গরু মাতা, ময়ূর ‘আজীবন ব্রহ্মচারী’, বললেন হাইকোর্টের বিচারপতি!

জয়পুরে সরকারি গোশালায় গরুদের অবস্থার অবনতি নিয়ে একটি মামলা হয়েছিল রাজস্থান হাইকোর্টে। বিচারপতি মহেশচন্দ্র শর্মার সিঙ্গল বেঞ্চ এ দিন তাতে ১৪৫ পাতার রায় ঘোষণা করে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৭ ০৪:০৬
Share:

ছিল গরু, চলে এল ময়ূরও।

Advertisement

গবাদি পশু নির্যাতন রুখতে কেন্দ্র যে নতুন বিধির কথা বলেছে, মাদ্রাজ হাইকোর্ট মঙ্গলবার তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। রাজস্থান হাইকোর্ট কিন্তু বুধবার অন্য একটি মামলার সূত্রে বলে দিল, গোহত্যার চেয়ে বড় অপরাধ আর কিছুই নয়। অবিলম্বে গরুকে জাতীয় পশু হিসেবে ঘোষণা করার কথাও বলেছে আদালত।

জয়পুরে সরকারি গোশালায় গরুদের অবস্থার অবনতি নিয়ে একটি মামলা হয়েছিল রাজস্থান হাইকোর্টে। বিচারপতি মহেশচন্দ্র শর্মার সিঙ্গল বেঞ্চ এ দিন তাতে ১৪৫ পাতার রায় ঘোষণা করে। অবসরের আগে বিচারপতি হিসেবে শর্মার এটাই ছিল শেষ দিন। এ দিন তিনি মুক্তকণ্ঠে বলেন, ‘‘এ আমার, আপনার, সকলের আত্মার ডাক। আইনের উৎস তো ধর্ম। উল্টোটা নয়।’’

Advertisement

কী সেই ‘ডাক’? বিচারপতি শর্মার যুক্তি, নেপাল হিন্দু রাষ্ট্র (অতীতে ছিল) হিসেবে অনেক আগেই গরুকে জাতীয় পশু ঘোষণা করেছে। ভারতও কৃষিপ্রধান দেশ এবং এখানে চাষবাস হয় মূলত গবাদি পশুর সাহায্যেই। তাই সংবিধানের ৪৮ ও ৫১এ(জি) ধারা অনুযায়ী গরুকে জাতীয় প্রাণীর আইনি মর্যাদা দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ করা হবে বলেই আশা করেন তিনি।

তবে এ দিনের সবচেয়ে চর্চিত বিষয়টি ঘটে আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি। সাংবাদিকদের কাছেও বিচারপতি শর্মা বলছিলেন, ‘‘গোহত্যার চেয়ে জঘন্য অপরাধ আর কিছুই হতে পারে না। গরু আমাদের মায়ের মতো।’’ তার পরেই চলে আসে ময়ূরের কথা।

কী রকম এবং কেন?

আরও পড়ুন: গরু জাতীয় পশু হোক, কেন্দ্রকে বলল রাজস্থান হাইকোর্ট

গরুর কেন জাতীয় পশুর তকমা পাওয়া উচিত তা বোঝাতে গিয়ে বিচারপতি জাতীয় পাখির কথা তোলেন। এ বার গরু না হয় দুগ্ধদায়িনী গোমাতা, চাষবাসের কাজেও তার অনিবার্য উপস্থিতি। জাতীয় পাখি ময়ূরের মহিমা ঠিক কোথায়? বিচারপতি সেটারই ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলতে থাকেন, ‘‘ময়ূর আজীবন ব্রহ্মচারী থাকে। অশ্রুতেই ময়ূরীর সঙ্গে তার মিলন ঘটে। তাতেই তার সন্তান হয়! ভগবান কৃষ্ণ তাঁর মাথায় ধারণ করেছিলেন ময়ূরের পালক। আর গোমাতার গায়ে ঠেস দিয়ে বাঁশি বাজাতেন তিনি।’’

বিচারপতির মুখ থেকে ব্রহ্মচারী ময়ূরের তত্ত্ব সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় হতে থাকে। নানা জনে নানা মন্তব্য এবং টীপ্পনী কাটতে থাকেন! কেউ বলেন, এ বার তবে বিজ্ঞানের বই নতুন করে লিখতে হবে! ময়ূর-ময়ূরীর অশ্রু-মিলনের কথা শুনে অনেকে মনের মাধুরী মিশিয়ে বলতে শুরু করেন, ‘‘মিলনাকাঙ্ক্ষী ময়ূরীকে ময়ূর নিশ্চয় বলে, পুষ্পা আই হেট টিয়ার্স!’’ টুইটটি দিনভর শেয়ার হতে থাকে দেয়ালে দেয়ালে। লেখক-অভিনেত্রী টুইঙ্কল খন্না বর্তমানে ফ্রান্সে বেড়াতে গিয়েছেন। সেখান থেকেই তিনি টুইট করে বলেন, ‘‘দেশে নেই বলে অনেক মজা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছি!’’ টুইঙ্কল বলিউডের জনপ্রিয় গানটিও মনে করিয়ে দেন— ‘জঙ্গল মে মোর নাচা, কিসি নে না দেখা!’

সেই সঙ্গে অনেকেরই মনে প্রশ্ন, বর্তমান জাতীয় পশু বাঘের মহিমা কি তবে কম পড়িয়াছে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন