লড়াইয়ের ময়দানটা গত কাল তৈরি করেছিল কংগ্রেস। ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির পর মালেগাঁও আর সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণে অভিযুক্তদেরও সাজার দাবি তুলে বিজেপিকে বিঁধতে নেমেছিল তারা। আজ সেই ময়দানে নেমেই কংগ্রেসকে পাল্টা ঘায়েল করতে সচেষ্ট হলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। অভিযোগ করলেন, ‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদ’ আসলে কংগ্রেসেরই তৈরি। ইউপিএ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই লব্জটা চালু করেছিলেন। এমনকী এর জন্য লস্কর-ই-তইবার প্রধান হাফিজ সইদ পর্যন্ত তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
লোকসভায় আজ সুষমা স্বরাজ বিতর্ক-সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে শোরগোল তুলেছিলেন বিরোধীরা। এই সময়ে স্পিকার পঞ্জাবে সাম্প্রতিক জঙ্গি হানা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতির কথা জানালে তাঁরা কিছু ক্ষণের জন্য ক্ষান্ত হন। রাজনাথ তখন বলেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরেই সন্ত্রাস নিয়ে দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে। ২০১৩ সালে লোকসভায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিন্দু সন্ত্রাসবাদের তকমা তৈরি করেছিলেন, যাতে তদন্তের গতিপথ বদলে দেওয়া যায়। যাতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গোটা দেশ পূর্ণশক্তিতে একজোট হতে না পারে। এর জন্য হাফিজ সইদ তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। এর ফলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই দুর্বল হয়ে পড়ে। এমন লজ্জাজনক পরিস্থিতি কখনও তৈরি হতে দেব না। সন্ত্রাসবাদের কোনও জাত, ধর্ম হয় না।’’ নাম না করলেও রাজনাথের এই আক্রমণের লক্ষ্য যে ইউপিএ জমানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। চিদম্বরমের পাশাপাশি মনমোহন সিংহকেও আজ বিঁধেছেন রাজনাথ। বলেছেন, শর্ম-অল-শেখ ও হাভানায় ভারত-পাক শীর্ষ বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে ভারতের অবস্থান ‘লঘু’ করে এসেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী।
অনেকে মনে করছেন, বিহারে বিধানসভা ভোটের আগে ইয়াকুবের ফাঁসি ঘিরে দেশপ্রেমের আবেগ জাগিয়ে তুলতে চাইছে বিজেপি। বোঝাতে চাইছে, ইয়াকুবের ধর্মের সঙ্গে তার সাজার কোনও সম্পর্ক নেই। পক্ষান্তরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আর এক প্রতিনিধি, প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের প্রতি বিজেপি নেতৃত্ব কতটা শ্রদ্ধাবনত, সেই বার্তাও দিতে চাইছে তারা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজধানীর ঔরঙ্গজেব রোডের নাম পাল্টে কালাম রোড রাখার আর্জি জানিয়েছেন বিজেপির দিল্লির সাংসদ মহেশ গিরি। কিন্তু কংগ্রেস গত কাল যে ভাবে সমঝোতা থেকে মালেগাঁও বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ তুলে বিজেপিকে খোঁচা দিয়েছে, তাতে মেরুকরণের রাজনীতির জমিটাও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। যার সদ্ব্যবহার আজ করেছেন রাজনাথ।
লোকসভায় রাজনাথের মুখে তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ‘আপসের রাজনীতির’ অভিযোগ শুনে সরব হন কংগ্রেসের নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে। তিনি পাল্টা দাবি তোলেন, সন্ত্রাস নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করুক বিজেপি। তবে সমঝোতা ও মালেগাঁও বিস্ফোরণ এবং মুম্বই দাঙ্গার অভিযুক্তদের সাজা নিয়ে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসছে না কংগ্রেস। কারণ, সংখ্যালঘু ভোট ও আধুনিক হিন্দু ভোটের দিকে নজর রেখে নিজেদের কৌশল স্থির করেছে তারাও। গত কাল সকালে ইয়াকুবের ফাঁসির পরেই কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ বলেছিলেন, ‘‘দোষীদের ফাঁসিকাঠে চড়াতে সরকার বেনজির ক্ষিপ্রতা দেখাল ঠিকই। কিন্তু মালেগাঁও বা সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণে দোষীদের সাজা দিতে সক্রিয়তা দেখানো হচ্ছে না।’’ সাম্প্রতিক অতীতে দিগ্বিজয় এ ধরনের কোনও মন্তব্য করলে কংগ্রেস সেটিকে দিগ্বিজয়ের ‘ব্যক্তিগত অভিমত’ বলে দায় এড়াত। কিন্তু গত কাল দিগ্বিজয়ের অবস্থানই দলের অবস্থান হয়ে দাঁড়ায়।
কংগ্রেস সূত্রের মতে, সনিয়া গাঁধী এখন হয় এসপার, নয় ওসপারের লড়াইয়ে নেমেছেন। অতীতে এ ধরনের মন্তব্যের আগে সাত-পাঁচ ভাবত কংগ্রেস। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আলাদা। সনিয়ার নির্দেশে শুধুমাত্র কংগ্রেস একার জোরেই সংসদ অচল করে রেখেছে। ফলে নেতারা বলছেন, এখন ঘুরে দাঁড়াতে হলে আর কিছু পরোয়া করার দরকার নেই। তাতে যদি মেরুকরণ হয়, তো হোক।