Budget

কৃষিক্ষেত্রে কিছু পাইয়ে না দিয়ে জেটলির উপায় নেই

এই বাজেটের কাছে বেশি কিছু প্রত্য়াশা না করাই ভাল।

Advertisement

অমিতাভ গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ১৮:২৭
Share:

গুজরাতের নির্বাচন দেখিয়ে দিয়েছে, গ্রামীণ ভারতে কী বিপুল অসন্তোষ জমেছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এটাই শেষ কেন্দ্রীয় বাজেট। কিন্তু, সেই নির্বাচনের আগে, এই বছরই, কর্নাটক, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ় আর মধ্যপ্রদেশের মতো মহা গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচন। কাজেই, প্রায় চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যেত, পয়লা ফেব্রুয়ারি অরুণ জেটলি যে বাজেট পড়বেন, তার পাশে লেখা থাকবে— বিপুল সরকারি খরচের বরাদ্দ। বাংলায় যাকে বলে ‘পপুলিস্ট বাজেট’!

Advertisement

কিন্তু, এ দফায় বুক ঠুকে এমন কথা বলা মুশকিল। কারণ, গত বছর পয়লা জুলাই থেকে গোটা দেশে জিএসটি চালু হয়েছে। আর, তার দৌলতে হ্রাস পেয়েছে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ। জিএসটি বাবদ রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ অক্টোবর থেকেই কমতে আরম্ভ করেছে। নভেম্বর মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ জুলাইয়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ কম। অন্য দিকে রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণও বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ফের ঊর্ধ্বমুখী। অতএব, খরচ করার মতো যথেষ্ট টাকা এ বাজেটে অরুণ জেটলির হাতে থাকবে কি না, সংশয় তৈরি হয়েছে।

তবুও, এই বাজেটে ব্যয়বরাদ্দ খানিক বাড়বে। সেটা কোন ক্ষেত্রে যাবে? প্রাথমিক অনুমান বলছে, কৃষিক্ষেত্রে। অরুণ জেটলি ইতিমধ্যেই বলেছেন, সরকার কৃষিক্ষেত্রের কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছে (ভাব সম্প্রসারণ করলে দাঁড়ায়, মধ্যপ্রদেশ থেকে মহারাষ্ট্র, গুজরাত থেকে পঞ্জাব, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষকদের বিক্ষোভ দেখে তাঁরা বুঝেছেন, কিছু না করলেই নয়)। জেটলির মতে, কৃষিপণ্যের জন্য কৃষকরা যথেষ্ট দাম পাচ্ছেন না। পরিসংখ্যানও বলছে, কৃষিক্ষেত্র পিছিয়ে রয়েছে। ভারতীয় অর্থনীতির আটটি ক্ষেত্রের মধ্যে কৃষিতেই গ্রস ভ্যালু অ্যাডেড-এর পরিমাণ সবচেয়ে কম। সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিকাল অফিসের ফার্স্ট অ্যাডভান্স এস্টিমেট বলছে, এই অর্থবর্ষে কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে মাত্র ২.১ শতাংশ। গত অর্থবর্ষে হারটি ছিল ৪.৯ শতাংশ।

Advertisement

অতএব, কৃষিক্ষেত্রে ব্যয়বরাদ্দ বাড়বে, অনুমান করা যায়। কিন্তু, সে টাকা কী ভাবে খরচ হবে? কৃষির পরিকাঠামোগত উন্নতির চেষ্টা হবে? আধুনিকতর প্রযুক্তি আসবে? না কি, খানিক টাকা পাইয়ে দেওয়াতেই চেষ্টা সীমাবদ্ধ থাকবে? গত কয়েক মাসের চলন দেখলে সন্দেহ হয়, শেষ সম্ভাবনাটিই জোরদার।

জিএসটি-র হার ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক দফা সংশোধিত হয়েছে। বাজেটের দিন অরুণ জেটলি কি আরও কিছু সংশোধন ঘোষণা করবেন? সম্ভাবনাটি উড়িয়ে দেওয়ার নয়। তবে, কোনও কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রত্যাশা না করাই ভাল। তার কারণ, জিএসটি-র হারের সংশোধন একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং তা জিএসটি পর্ষদের মাধ্যমেই ঘটবে।

মধ্যবিত্ত আশাবাদী হতে পারে, প্রত্যক্ষ করের হার খানিক হলেও কমবে। ইতিমধ্যেই লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্সের মেয়াদ ন্যূনতম তিন বছরের পরিবর্তে দুই বছর করার কথা হচ্ছে। অনেকেই আশাবাদী, আয়করের ক্ষেত্রেও ছাড় আসছে। করের ধাপ পাল্টাবে, করহীন আয়ের পরিমাণও আড়াই লক্ষ টাকা থেকে বেড়ে অন্তত তিন লক্ষ টাকা হবে। অনেকের মতে, আরও বেশি ছাড় পাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

তবে, এই বাজেটের কাছে খুব বেশি প্রত্যাশা না করাই ভাল। বেশি কিছু দেওয়ার উপায় অরুণ জেটলির এ বছর নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন