এই প্রথম সংসদে দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রী কেন্দ্রের বিরুদ্ধেই সরব হলেন।
এই প্রথম মোদী সরকারের দুই মন্ত্রী লোকসভায় প্রায় হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছে গেলেন।
এই প্রথম শরিক দলের প্রকাশ্য শাসানিতে পিছু হটতে দেখা গেল মোদী সরকারকে।
আর এই সবই ঘটল শিবসেনার ‘চপ্পলবাজ’ সাংসদ রবীন্দ্র গায়কোয়াড়কে ঘিরে। আজ তিনি হাজির হন লোকসভায়। উদ্ধব ঠাকরের পরামর্শে এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীর উপরে চড়াও হওয়ার জন্য সংসদের কাছে ক্ষমা চান তিনি। কিন্তু জানিয়ে দেন এয়ার ইন্ডিয়ার কাছে ক্ষমা চাইবেন না। তাঁর অভিযোগ, এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মচারীর দুর্ব্যবহারেই রেগে গিয়ে আক্রমণাত্মক হয়েছিলেন। তবে বিবৃতিতে চপ্পল মারার ঘটনাটি বেমালুম এড়িয়ে যান। ক্ষমা চাওয়ার পর সরকারও মিটমাট করে গায়কোয়াড়ের ফের বিমানে ওঠার ব্যবস্থা করে দেবে বলে প্রত্যাশা ছিল শিবসেনার। কিন্তু এনডিএ-র আর এক শরিক তেলুগু দেশমের নেতা বিমানমন্ত্রী অশোক গজপতি রাজু বলে দেন, ‘‘যাত্রী সুরক্ষাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’’ মীমাংসা সূত্র না পেয়ে তেড়েফুঁড়ে ওঠেন মোদী সরকারের শিবসেনা মন্ত্রী অনন্ত গীতে। হুঁশিয়ারি দেন, কাল থেকে মুম্বই থেকে আর বিমান উড়বে না। শিবসেনার পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোন আইনে সাংসদের বিমানে ওঠা বন্ধ হয়েছে তা স্পষ্ট করুন বিমানমন্ত্রী।’’
স্পিকার সভা মুলতুবি করেন। কিন্তু রাজুকে ঘিরে মারমুখী হন শিবসেনার সাংসদেরা। তাঁকে বাঁচাতে আসেন রাজনাথ সিংহ, স্মৃতি ইরানি। পরে স্পিকার রাজনাথ, রাজু, শিবসেনাকে নিয়ে মধ্যস্থতায় বসেন। সংসদ ভবনেই রাজু আলাদা বৈঠকে করেন শিবসেনা দফতরে গিয়ে। এত দিন অনড় থেকেও শিবসেনার চাপে পিছু হটে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়, চপ্পলবাজ সাংসদের বিরুদ্ধে ‘হত্যার চেষ্টা’র মামলা আদালতের মাধ্যমে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করবে দিল্লি পুলিশ। বিমান সংস্থাগুলি ঘরোয়া ভাবে সাংসদের বিমানযাত্রায় যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তা ঘরোয়া ভাবেই তুলে নেওয়া হবে। সাংসদকে সে জন্য একটি ক্ষমাপত্র দিতে হবে। যেটি বিকেলের মধ্যে আদায় করে নেওয়া হয়। এরপর গোটা ঘটনায় ইতি টানা সম্ভব হবে বলেই আশা করছে দু’পক্ষ। শিবসেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত অবশ্য হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রাজনাথ সিংহের মতো শীর্ষ নেতার উপর ভরসা রয়েছে। চার দিনের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে এনডিএ-র বৈঠকে থাকবে না শিবসেনা। এটাই উদ্ধবের রায়। সরকারি সূত্রে খবর, গায়কোয়াড় এখন এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিট কাটতে পারেন বলে রাতে বিমান মন্ত্রকের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু আজ যে ভাবে সরকারের দুই মন্ত্রী প্রকাশ্য কোন্দলে জড়ালেন, প্রথম বার অনন্ত গীতে মোদী সরকারের সদস্য হিসাবে ‘লজ্জাবোধ’ করছেন বলে সংসদে সরব হলেন-তা মোদী জমানায় বেনজির। মোদী আজ দিল্লির বাইরে ছিলেন। রাজনাথের উপরে ভরসা আছে বলে শিবসেনা পরোক্ষে মোদীর উপরে অনাস্থা প্রকাশ করেছে বলেও মত বিজেপির অনেকের। উদ্ধবের প্রকাশ্য হুঁশিয়ারিতে এ ভাবে বিজেপির পিছু হটাও দলের অনেকের না-পসন্দ।