চুপ বিজেপি

বসুন্ধরা এ বার অভিযুক্ত খনি দুর্নীতিতেও

কয়লা খনি বণ্টন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে অতীতে মনমোহন সরকারের গায়ে কালি লেপেছিলেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা। দেড় বছর পর সেই একই অভিযোগ এখন রাজস্থানে বিজেপির বসুন্ধরা রাজে সরকারের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:০১
Share:

কয়লা খনি বণ্টন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে অতীতে মনমোহন সরকারের গায়ে কালি লেপেছিলেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা। দেড় বছর পর সেই একই অভিযোগ এখন রাজস্থানে বিজেপির বসুন্ধরা রাজে সরকারের বিরুদ্ধে। মূল অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্ট ও কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে চার মাসের মধ্যে ৬৫৩টি খনি নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বণ্টন করেছে বসুন্ধরা সরকার। এতে রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিব অশোক সিঙ্ঘভিকে সম্প্রতি ঘুষ নেওয়ার সময়ে হাতেনাতে ধরেছিল আয়কর দফতর। সেই কেঁচো খুড়তে গিয়ে বিরোধীরা এখন বের করেছেন খনি বণ্টন নিয়ে সরকারের তামাম অনিয়ম! সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বসুন্ধরার ইস্তফাও চেয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

Advertisement

ইউপিএ জমানায় কয়লা খনি বণ্টন নিয়ে মৌলিক বিতর্ক ছিল— এই প্রক্রিয়া নিলামে করা উচিত, নাকি ‘আগে এলে আগে পাবে’ নীতির ভিত্তিতে। পরবর্তী সময়ে নিলামের মাধ্যমে খনি বন্টনের পক্ষে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রও সেই অনুযায়ী নীতি বদল করে। গত বছর ১০ অক্টোবর রাজস্থান সরকারকে কেন্দ্র চিঠি দিয়ে জানায়, পরবর্তী নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত যেন খনি বণ্টন স্থগিত রাখা হয়। পুরনো আবেদনের ভিত্তিতে জরুরি প্রয়োজনে কোনও খনি বণ্টন করতে হলেও কেন্দ্রের আগাম অনুমতি চাই। সরকারি বিজ্ঞপ্তিও জারি করতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ৩০ অক্টোবর থেকে ১৬ জানুয়ারির মধ্যে রাজ্যের ৬৫৩টি খনি বণ্টন করেছে বসুন্ধরা সরকার। সে ক্ষেত্রে নিলাম তো হয়ইনি, ‘আগে এলে আগে পাবে’ নীতিও অনুসরণ করা হয়নি। খনি বণ্টনের আগে কেন্দ্রের অনুমতিও নেয়নি বসুন্ধরা সরকার।

রাজস্থানে খনি বণ্টন সংক্রান্ত সেই কাগজপত্র সম্প্রতি তথ্যের অধিকার আইনের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতারা। এ ব্যাপারে রাজ্য তথ্য কমিশন গোড়ায় আপত্তি করলেও পরে হাইকোর্টের নির্দেশে কাগজপত্র তুলে দিয়েছে আবেদনকারীদের হাতে। আজ সেই দস্তাবেজ হাতে নিয়ে রাজস্থানের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সচিন পায়লট বলেন, ‘‘দুর্নীতির বিষয়টি সাদা-কালোয় পরিষ্কার। এটা বুঝতে ব্যোমকেশ বক্সী হওয়ার দরকার নেই। খনির জন্য আবেদনপত্র ও ফাইল নোটিং দেখলেই বোঝা যাবে।’’ উদাহরণ দিয়ে সচিন পায়লট দেখান, করোলি জেলার ১১টি খনির মধ্যে পাঁচটি খনি বণ্টন করা হয়েছে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায়। আর একটি খনির জন্য ১২ ঘণ্টার মধ্যে লাইসেন্স দেওয়া হয়। যে দিন আবেদন জমা পড়ে সে দিনই তাতে সই করে ফাইল পদস্থ কর্তাদের কাছে পাঠান সরকারি করণিক। তার পর সে দিনই খনি ইঞ্জিনিয়ারের সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করে তাতে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। খনি দফতরের সচিব তাতে সই করেন এবং সব শেষে সই করেন মন্ত্রীও। একই ভাবে অজমেরেও প্রায় আলোর গতিতে একাধিক খনি বণ্টন করেছে বিজেপি সরকার।

Advertisement

প্রশ্ন উঠেছে, কাদের সেই লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে?

সচিন বলেন, ‘‘৬৫৩টি খনি বণ্টনের ফাইলই কংগ্রেসের কাছে রয়েছে। নামের তালিকাও রয়েছে। কংগ্রেসের প্রথম দাবি হল, বসুন্ধরা রাজেকে অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করতে হবে। দ্বিতীয় দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে সিবিআই তদন্ত করাতে হবে।’’

মাস দুয়েক আগে ললিত মোদী কাণ্ডেও বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তখন বসুন্ধরাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরানোর দাবিকে কৌশলে আমল দেননি মোদী-অমিত শাহরা। আজও কংগ্রেসের অভিযোগ নিয়ে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কোনও জবাব দেয়নি। কিন্তু সচিন পায়লট আজ বলেন, ‘‘দুর্নীতি ও নৈতিকতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শুধু বক্তৃতা দিয়ে বেড়ালে চলবে না। কাজে দেখাতে হবে। নইলে রাজস্থান অচল করে দেবে কংগ্রেস।’’ তাঁর কথায়, ‘‘কংগ্রেসের দাবি প্রধানমন্ত্রী মেনে নিলে ভাল। নইলে বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাবে কংগ্রেস। এ বার শেষ দেখে ছাড়বে কংগ্রেস।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন