(বাঁ দিকে) লালুপ্রসাদ যাদব এবং রাবড়ী দেবী (ডান দিকে)। পিছনে ৩৯ হার্ডিং রোডের বাসভবন, যেখানে উঠে যেতে বলা হয়েছে লালুর পরিবারকে। ছবি: সংগৃহীত।
বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে আরজেডি-র শোচনীয় পরাজয়ের পরেই লালুপ্রসাদ যাদব এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের পুরনো বাংলো ছাড়তে বলা হয়েছে। গত ২০ বছর ধরে পটনার ১০ সার্কুলার রোডের সরকারি বাংলোয় থাকেন লালু, তাঁর স্ত্রী রাবড়ী দেবী এবং পরিবারের অন্য সদস্যেরা। কিন্তু সরকারি নির্দেশের পরেও পুরনো বাংলো ছেড়ে নতুন ঠিকানায় উঠে যেতে নারাজ রাবড়ী দেবী। লালুর স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই তিনি সার্কুলার রোডের বাংলো ছাড়তে চাইছেন না বলে জানিয়েছে আরজেডি।
বিহারে আরজেডি-র রাজ্য সভাপতি মঙ্গনিলাল মণ্ডল ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-কে জানিয়েছেন যে, লালুর স্বাস্থ্যের যা অবস্থা, তাতে তাঁর জন্য লিফ্ট প্রয়োজন। আর সেটি ১০ সার্কুলার রোডের বাংলোয় রয়েছে। তা ছাড়া, সদ্য বরাদ্দ করা বাসভবনের তুলনায় এই বাংলো অনেক বেশি প্রশস্ত হওয়ায় লালু-রাবড়ীর নিরাপত্তারক্ষীরা স্বচ্ছন্দে সেখানে থাকতে পারেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এই সমস্ত কারণেই বাংলো না-ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ী দেবী।
আরজেডি নেতা মঙ্গনি বলেন, “রাবড়ী দেবী এই বাড়ি (১০ সার্কুলার রোডের বাংলো) ছাড়বেন না। কারণ এখানে লালুজির জন্য একটি লিফ্ট রয়েছে। স্বাস্থ্যের কারণে লালুজির এটা প্রয়োজন। তা ছাড়া, যে বাড়ি বরাদ্দ করা হয়েছে, তার তুলনায় এই বাংলোয় পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। ফলে লালুজি এবং রাবড়ী দেবী, দু’জনের নিরাপত্তারক্ষীরাই সেখানে থাকতে পারেন।” বাংলো ছাড়ার নির্দেশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও অভিযোগ করেছেন লালুর দলের এই নেতা।
১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন রাবড়ী দেবী। ২০০৫ সালে আরজেডিকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসেন নীতীশ কুমার। ১৫ বছর পর ক্ষমতাচ্যুত হয় লালুর দল। সেই সময় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ী দেবীর জন্য ১০ সার্কুলার রোডের বাংলোটি বরাদ্দ করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ১ অ্যানে মার্গের সরকারি বাসভবনে থাকতেন রাবড়ী দেবী। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সরকারি ওই বাসভবনে থাকেন নীতীশ। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বেই রয়েছে ১০ সার্কুলার রোডের বাংলোটি। আরজেডি ক্ষমতার বৃত্তে থাক বা না-থাক, গত ২০ বছরে এর আগে কখনও ওই বাংলো থেকে লালুর পরিবারকে উঠে যেতে বলা হয়নি।
বিহারের আইনসভার উচ্চকক্ষ বিধান পরিষদের বিরোধী দলনেত্রী হিসাবে রাবড়ী দেবীর নামেই এত দিন বরাদ্দ করা হয়েছিল বাংলোটি। মঙ্গলবার বিহারের ভবন নির্মাণ দফতরের যুগ্ম সচিব শিব রঞ্জন ১০ সার্কুলার রোডের বাংলোটি ছেড়ে দিয়ে রাবড়ী দেবীকে ৩৯ হার্ডিং রোডের বাসভবনে উঠে যেতে বলেন।
২০১৮ সাল থেকে বিহার আইনসভার উচ্চকক্ষ বিধান পরিষদের বিরোধী নেত্রী রাবড়ী দেবী। সেই পদাধিকারবলেই লালু-পত্নী সার্কুলার রোডের বাংলোর দাবিদার বলে দাবি করেছে আরজেডির একাংশ। আরজেডির রাজ্য সভাপতি মঙ্গনিলাল মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী, বিধানসভার বিরোধী দলনেতার মতো সে রাজ্যের বিধান পরিষদের বিরোধী নেতা বা নেত্রীর জন্য সরকারি বাংলো বরাদ্দ করার আর্জি জানিয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ-ও। দলের মুখপাত্র রাজীবরঞ্জন প্রসাদ পটনা হাই কোর্টের একটি নির্দেশের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ২০১৯ সালে পটনা হাই কোর্ট জানিয়েছিল, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রীদের জন্য সরকারি বাসভবন বরাদ্দ করতে বাধ্য নয় সরকার।