এক জোড়া ট্রেন চলে। একটি শিলচর থেকে ছাড়ে ভোর পাঁচটায়, অন্যটি গুয়াহাটি থেকে রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে। ট্রেন ছাড়ার এই সময়সূচিকে অযৌক্তিক বলে মনে করেন তাঁরা। অজয়বাবু বলেন, এ সবের চেয়েও বড় সমস্যা হল যাত্রিট্রেন মার খাইয়ে দেওয়া। প্রায়ই বদরপুরে যাত্রী-বাহী ট্রেনকে দাঁড় করিয়ে মালগাড়ি ছাড়া হয়। পরিবহণ লবির হাতছানিতেই এ সব হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। অজয়বাবুর বক্তব্য, এই ট্রেনের বহু যাত্রী গুয়াহাটি থেকে অন্য ট্রেন ধরেন। বদরপুরে ট্রেন আটকে রাখলে তাঁদের সংযোগকারী ট্রেন না ধরতে পারার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সেই ভয়ে অনেকে ট্রেন থেকে নেমে গাড়িভাড়া করেন।
এ সব নিয়ে তাঁরা রেলমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও জেনারেল ম্যানেজারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শীঘ্রই স্মারকপত্র পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন। ব্রডগেজ রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি বরাক উপত্যকার দুই সাংসদ সুস্মিতা দেব এবং রাধেশ্যাম বিশ্বাসের সঙ্গেও কথা বলবেন বলে ঠিক করেছেন।
তাঁদের অভিযোগ, নবনির্মিত প্ল্যাটফর্মগুলি ভেঙে পড়ছে। ভাঙ্গা ও করিমগঞ্জ স্টেশনের মধ্যবর্তী অংশ সমতল হলেও ট্রেন চলে ১০ কিলোমিটার গতিতে। শিলচর স্টেশনে কোনও ভোজনালয় নেই। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের গুয়াহাটি-শিলচর অংশে নেই কোনও প্যান্ট্রি কার। সব ক’টি ট্রেনের কামরা অপরিচ্ছন্ন থাকে। এই সব বিষয়ও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
হাইলাকান্দির সুশীল পাল এবং করিমগঞ্জের অরুণাংশু ভট্টাচার্য দু’জনই বলেন, তাঁদের স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠা দুষ্কর। বাধ্য হয়ে মানুষকে বেহাল রাস্তায় গাড়িই চড়তে হয়। অরুণাংশুবাবু বলেন, করিমগঞ্জ হয়ে দুটো লোকাল ট্রেন শিলচরে যায়। একটি কুমারঘাট এবং অন্যটি ধর্মনগর থেকে। কিন্তু দুটো ট্রেনেই পা রাখার জায়গা মেলে না। তাই তাঁর দাবি, অন্তত একটি ট্রেন করিমগঞ্জ-শিলচর রুটে চালানো হোক। দুল্লভছড়া এবং মহীশাসন রুটের কাজ দ্রুত শেষ করা হোক। হাইলাকান্দি স্টেশনে এই সব সমস্যার সঙ্গে অতিরিক্ত হিসেবে যুক্ত রয়েছে, ইউটিএস না থাকা। হাতে লিখে টিকিট বিক্রি হয়। দায়িত্বে মাত্র একজন কর্মী। পাশের ক্লাব থেকে একজন করে স্বেচ্ছাসেবী তাঁকে সাহায্য করলেও অনেকেই টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন না। তাতে বাধ্য হয়ে অনেকে টিকিট ছাড়াই ট্রেনে চাপে। অনেকে গাড়ি ধরেন।
তাঁরা শিলচর-গুয়াহাটি পথে আরেক জোড়া ট্রেনের দাবি করেন। চন্দ্রনাথপুর-লঙ্কা দ্বিতীয় লাইন নির্মাণের দাবিতেও বিশেষ গুরুত্ব দেন। তাঁরা জানান, গত ২০ অগস্ট থেকে কমিটির এক প্রতিনিধি দল বরাক উপত্যকার প্রতিটি স্টেশন পর্যবেক্ষণ করেছে। যাত্রীদের সঙ্গে কথাও বলেছে। দাবি, সমস্যার না মিটলে তাঁরা ফের আন্দোলনে নামবেন।