জাল নোট পাচার রুখতে কড়া রাজনাথ

প্রথমে মালদহ। তার পর হায়দরাবাদ, আগরা ও মুম্বই। নোট বাতিলের পরে তিন মাসও কাটল না, তার আগেই জাল দু’হাজার টাকার নোট উদ্ধার হতে শুরু করেছে নানা জায়গায়। জাল নতুন নোট এখন দেশে কতটা ছড়িয়েছে, তা নিয়ে চিন্তায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:১০
Share:

প্রথমে মালদহ। তার পর হায়দরাবাদ, আগরা ও মুম্বই। নোট বাতিলের পরে তিন মাসও কাটল না, তার আগেই জাল দু’হাজার টাকার নোট উদ্ধার হতে শুরু করেছে নানা জায়গায়। জাল নতুন নোট এখন দেশে কতটা ছড়িয়েছে, তা নিয়ে চিন্তায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। অবিলম্বে জাল নোট চালান রুখতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে স্পষ্ট রূপরেখা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজনাথ। বাংলাদেশের পুলিশকে নতুন ভারতীয় নোট চেনাতে খুব শীঘ্র একটি দলকেও ঢাকা পাঠানো হচ্ছে।

Advertisement

অথচ, দু’হাজার টাকার নতুন নোট বাজারে ছেড়ে নরেন্দ্র মোদী সরকার দাবি করেছিল, এই নোট জাল করা প্রায় দুঃসাধ্য। যদি ভবিষ্যতে জাল হয়ও, রপ্ত হতে অন্তত বছর খানেক সময় লাগবে কারবারিদের। কিন্তু মালদহ থেকে উদ্ধার হওয়া জাল নোট দেখে এনআইএ-এর কপালে ভাঁজ পড়েছে। তারা বলছে, উদ্ধার হওয়া জাল নোটের মান খুবই উন্নত। তবে সেটি টাঁকশালে ছাপা না অফসেটে, তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। এনআইএ-র এক অফিসারের কথায়, ‘‘সব থেকে কঠিন হল কাগজ নকল করা। সেটা কিন্তু করে ফেলেছে পাচারকারীরা।’’ এ ছাড়া নোটে থাকা ওয়াটারমার্ক, অশোক স্তম্ভ, এমনকী নোটের পিছন দিকের দেবনাগরী ভাষাও হুবহু নকল করা রয়েছে। এ ছাড়া দু’হাজারের নোটে যে চন্দ্রযান বা স্বচ্ছ ভারতের লোগো রয়েছে, তাও নকল করেছে পাকিস্তান। গোয়েন্দাদের মতে, অবিলম্বে ব্যবস্থা না-নিলে খুব দ্রুত ওই পার্থক্য মুছে যাবে।

আরও পড়ুন:হাফিজদের শাস্তি নিশ্চিত করতে উদ্যোগী দিল্লি

Advertisement

এই তথ্যে উদ্বিগ্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এক কর্তার কথায়, ‘‘পাকিস্তান তো পাকিস্তানের কাজ করবে। তাদের লক্ষ্যই হল জাল নোট ভারতে ঢুকিয়ে এ দেশের অর্থনীতি দুর্বল করে দেওয়া। কিন্তু মুম্বই থেকে জাল নোট পাওয়ার অর্থই হল বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে ওই নোট সড়ক বা রেল পথে পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছতে পেরেছে।’’ এই দীর্ঘ পথে কেন জাল নোট ধরা পড়েছে না, সেই বিষয়টিও ভাবাচ্ছে মন্ত্রককে। সে কারণে সীমান্তে উপস্থিত বিএসএফকে নকল নোট চেনাতে উদ্যোগী হয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, তেমনি রেল পুলিশকে বিশেষ ভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। জোল নোট রুখতে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির সঙ্গে খুব দ্রুত বৈঠকে বসার চিন্তা-ভাবনাও শুরু করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

সম্প্রতি মালদহ থেকে ওমর ফারুক নামে এক জাল নোট কারবারি গ্রেফতার হয়। ঘটনার তদন্তে নামে এনআইএ। তদন্তে দেখা যায় চক্রের পিছনে যথারীতি সক্রিয় সেই আইএসআই। তবে তাদের এই কাজ পরীক্ষামূলক বলেই দাবি তদন্তকারীদের। দু’হাজারের জাল নোট আসল নোটের সঙ্গে সহজে মিশে যাচ্ছে, না ধরা পড়ে যাচ্ছে— তা এখন খতিয়ে দেখছে আইএসআই। এনআইএ-র এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘জাল নোট ছাপানোর খরচ অনেক। ক্যারিয়র-সহ বিভিন্ন স্তরে বিস্তর টাকাও গুনে দিতে হয়। এত খরচের পরে পাকিস্তান কখনই চাইবে না তাদের তৈরি জাল নোটগুলি অনায়াসে ধরা পড়ে যাক।’’ তাই পাকিস্তানের টাঁকশালগুলিতে বেশি মাত্রায় উৎপাদন শুরুর আগে অল্প কিছু নোট বাজারে ছেড়ে সমীক্ষা করে নিতে চাইছে আইএসআই। তাঁর কথায়, ‘‘এ-ও এক ধরনের মার্কেট সার্ভে!’’

নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে কেন্দ্রীয় স্বারষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু দাবি করেছিলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে পাকিস্তানের ছাপাখানাগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এনআইএ-র এক তদন্তকারী এখন বলছেন, ‘‘তিন মাসের মধ্যেই বোধ হয় সেই লকআউট উঠে গিয়েছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন