টেগোর হিল সংস্কারে উদ্যোগী হল সরকার

দীর্ঘ দিন ধরে অবহেলিত রাঁচির ‘টেগোর হিল’ সংস্কারে অবশেষে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। রবীন্দ্রনাথের ‘জ্যোতিদাদা’ তথা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত এই টেগোর হিল। রাজ্য পর্যটন দফতরের ডিরেক্টর সুচিত্রা সিনহা জানিয়েছেন, ‘‘টেগোর হিল কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেই সংস্কারের কাজ শুরু হবে।’’

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচি শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০৬
Share:

দীর্ঘ দিন ধরে অবহেলিত রাঁচির ‘টেগোর হিল’ সংস্কারে অবশেষে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। রবীন্দ্রনাথের ‘জ্যোতিদাদা’ তথা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত এই টেগোর হিল। রাজ্য পর্যটন দফতরের ডিরেক্টর সুচিত্রা সিনহা জানিয়েছেন, ‘‘টেগোর হিল কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেই সংস্কারের কাজ শুরু হবে।’’

Advertisement

রাঁচির মোরাবাদি এলাকার শ’তিনেক ফুট উঁচু এই টিলা মোরাবাদি পাহাড় নামেই পরিচিত ছিল। ১৯০৮ সালে কলকাতা ছেড়ে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ এই টিলার উপরে বাড়ি তৈরি করে থাকতে শুরু করেন। ১৯২৫ সালের ৪ মার্চ এখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অনুষঙ্গেই পাহাড়টি ক্রমশ লোকমুখে টেগোর হিল হিসেবে পরিচিতি পায়। এই পাহাড়ের উপরেই তিনি তৈরি করেন ‘শান্তিধাম’। উপাসনার জন্য পাহাড় চূড়ায় তৈরি করেন ব্রহ্মমন্দির। একটি কুসুম গাছের নীচে রয়েছে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের তৈরি একটি বসার বেদি ‘কুসুমতল’।

কিন্তু টেগোর হিল জুড়েই এখন উপেক্ষা, অবহেলার ছাপ। দিনের বেলায় রাঁচির এক দল প্রেমিক-প্রেমিকার ঠিকানা, আর রাতে দুষ্কৃতী, মদ্যপদের আড্ডা। শহরের বাসিন্দারা কেউই সন্ধ্যার পর টেগোর হিল চত্বরে থাকেন না মূলত দুষ্কৃতীদের ভয়ে। আজ দুপুরে ব্রহ্মমন্দিরের উপরে উঠে দেখা গেল সেখানে চলছে জন্মদিনের অনুষ্ঠান। স্থানীয় কয়েকজন তরুণ-তরুণী কেক কেটে তাঁদেরই এক বন্ধুর জন্মদিন পালন করছেন। আর কুসুমতলের বেদিতে বসে তাস পেটাচ্ছেন কয়েকজন। শুধু কুসমতল বা উপাসনা গৃহই নয়, পাহাড়ের উপর জ্যোতি ঠাকুরের প্রিয় শান্তিধামের অবস্থাও শোচনীয়।

Advertisement

সুচিত্রা সিনহার কথায়, ‘‘আমরা টেগোর হিলের এই অবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে চলেছি। রাঁচিতে এলে পর্যটকদের কাছে এই টেগোর হিলই হবে অন্যতম আকর্ষণ। বেড়ানোর জায়গা।’’ বাঙালি পর্যটকদের কথা ভেবে টেগোর হিল সম্পর্কে নানা তথ্য বাংলাতেও লিখে রাখা হবে। কী ভাবে সেজে উঠবে টেগোর হিল? সুচিত্রা দেবী জানান, প্রথমে টেগোর হিলের পাঁচটি দর্শনীয় জায়গা—শান্তিধাম, উপাসনা তথা ব্রহ্মমন্দির, কুসুমতল, জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সমাধিবেদি ও একটি গুহার সংস্কার করা হবে। সিঁড়ি দিয়ে পাহাড়ে ওঠার সময় জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নানা ভঙ্গিমার মূর্তি ছাড়াও থাকবে ঠাকুর পরিবার সম্পর্কিত নানা তথ্য। জ্যোতিদাদার সঙ্গে তাঁর ১২ বছরের ছোট ভাই রবি ঠাকুরের সম্পর্কের নানা দিকও ছবি ও লেখায় ফুটিয়ে তোলা হবে।

টেগোর হিল কমিটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট অজয় কুমার জৈন বলছেন, ‘‘সংস্কার হোক, কোনও ক্ষতি নেই। কিন্তু দেখতে হবে সংস্কার করতে গিয়ে টেগোর হিলকে যেন পর্যটন দফতর পার্ক বা রক গার্ডেন বানিয়ে না ফেলে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ এখানে আশ্রমিক পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। সেই পরিবেশ যেন হারিয়ে না যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন