যোজনা কমিশনে কোপ পড়েছে আগেই। এ বার কি তা হলে ‘ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অফিস’ বা এনএসএসও-র পালা? কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি এনএসএসও-র রিপোর্ট প্রকাশ না-করায় এই প্রশ্ন উঠেছিল। সেই প্রশ্নকেই আরও জোরালো করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের একটি সাক্ষাৎকার।
সর্বভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রবিশঙ্করের দাবি, তাঁরা এনএসএসও-র মতো সংস্থাকে ঢেলে সাজাবেন। তাঁর অভিযোগ, ওই সংস্থার তথ্য ও পরিসংখ্যান ঠিক নয়। কারণ, ওই সংস্থায় বামপন্থী ও মোদী-বিরোধী লোকজন রয়েছেন।
অনেকেই বলছেন, এই ঢেলে সাজানোর অর্থ কী হতে পারে, সেটা যোজনা কমিশনের ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছিল। দেশের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে যোজনা কমিশন বাতিল করে তৈরি হয়েছিল নীতি আয়োগ। কিন্তু গত পাঁচ বছরে নীতি আয়োগ কী করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে। এমনও অভিযোগ রয়েছে যে, এই ধরনের সংস্থাকে কার্যত সরকার নিয়ন্ত্রিত এবং আমলাতান্ত্রিক করে দেওয়া হয়েছে। এনএসএসও-র সঙ্গে যুক্ত অনেকেরই আশঙ্কা, এই ঢেলে সাজানোর নামে সংস্থাকে কার্যত কর্মহীন, অকেজো করে দেওয়া হবে।
দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমীক্ষায় পাওয়া তথ্য ও পরিসংখ্যান বিশ্লেষণের কাজ করে সার্ভে ডিজাইন এবং রিসার্চ ডিভিশন। এই শাখা দফতরটি কলকাতায় অবস্থিত। পরিসংখ্যান মন্ত্রকের এক প্রাক্তন কর্তা জানান, দেশের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (যা পরিসংখ্যানবিদ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের জন্য ‘মহলানবীশ পরিকল্পনা’ নামেও পরিচিত)-র আগেই এই শাখাটি তৈরি করা হয়। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত এটি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরে তা সরকারি দফতরের হাতে যায়। দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিকল্পনা নির্ধারণ ও রূপায়ণে এই সংস্থার সমীক্ষা ও রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এই সংস্থার তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ-পদ্ধতি আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পেয়েছে। ‘‘নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অ্যাগনাস ডিটনের গবেষণার অনেকটাই এনএসএসও-র পরিসংখ্যানের উপরে নির্ভরশীল। দেশ-বিদেশের বহু নামী সমাজবিজ্ঞানী এই তথ্য নিয়েই গবেষণা করেন,’’ মন্তব্য ওই প্রাক্তন কর্তার।
অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের বক্তব্য, এনএসএসও-র মতো নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান এ দেশে আর দু’টি নেই। দেশের বেকারত্বের হার বুঝতে হলে ওদের তথ্যই হাতিয়ার। ‘‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ওদের নেই। বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এনএসএসও-র রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি,’’ বলেন অভিরূপবাবু। তাঁর মতে, এনএসএসও সারা বছর ধরে তথ্য সংগ্রহ করে। সেই পরিকাঠামো তৈরি করা সহজ নয়। নীতি আয়োগের তেমন কোনও পরিকাঠামোই নেই।
এনএসএসও-র যে-রিপোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার কার্যত বাতিল করেছে, সেটি তৈরির সঙ্গে যুক্ত এক কর্তার দাবি, ওই রিপোর্টে কোনও জল মেশানো হয়নি। এই সংস্থায় তথ্যবিকৃতির সুযোগ নেই। আর সংখ্যাকে রাজনীতি দিয়ে বদল করাও সম্ভব নয়। ‘‘ফলে রিপোর্ট কোনও ভাবে বিকৃত করা হয়েছে, এ কথা বলা যাবে না,’’ মন্তব্য ওই কর্তার। তাঁর বক্তব্য, দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এক জটিল আকার নিচ্ছে। দারিদ্র, বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ অর্থনীতির সেই ‘করুণ’ কথাই কার্যত উঠে এসেছিল সমীক্ষা রিপোর্টে।