ফেব্রুয়ারিতে ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছিল মধু সিংহের। ছবি: সংগৃহীত।
মাত্র পাঁচ মাস আগে আড়ম্বর করে বিয়ে হয়েছিল লখনউয়ের বাসিন্দা মধু সিংহের। পাত্র মার্চেন্ট নেভি অফিসার। কর্মক্ষেত্র হংকং। নাম অনুরাগ সিংহ। শ্বশুরবাড়ি থেকে সেই বধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করল পরিবার। স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হলেন মার্চেন্ট নেভি অফিসার স্বামী। মধুর বাপের বাড়ির দাবি, ১৫ লক্ষ টাকা পণ দিতে না-পারায় তাদের মেয়েকে দিনের পর দিন অত্যাচার করেছেন জামাই। এমনকি, মধুর গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন অভিযুক্ত।
চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি মধু এবং অনুরাগের চার হাত এক হয়। ঘটকালির ওয়েবসাইট থেকে সম্বন্ধ হয়েছিল তাঁদের। মধুর পরিবারের দাবি, বিয়ের পর জামাই ১৫ লক্ষ টাকা পণ চেয়েছিলেন। কিন্তু বিয়েতে অনেক খরচ হয়ে গিয়েছে। বিশেষ টাকাপয়সা নেই পাত্রীর বাবার কাছে। তিনি জামাইকে বলেছিলেন, মেরেকেটে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জোগাড় করতে পারেন। তখন মুখে কিছুই বলেননি অনুরাগ। কিন্তু বাড়িতে স্ত্রীর উপর অত্যাচার শুরু করেন তিনি।
দিন দুই আগে শ্বশুরবাড়িতে ফোন করে স্ত্রীর আত্মহত্যার খবর দেন অনুরাগ। তিনি জানান, বাড়িতে কেউ না-থাকার সুযোগে গলায় দড়ি দিয়েছেন মধু। কিন্তু মধুর বাবা তা মানতে নারাজ। তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, মেয়েকে খুন করেছেন জামাই। তিনি জামাইয়ের হোয়াট্সঅ্যাপ চ্যাট দেখিয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন, বিয়ের এক মাসের মধ্যে (হোলির দিন) মধুর গায়ে প্রথম হাত তোলেন মার্চেন্ট নেভি অফিসার জামাই। অভিমানে তাঁর কাছে চলে এসেছিলেন মেয়ে। পরে বুঝিয়ে আবার মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠান। কিছু টাকাও দেন জামাইকে দেওয়ার জন্য। কিন্তু অত্যাচার থামেনি।
সস্ত্রীক মার্চেন্ট নেভি অফিসার। ছবি: সংগৃহীত।
মধুর বোন প্রিয়ার অভিযোগ, দিদি খুবই উচ্ছল প্রকৃতির মেয়ে। সকলের সঙ্গে মিশতে ভালবাসতেন। কিন্তু কয়েক মাস তাঁর কোনও বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। প্রিয়া বলেন, ‘‘দিদির শ্বশুরবাড়ি থেকে বলে দেওয়া হয়েছিল, কারও সঙ্গে মেলামেশা করা যাবে না। আমাদের সঙ্গেও কথা বলতে বারণ করা হয়েছিল। আর জামাইবাবু এতটাই সন্দেহবাতিক যে প্রতিদিন দিদির ফোন খুলে দেখত।’’
মৃতার বোন এ-ও জানান, দিদি তাঁকে শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাঁরা অসহায় ছিলেন। কিছু করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘শেষ বার ওর উপর গায়ে হাত তুলেছে কবে, সেটাও জানি। ওরা গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিল। সে দিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। রাস্তাও খারাপ। দিদি গাড়ি চালাচ্ছিল। বাঁ দিক ঘেঁষে গাড়িটা থামিয়ে দিয়েছিল। সেই জন্য মার! জামাইবাবু বলেছিল, কয়েক জন ছেলেকে দেখে গাড়ি থামিয়ে দিয়েছে দিদি। তার পর এক দিন আমায় কাঁদতে কাঁদতে দিদি বলেছিল, ‘মদ খেয়ে আমাকে খুব মেরেছে আজ। কারণ ও যখন মদ খাচ্ছিল আমি কেন বোতল এগিয়ে দিইনি!’’’
মধুর বাপের বাড়ির আরও অভিযোগ, কোনও কারণ ছাড়াই জামাই মেয়েকে মারধর করতেন। মেয়ে তাদের কাছে আসতে চাননি কারণ তাঁর আশঙ্কা ছিল, তাতে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হবে। আরও অশান্তি হবে বাড়িতে। জামাইয়ের বিরুদ্ধে আরও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন শ্বশুর। তাঁর দাবি, তাঁর মেয়ের জোর করে গর্ভপাত করিয়েছেন জামাই। তা ছাড়া জামাইয়ের পরকীয়া রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিল। কিন্তু ওর গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দিতে বাধ্য করে অনুরাগ। আর মেয়ের চার দিন আগে একটি হোটেলে গিয়েছিল জামাই। সঙ্গে ছিল ওর বান্ধবী। বিয়ের আগে ওই মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল জামাইয়ের। বিয়ের পরেও সম্পর্কে রয়েছে ওরা। নিজেদের জন্য আমার মেয়েটাকে বলি করল!’’
অন্য দিকে, যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন মার্চেন্ট নেভি অফিসার অনুরাগ। তাঁর দাবি, স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু কারণ কী? সদুত্তর দিতে পারেননি যুবক। ৩২ বছরের যুবতীর রহস্যমৃত্যুতে স্বামীর বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসা, খুন-সহ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, জেল হেফাজতে নেওয়ার সময় অনুরাগ ধূমপান করতে চান। পুলিশের কাছে সিগারেট চেয়েছিলেন।