রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ‘উর্জিত পটেল কাঁহা হ্যায়?’ প্রশ্ন আসছে ধেয়ে

সুযোগ পেলেই প্রশ্নটা ভাসিয়ে দিচ্ছেন কংগ্রেসের নেতারা। উর্জিত পটেল কাঁহা হ্যায়? রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের সত্যিই দেখা নেই!

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৪
Share:

সুযোগ পেলেই প্রশ্নটা ভাসিয়ে দিচ্ছেন কংগ্রেসের নেতারা। উর্জিত পটেল কাঁহা হ্যায়?

Advertisement

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের সত্যিই দেখা নেই! সেই ৮ নভেম্বর রাতে নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে যে বক্তৃতা দিলেন, তার পরে দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন উর্জিত। সেই ইস্তক তিনি নিরুদ্দেশ।

এর মধ্যে নোট-ভোগান্তি কমাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রায় রোজই কিছু না কিছু ঘোষণা করছে। সবই আর্থিক বিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাসের মুখ দিয়ে। অনেকে মজা করে বলছেন, বাড়ির দিদিমা-ঠাকুমারাও সাদা চুলের ওড়িয়া আমলাটিকে চিনে গিয়েছেন। অথচ এ হেন গুরুত্বপূর্ণ সময়েও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের মুখটি দেখা যাচ্ছে না! কেন?

Advertisement

সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা— উর্জিত এমনিতে প্রকাশ্যে আসা পছন্দ করেন না, পূর্বসূরি রঘুরাম রাজনের মতো। উপরন্তু এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়ার পুরোটা তিনি নিজের হাতে সামলাচ্ছেন। সব রণকৌশল তিনিই রচনা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর ডাকে মুম্বই থেকে দিল্লিতে এসে গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠকও করছেন।

‘‘আর এমতাবস্থায় গভর্নরকে মুখপাত্র হিসেবে হাজির করলে সব প্রশ্ন তো ওঁর দিকেই ধেয়ে আসবে। উনিই সবার নজরের কেন্দ্রে চলে আসবেন।’’— যুক্তি দিচ্ছেন এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘রাজনৈতিক দলেও যাঁরা রণকৌশল তৈরি করেন, তাঁরা দলের মুখপাত্র হিসেবে হাজির হন না।’’ অন্য দিকে আপাতত যিনি সরকারের ‘মুখপাত্রের’ ভূমিকায়, সেই শক্তিকান্তর বক্তব্য, ‘‘যা সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কে জানাচ্ছেন, সেটা অপ্রাসঙ্গিক। আমিও ব্যক্তিগত ভাবে কোনও ঘোষণা করছি না। সরকারের হয়েই সব জানাচ্ছি।’’

বিরোধীরা অবশ্য সন্তুষ্ট নন। কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন, পুরনো নোট বাতিল করা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক্তিয়ার। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তেমন সিদ্ধান্ত নিলে গভর্নর হিসেবে উর্জিত পটেল তা ঘোষণা করবেন। নরেন্দ্র মোদী করলেন কেন? এটা করে মোদী রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আইন ভেঙেছেন বলেও তাঁর অভিযোগ। কংগ্রেস নেতারা এ-ও বোঝাতে চাইছেন, মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে গভর্নরের সায়ই ছিল না। তাই তিনি প্রকাশ্যে এসে সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি খাড়া করতেও রাজি নন।

উর্জিতের না হয় ‘সায় ছিল না।’ কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম সিদ্ধান্তটির কথা আগে

আদৌ জানতেনই না বলে দাবি করেছেন কংগ্রেসের উপ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও তা-ই বলছেন। ওঁর কথায়, ‘‘অর্থমন্ত্রী জানলে তাঁর মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টাও জানতেন। উপদেষ্টার নীরবতাতেই স্পষ্ট, উনি অন্ধকারে ছিলেন।’’

বাস্তবিকই সুব্রহ্মণ্যমের মুখে কুলুপ। অথচ এ যাবৎ সরকারের যে কোনও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করতে ও তার সমর্থনে যুক্তি সাজাতে মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টাকেই মাঠে নামানো হয়েছে। কিন্তু এ বার ওঁর দফতর থেকে সটান জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে উপদেষ্টা কথা বলবেন না। কারণ, নোট বাতিলের ব্যাপারটা তাঁর বিষয় নয়।

ঘটনা হল, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিফিল, একদা হার্ভার্ডের অর্থনীতির শিক্ষক ‘ডিমনিটাইজেশন’ সম্পর্কে কিছুই জানেন না— এমন তত্ত্ব কারও কাছে বিশ্বাসযোগ্য ঠেকছে না। শুধু তা-ই নয়, নর্থ ব্লকে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে খোদ অর্থসচিব অশোক লাভাসাও আগাম অবহিত ছিলেন না। তাই তিনিও নীরব। পাশাপাশি রটনা, এখন যিনি নিয়মিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে বৈঠক করছেন, সেই

আর্থিক পরিষেবা সচিব অঞ্জলি চিব দুগ্গলকেও আগেভাগে কিছু জানানো হয়নি। তাই ওঁকে প্রশ্ন করলেই জবাব মিলছে, ‘শ্রী শক্তিকান্ত দাসকে জিজ্ঞাসা করুন।’’

এ হেন পরিস্থিতিতে আড়ালে থেকেও বিস্তর চাপের মুখে রয়েছেন আরবিআই গভর্নর। অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশনের উপ-সভাপতি ফ্র্যাঙ্কো চলতি ‘অব্যবস্থা’র জন্য তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘ লাইন সামলাতে ব্যাঙ্ককর্মীদের উপরে প্রবল চাপ পড়ছে। কনফেডারেশনের হিসেবে, নোট বাতিলের ঘোষণার পরে এ পর্যন্ত ১১ জন ব্যাঙ্ক অফিসার কাজের চাপে অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন।

‘‘এর জন্য আরবিআই গভর্নরই দায়ী।’’— তোপ দেগেছেন ফ্র্যাঙ্কোরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন