আরও সঙ্কটজনক সিয়াচেন থেকে উদ্ধার হওয়া শারীরিক অবস্থা। দিল্লির সেনা হাসপাতাল থেকে প্রকাশিত মেডিক্যাল বুলেটিনে জানানো হয়েছে, হনুমন্থাপ্পার মস্তিষ্কে অক্সিজেনের দীর্ঘ অভাবজনিত ক্ষতির চিহ্ন ধরা পড়েছে। কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। দেশজুড়ে এখনও প্রার্থনা চলছে মৃত্যুর সঙ্গে যুঝতে থাকা সৈনিকের আরোগ্য কামনা করে।
সেনা হাসপাতালের চিকিৎসকদের পাশাপাশি এইমস থেকেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাঠানো হয়েছে হনুমন্থাপ্পা কোপ্পড়ের চিকিৎসার জন্য। মেডিক্যাল বোর্ড সারা দিন পর্যবেক্ষণে রেখেছে ভেন্টিলেশনে থাকা হনুমন্থাপ্পার শারীরিক অবস্থা। কিন্তু বুধবার বিকেলে সেনার তরফে প্রকাশিত মেডিক্যাল বুলেটিন থেকে বোঝা যাচ্ছে, চিকিৎসায় খুব একটা সাড়া দেননি সিয়াচেন থেকে উদ্ধার হওয়া জওয়ান। সিটি স্ক্যান থেকে জানা গিয়েছে, তাঁর সঙ্গে মস্তিষ্কে দীর্ঘক্ষণ অক্সিজেন পৌঁছয়নি। ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলির মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। কিডনি ও লিভার-সহ যে সব অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল, অনেক চেষ্টাতেও সেগুলি সচল করা যায়নি। সেনাকর্মীর শারীরিক অবস্থা আগের চেয়েও সঙ্কটজনক হয়ে উঠেছে বলেও মেডিক্যাল বুলেটিনে জানানো হয়েছে।
সিয়াচেনে ১৯৬০০ ফুট উচ্চতায় সেনা ছাউনির উপর ভেঙে পড়েছিল এক কিলোমিটার লম্বা ৮০০ মিটার উঁচু বরফের দেওয়াল। ১০ জন সেই তুষারধসের নিচে চাপা পড়েন। শুধু হনুমন্থাপ্পাকেই জীবিত উদ্ধার করা গিয়েছে। বরফের আস্তরণের ২৫ ফুট নিচে চাপা পড়ে যাওয়া সত্ত্বেও হনুমন্থাপ্পা বেঁচে গিয়েছেন এয়ার পকেটের জন্য। বলছেন, উদ্ধারকারী দলের সদস্য এবং চিকিৎসকরা। তাঁবু সমেত বরফের নিচে চাপা পড়েছিলেন হনুমন্থাপ্পা। ধসে আসা বরফের দেওয়াল ছ’দিন ধরে জমতে জমতে পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ ধসে আসার বরফের স্রোতের নিচে কোথাও কোথাও হাওয়া থেকে গিয়েছিল। সেই হাওয়া বাইরে বেরতে না পারায় ধসের নিচে কোথাও কোথাও তৈরি হয়েচিল এয়ার পকেট। তাঁবু-সহ বরফে চাপা পড়া হনুমন্থাপ্পা কোপ্পড়কে ঘিরেও তৈরি হয়েছিল এমনই একটি এয়ার পকেট। ফলে জমে পাথর হয়ে যাওয়া বরফের আস্তরণ খুব বেশি চাপ দেয়নি হনুমন্থাপ্পার শরীরে।
আরও পড়ুন:
সিয়াচেন ভয় পাইয়ে দেবে আপনাকে, তবু অতন্দ্র প্রহরায় সেনা
এই এয়ার পকেট তৈরি হওয়া তো মিরাকল বটেই। চিকিৎসকরা বলছেন, বরফের উপরেই যেখানে মাইনাস ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যায় তাপমাত্রা, সেখানে বরফের নিচে ৬ দিন ধরে কোনও খাদ্য-পানীয় এবং অক্সিজেন সরবরাহ ছাড়া বেঁচে থাকাও আর এক মিরাকল।
যখন বরফের তলা থেকে ওই ল্যান্সনায়েককে উদ্ধার করা হয়, তখন তাঁর নাড়ির গতি খুব ক্ষীণ ছিল। তিনি আচ্ছন্ন ছিলেন। লিভার এবং কিডনি কাজ করা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল। শিরায় শিরায় রক্ত ক্রমশ জমাট বাঁধার পরিস্থিতি তৈরি হতে শুরু করেছিল। ফলে কমে এসেছিল রক্ত সঞ্চালন। হনুমন্থাপ্পার শরীর বরপের মতো ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। উদ্ধারের পরই তাঁকে হেলিকপ্টারে দ্রুত দিল্লি পাঠানো হয়। হঠাৎ প্রবল ঠান্ডা থেকে বাইরে নিয়ে এসে তাপ দেওয়া শুরু হয় শরীরে। হাসপাতালে পৌঁছনোর পর রি-ওয়ার্মিং অ্যান্ড এসটাব্লিশমেন্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু হয়। চরম ঠান্ডা থেকে উদ্ধারের কিছুক্ষণের মধ্যেই সম্পূর্ণ বিপরীত পরিস্থিতিতে পড়ায় উদ্ধার্র হওয়া সেনাকর্মীর শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। অর্থাৎ প্রচণ্ড ঠান্ডা হয়ে যাওয়া শরীরকে গরম করে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে গিয়ে অন্যান্য কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু এ ছাড়া অন্য কোনও পথও ছিল না চিকিৎসকদের সামনে। সব সঙ্কটের মোকাবিলা করে ল্যান্সনায়েক হনুমন্থাপ্পা কোপ্পড়কে জীবনে ফেরানো সম্ভব হয় কি না, তা ৪৮ ঘণ্টার আগে স্পষ্ট হবে না। উৎকণ্ঠার প্রহর কাটাচ্ছে গোটা দেশ।