কুয়াশার আতঙ্কে রাজধানীরও চাকায় বেড়ি

প্রতি বছরই শীতের মরসুমে গাঢ় কুয়াশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেন আটকে থাকায় যাত্রীদের নাস্তানাবুদ হতে হয়। তাই এ বার আসন্ন শীতের কথা মাথায় রেখে দেশ জুড়ে তিন শতাধিক মেল, এক্সপ্রেস ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিলের কথা ঘোষণা করেছেন রেল-কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৪১
Share:

প্রতি বছরই শীতের মরসুমে গাঢ় কুয়াশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেন আটকে থাকায় যাত্রীদের নাস্তানাবুদ হতে হয়। তাই এ বার আসন্ন শীতের কথা মাথায় রেখে দেশ জুড়ে তিন শতাধিক মেল, এক্সপ্রেস ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিলের কথা ঘোষণা করেছেন রেল-কর্তৃপক্ষ। এমন নয় যে, পুরো শীতেই ওই সব ট্রেনের চাকা বন্ধ থাকবে। একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কয়েক দিন বাতিল হবে ওই সব ট্রেন।

Advertisement

সময়সীমা মানে ৮ জানুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি। রেল বোর্ড সূত্রের খবর, ওই সময়ের মধ্যে কোন দিনে কোন ট্রেন বাতিল করা হচ্ছে, তার তালিকাও চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। মূল উদ্দেশ্য, কুয়াশায় দীর্ঘ ক্ষণ আটকে থেকে পরের পর ট্রেনের যে-জট পাকিয়ে যায়, তা থেকে যাত্রীদের রেহাই দেওয়া। কুয়াশার মরসুমে বেশ কিছু ট্রেনের চাকা বন্ধ থাকলে অন্য ট্রেনগুলো মসৃণ ভাবে চলতে পারবে।

চালু হওয়ার পর থেকে নির্ধারিত দিনে রাজধানী এক্সপ্রেসের চাকা কখনওই বন্ধ হয়নি। কিন্তু কুয়াশার আতঙ্ক এ বার সেই গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনের চাকাতেও বেড়ি পরিয়ে দিচ্ছে। চাকায় বেড়ি পড়ছে শতাব্দী, দুরন্ত-সহ আরও কিছু মেল, এক্সপ্রেস ট্রেনেও।

Advertisement

প্রতি বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই কুয়াশার বাড়বাড়ন্ত হয়। ওই সময় মাঝেমধ্যে অবস্থা এমন হয় যে, দৃশ্যমানতার একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকে। মাঝপথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেন থামিয়ে রাখতে বাধ্য হন চালক। কিন্তু তা সত্ত্বেও তো ট্রেন চলাচল করে। এ বছর এমন কী হল যে, এত ট্রেন বাতিল করতে হচ্ছে?

রেলকর্তাদের বক্তব্য, কয়েক বছর ধরে কুয়াশার বাড়বাড়ন্ত চলছে উত্তর ভারতে। রেলের ইঞ্জিনিয়ারেরাএর জন্য দূষণকেই দুষছেন। তাঁদের বক্তব্য, বাতাসে রোজই বাড়ছে ধূলিকণা। শীতের রাতে বাতাস ভারী হলেই কুয়াশার সঙ্গে নেমে আসে ধুলিকণা। মাঝেমধ্যে অবস্থা এমন হয় যে, ভোর বা সকালের আলোকেও ছাতার মতো আটকে দেয় ওই কুয়াশা বা ধোঁয়াশা। তার জেরেই নেমে যায় দৃশ্যমানতা। আটকে পড়ে ট্রেন। মাঝপথে ১৫-২০ ঘণ্টা আটকে থেকে আতান্তরে পড়েন যাত্রীরা। যাত্রীদের কথা মাথায় রেখেই দেশ জুড়ে তিন শতাধিক উত্তরমুখী ট্রেন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে আগেভাগেই। নিয়ম মেনে ওই সব মেল, এক্সপ্রেস ও প্যাসেঞ্জার ট্রেনের নির্দিষ্ট দিনগুলির টিকিট বিক্রি করা হয়নি। ট্রেন কমানোর সিদ্ধান্তে বিশেষ কী উপকার হবে যাত্রীদের?

রেল জানাচ্ছে, কুয়াশায় দেখতে না-পেয়ে চালকেরা মাঝরাস্তাতেই ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেন। আর একটা ট্রেন দাঁড়িয়ে গেলে তার পিছনে পরপর আটকে যায় অনেক ট্রেন। সড়কপথে যানজটের মতো রেলপথে তৈরি হয় ট্রেনের জট। সেই জট ছাড়িয়ে ট্রেনগুলির গন্তব্যে পৌঁছতে অনেক ক্ষেত্রে দ্বিগুণ সময় লেগে যায়। কিছু ট্রেন বাতিল করে লাইনে ট্রেনের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হলে যে-সব ট্রেন চালু রাখার কথা, গতি ধীর হয়ে গেলেও সেগুলোকে একটানা চালানো সম্ভব হবে। ফলে মাঝপথে ঘণ্টার ঘণ্টা আটকে থেকে যাত্রীদের নাজেহাল হতে হবে না।

গত বছর কুয়াশার জন্য মাঝপথে ট্রেন আটকে যাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই যাত্রীদের খাবার ও পানীয় জল জোগাতে রেলকর্মীদের কালঘাম ছুটে গিয়েছিল। তাই রেল বোর্ড এ বার কুয়াশার দাপট শুরু হওয়ার আগেই সব জোনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিশেষত উত্তরমুখী বেশ কিছু ট্রেন বাতিল করে বিভিন্ন লাইনকে যথাসম্ভব খালি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জানাচ্ছেন রেলকর্তারা।

ট্রেন কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না অনেক যাত্রীই। তাঁদের বক্তব্য, কুয়াশা যে হবেই, এমনটা ধরে নেওয়া হচ্ছে কেন? এমনিতেই তো উত্তরমুখী, বিশেষকরে দিল্লিমুখী ট্রেনগুলোর টিকিট পাওয়া যায় না। তার মধ্যে এই বিপুল সংখ্যক সাধারণ মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন কমিয়ে দিলে ওই দু’মাস যাতায়াতের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। সেই আশঙ্কা সত্ত্বেও এত ট্রেন বাতিল করা হচ্ছে কেন, প্রশ্ন যাত্রীদের।

রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, ৮-১০ বছর ধরেই ঘন কুয়াশায় ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হচ্ছে। তাই এ বারেও কুয়াশা হবে ধরে নিয়ে যাত্রীদের সুবিধার জন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঘন কুয়াশা হলে অনেক বিমানও অসুবিধায় পড়ে। তা সত্ত্বেও তো তারা অবতরণ করতে পারে। তা হলে কুয়াশার জন্য ট্রেন বাতিল কেন?

রেলকর্তাদের জবাব, কুয়াশার মধ্যে বিমান ওঠানামার জন্যবিশেষ প্রযুক্তির ব্যবস্থা আছে রানওয়েতে। কুয়াশার মধ্যে ট্রেন চালু রাখারজন্য তেমন প্রযুক্তি এখনও তৈরি হয়নি। বিদেশেও শীতের জন্য ট্রেনের আলাদা সময়সারণি তৈরি করাহয়। সেখানেও মূলত ট্রেন বাতিল করেই কুয়াশা-সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয় বলে জানাচ্ছেন রেলকর্তারা।


(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন