রেলস্টেশনগুলি পরিবহণের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ভারতের কলকাতা, দিল্লি এবং মুম্বইয়ের মতো মেট্রো শহরের রেলস্টেশনগুলিতে প্রতি দিন যাত্রীদের ভিড় লেগেই থাকে।
ভারতে প্রতি দিন ১৩ হাজারেরও বেশি ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে শতাব্দী এবং রাজধানীর মতো দূরপাল্লার ট্রেন যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে অসংখ্য লোকাল ট্রেন।
ভারতে ২৪টি কোচ বিশিষ্ট একটি ট্রেনে সাধারণত ১,২০০ থেকে ১,৪০০ যাত্রী পরিবহণ করেন। উৎসবের মরসুমে সেই সংখ্যা বেড়ে যায়। সাধারণ এবং স্লিপার কোচগুলিতে ভিড় হয় বেশি।
ভারতীয় রেলে কেমন ভিড় হয় তা বোঝার জন্য বেশি দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। চট করে এক বার শিয়ালদহ বা হাওড়া স্টেশনে ঢুঁ মেরে এলেই হবে।
কিন্তু জানা আছে কি যে, বিশ্বের ব্যস্ততম রেলস্টেশনকে হিসাবে বিবেচিত হয় কোন স্টেশন? না, সেই স্টেশন ভারতে নেই। রয়েছে ‘উদীয়মান সূর্যের দেশ’ জাপানে।
জাপানের রাজধানী টোকিয়োয় অবস্থিত শিনজ়ুকু স্টেশন বিশ্বের ব্যস্ততম রেলস্টেশন হিসাবে স্বীকৃত। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও নাম তুলেছে স্টেশনটি।
হিসাব অনুযায়ী, প্রতি দিন ৩০ লক্ষেরও বেশি যাত্রীর পা পড়ে শিনজ়ুকু স্টেশনে। বছরে সেই সংখ্যা ১০০ কোটির বেশি।
শুনলে অবাক লাগবে যে, শিনজুকু স্টেশনে মোট ৩৬টি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। সকাল থেকে রাত— প্রতিটি মুহূর্তে ভিড়ে ঠাসা থাকে সেই প্ল্যাটফর্মগুলি। তবে সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থাও রয়েছে স্টেশনটিতে।
শিনজ়ুকু স্টেশন একটি সাধারণ জংশনের চেয়ে আয়তনে অনেক বড়। স্টেশনের ভিতরে রয়েছে অজস্র দোকানপাট। খাবারের দোকানগুলিতেও ভিড় জমা থাকে সব সময়। ওই স্টেশনে প্রবেশ করলে মনে হবে যেন ছোট কোনও শহরে এসে পড়েছেন।
যাত্রীদের সুবিধার জন্য শিনজ়ুকু স্টেশনে বেশ কয়েকটি শপিং সেন্টার, ডিপার্টমেন্ট স্টোর, ভূগর্ভস্থ প্যাসেজ রয়েছে। একটি বাগানও রয়েছে স্টেশনের অন্দরে। সেই বাগানের নাম ‘গিওয়েন গার্ডেন’।
শিনজ়ুকু স্টেশনের পূর্ব এবং পশ্চিম দিকের প্রস্থান গেটগুলিতে একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। পূর্ব দিকের গেট অনেক শান্ত। নিত্যযাত্রীদের ভিড় সে দিকে কম।
অন্য দিকে, পশ্চিম প্রান্তের প্রস্থানপথ সব সময় ব্যস্ত। সে দিকে একাধিক সংস্থার অফিস থাকার কারণে নিত্যযাত্রীদের ভিড় অনেক বেশি।
শিনজ়ুকু স্টেশনের কাছে বেশ কিছু আকর্ষণীয় জায়গাও রয়েছে। আর সে কারণেও নিত্য দিন পর্যটকদের ভিড় লাগে সেখানে। শিনজ়ুকু স্টেশনের কাছেই রয়েছে ‘টোকিয়ো মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট বিল্ডিং অবজ়ারভেটরি’, যা স্টেশন থেকে ১০ মিনিটের হাঁটা পথ। মেঘমুক্ত দিনে স্টেশনের কাছের কয়েকটি জায়গা থেকে মাউন্ট ফুজ়ি দেখতে পাওযা যায়।
শিনজ়ুকু স্টেশনের সামনে আর একটি উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ হল কাবুকিচো। কাবুকিচো একটি প্রাণবন্ত পর্যটনকেন্দ্র যেখানে বিভিন্ন রেস্তরাঁ এবং বিনোদনের সুযোগ রয়েছে। বার, ক্লাব, কারাওকে এবং সিনেমাহল রয়েছে সেখানে। মূলত যুব সমাজের ভিড়ই বেশি জমে কাবুকিচোতে।