National News

আগরতলায় গেরুয়া আবির ১০০ টাকা, লাল ৪০

জানতে চেয়েছিলাম আবিরের বাজার কেমন? আর তাতেই যে ‘গন্ধটা কেমন সন্দেহজনক’ বলে মনে হবে আগে কে বা জানত? গেরুয়া আবির বিকোচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। আর লাল আবির? ৪০ টাকা! দামের এই ফারাক কেন? এটা কি কোনও ইঙ্গিতবাহী?

Advertisement

তাপস সিংহ

আগরতলা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৮ ২২:১৫
Share:

রং দে তু মোহে গেরুয়া!

Advertisement

হোলির সন্ধ্যায় আগরতলা শহরের মহারাজগঞ্জ বাজারে পা দেওয়ার পরে তো গানের এই কলিই মনে এল! সারা দিন রঙিন হয়ে শুক্রবারের সন্ধ্যায় এ শহর প্রায় ঝিমোচ্ছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা। দোকানপাট খোলা থাকলেও শহরের উষ্ণতা যেন কিছুটা কম। আর তারই মধ্যে আগরতলার প্রধান বাজার মহারাজগঞ্জ তো বাজার গরম করে দিল!

জানতে চেয়েছিলাম আবিরের বাজার কেমন? আর তাতেই যে ‘গন্ধটা কেমন সন্দেহজনক’ বলে মনে হবে আগে কে বা জানত? গেরুয়া আবির বিকোচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। আর লাল আবির? ৪০ টাকা! দামের এই ফারাক কেন? এটা কি কোনও ইঙ্গিতবাহী? ব্যবসায়ী শেখর দেব অবশ্য সরাসরি এ প্রশ্নের উত্তর দেননি। বরং জানিয়েছেন, ‘‘মনে হয়, গেরুয়া আবিরের সাপ্লাই একটু কম আছে। তাই দামটা এ বার একটু বেশি।’’

Advertisement

একটু বেশি? কোথায় ৪০ টাকা আর কোথায় ১০০ টাকা! তা হলে কি লাল আবিরের সাপ্লাই এ বার প্রচণ্ড বেশি? শেখরবাবু বলেন, ‘‘অন্যান্য বার লাল আবির যেমন বিক্রি করি এ বারেও তা-ই করেছি। এর দাম কম কেন বলতে পারব না।’’

শুধু তিনিই নন, মহারাজগঞ্জ বাজার বা গোলবাজারের অনেক আবির বিক্রেতাই জানালেন, গেরুয়া আবিরের দাম এ বার বেশ বেশি। শেখরবাবুর কাছে ১০০ টাকা কিলোয় গেরুয়া আবির মিললেও আর এক ব্যবসায়ী অজিত দেবের কাছে আবার ‘সুপার কোয়ালিটি’ গেরুয়া আবির পেতে গাঁটের কড়ি খসাতে হবে অনেক বেশি। সেখানে গেরুয়া আবির ২২০ টাকা কিলো। আর লাল আবির? সে-ও ‘ভাল কোয়ালিটি’র। কিন্তু দামে অনেক পিছিয়ে। ‘‘আপনি এক কিলো নেন। ৭০ টাকায় দিয়ে দেব।’’ কিন্তু কেন এত বেশি দাম? এর উত্তর প্রবীণ ব্যবসায়ী অজিতবাবুরও ‘জানা নেই’। শুধু বলেন, ‘‘কেন এ বার বেশি, জানি না। বোধহয় সাপ্লাই কম।’’

আরও পড়ুন
সিপিএম বলছে ফিরছি, বিজেপি বলছে আসছি

হয়তো বা এ ছবি নিছকই প্রতীকী। সত্যিই হয়তো ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগের সন্ধ্যায় আবিরের দামের বাড়া-কমার সঙ্গে বাস্তবের কোনওই মিল নেই। তবু, ত্রিপুরার বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশের তিন দিনের মধ্যেই আবিরের বাজারদর ফাগুয়ার বাতাসে উত্তাপ ছড়িয়ে দিল।

গত কাল ছিল দোল আর আজ হোলি। তার পরেও বিরাট মহারাজগঞ্জ বাজারের আবিরের দোকানগুলি কিন্তু খোলা। আবির বিক্রেতারা জানাতে ভুলছেন না, শনিবার, ভোটগণনার দিন তাঁরা সকাল সকালই দোকান খুলবেন। অনেকে কি ‘স্টক’ করে রেখেছেন আবির? বিক্রেতারা কিন্তু বলছেন, ভোটগণনার প্রবণতাই পাল্টে দেবে আবিরের রং। অর্থাৎ, বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ফলাফল যত বাইরে আসবে, ততই পাইকারি ব্যবসাদার ও খুচরো বিক্রেতাদের ‘স্টক’ পাল্টাতে থাকবে।

আরও পড়ুন
ত্রিপুরায় বাম-জয়ে খুশি ‘হতেন’ মমতা

তাই বলে কি আবিরের ভাঁড়ার বাড়ন্ত থাকবে? আগরতলা শহরের মেলার মাঠের পাশে সিপিএমের রাজ্য দফতরে বসে এক কর্মী জানালেন, এখান থেকে লাল আবির ওড়ানো হবে না। যা করার পার্টির লোকাল কমিটিগুলি করে, স্থানীয় স্তরে বিজয়োল্লাসের জন্য আবির সংগ্রহ করাই আছে।

যদিও সিপিএম রাজ্য দফতরে এ দিন শোকের আবহাওয়া। এ দিন সকালে দিল্লিতে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী খগেন্দ্র জমাতিয়ার। তিনি এ বারেও কৃষ্ণপুর (সংরক্ষিত) কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী ছিলেন। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি ওই কেন্দ্র থেকেই লাগাতার নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এ দিন সন্ধ্যায় রাজ্য দফতরে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাশ-সহ দলের অন্য নেতারা।

গণনার ঠিক আগের দিনও তাল ঠুকছে যুযুধান দু’পক্ষই। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর বলছেন, ‘‘এতে কোনও সন্দেহ নেই যে ত্রিপুরায় অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গঠন হচ্ছে। রাজ্যে শান্তি ও উন্নয়নের জন্যই ত্রিপুরার মানুষ বামফ্রন্টকে ভোট দিয়েছেন।’’ পাশাপাশি, বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব বলেন, ‘‘মানুষ পরিবর্তন চান। ত্রিপুরার মানুষ চান, এখানে বিজেপি সরকার আসুক। নিশ্চিত ভাবেই বিজেপি ত্রিপুরায় পরবর্তী সরকার গঠন করবে।’’

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। চাপা, অথচ টানটান উত্তেজনায় কাঁপছে উত্তর-পূর্বের এই ছোট্ট রাজ্য। কারণ, সে জানে গোটা দেশ এই মুহূর্তে তার দিকে তাকিয়ে।

মহারাজগঞ্জের বাজারে আবিরের দামের এই ফারাক প্রতীকী না কি ঘোর বাস্তবের ইঙ্গিতবাহী, সে উত্তর পেতেও আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন