অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি যে রেল বাজেট পেশ করলেন, তা মোটেও সাধারণ মানুষের জন্য আশাব্যঞ্জক নয়। ফাইল চিত্র।
লোকসভায় সাধারণ বাজেটের অঙ্গ হিসাবে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি যে রেল বাজেট পেশ করলেন, তা মোটেও সাধারণ মানুষের জন্য আশাব্যঞ্জক নয়। সাধারণ ভাবে মনে হবে, রেলের ভাড়া বাড়েনি। কিন্তু, মনে রাখতে হবে আগামী বছরেই দেশে লোকসভা নির্বাচন। ফলে, সে দিকে তাকিয়ে ভাড়া বাড়ানোর কোনও অবকাশ হয়তো জেটলির হাতে ছিল না।
সকলের নিশ্চয়ই মনে আছে, দু’-এক মাস আগেই রেলমন্ত্রক ৪০০ জোড়া দূরপাল্লার ট্রেনকে সুপারফাস্ট বলে ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রত্যেক যাত্রীকে আসা-যাওয়া— উভয় ক্ষেত্রেই বাড়তি সুপারফাস্ট-ভাড়া দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া প্ল্যাটফর্ম টিকিটের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। গত বছরের বাজেটে ভাড়া বাড়ানোর কথা না থাকলেও, পরে কিন্তু বাড়তি অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা রেল প্রশাসন করে নিয়েছে এ ভাবেই।
সুরক্ষা ক্ষেত্রে মুখে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বললেও, কার্যত তার কোনও সদর্থক উল্লেখ এ বারের বাজেটে পাওয়া গেল না। চলতি আর্থিক বছরে মোট ব্যয়বরাদ্দ ধরা ছিল ১ লক্ষ ৩১ হাজার কোটি টাকা। আগামী আর্থিক বছরে সেই বরাদ্দ মোটে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ, আগামী বছর মোট ব্যয়বরাদ্দের পরিমাণ ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ট্রেন চলাচলে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গেলে যে পরিমাণ টাকা ধার্য করা প্রয়োজন ছিল, তার তুলনায় এই বরাদ্দ অতি নগণ্য। সে ক্ষেত্রে গত বাজেটে যে ১ লক্ষ কোটি টাকার ‘রেল সংরক্ষা কোষ’-এর কথা বলা হয়েছিল, এ বারেও সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন জেটলি। ৪ হাজার ২৬৭টি অসংরক্ষিত লেভেল ক্রসিং গেট আগামী দু’বছরে সংরক্ষিত করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে, এই পরিকল্পনাও নতুন কী! এ কথা তো প্রতি রেল বাজেটেই বলা হয় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে।
আরও পড়ুন:
গরিবকে বিমা, কর্পোরেটকে ছাড়, মধ্যবিত্ত কী পেলেন? দেখে নিন বিশ্লেষণ
বর্তমানে রেলের মালগাড়ি, কামরা বা ইঞ্জিনের জরাজীর্ণ অবস্থার কথা সকলেই জানেন। বলতে গেলে সেগুলি মান্ধাতা আমলের। এই পুরনো ‘রোলিং স্টক’ দিয়ে রেল চলাচলের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায় না। কিন্তু, অর্থমন্ত্রী মোটে ১২ হাজার নতুন মালগাড়ি, ৫ হাজার ৬০০টি নতুন যাত্রীকামরা এবং ৫০০টি নতুন ইঞ্জিন প্রবর্তনের কথা বলেছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম।
অর্থমন্ত্রীর রেল সম্পর্কিত স্বল্প ভাষণে বিভিন্ন প্রকল্প, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে যে সমস্ত রেল প্রকল্প আটকে আছে, তার ভবিষ্যৎ কী হল, কিছু জানা গেল না। পরিবর্তে তিনি ২০১৭-র সেপ্টেম্বর মাসে বুলেট ট্রেনের জন্য পৃথক লাইন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, বদোদরায় প্রস্তাবিত রেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ গতিসম্পন্ন ট্রেন চলার সঙ্গে সম্পর্কিত কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
মধ্যমেধার বাজেট পেশ করলেন জেটলি
পরিষেবার উন্নতির কথা বলতে গিয়ে জেটলি বলেন, ৬০০টি বড় স্টেশনের আধুনিকীকরণ হবে। মুম্বইয়ে শহরতলির রেলপরিষেবা ব্যবস্থাকে উন্নত করা হবে। এ ছাড়া বেঙ্গালুরুতে ১৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ শহরতলির ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। প্রতি দিন কমপক্ষে ২৫ হাজার যাত্রী ব্যবহার করেন এমন স্টেশনগুলিতে এসক্যালেটর, সব স্টেশন ও ট্রেনে ক্রমান্বয়ে ওয়াইফাই এবং সিসিটিভি-র ব্যবস্থা করা হবে বলেও তিনি জানান।
জেটলির আরও সংযোজন, ১৮ হাজার কিলোমিটার ডাবল লাইন তৈরি করা হবে। এবং ৪ হাজার কিলোমিটার লাইনের বৈদ্যুতিকরণ করা হবে। এ ছাড়া ‘ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর’ নির্মাণের কাজেও যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এত কিছু বললেন বটে, কিন্তু পরিকাঠামোর উন্নয়ন ও যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টি গোটা বাজেট ভাষণেই অবহেলিত থেকে গেল। আমজনতা, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গবাসীর মনে আজ একটাই প্রশ্ন, আমরা কী পেলাম?