আরএসএসের প্যান্ট বদল: হাফ হল ফুল, খাকি হল বাদামি

শ্যারন স্টোনকে মাত দেওয়ার সুযোগটি হারালেন নিতিন গডকড়ী। বছর চারেক আগে আরএসএসের খাকি হাফপ্যান্ট পড়ে নিতিন গডকড়ী আর শ্যারন স্টোনের ‘লেগ-শো’র ছবি ভাইরাল হয়েছিল স্যোশাল মিডিয়ায়। হাসি-ঠাট্টা-মস্করাও কম হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৬ ২১:০০
Share:

শ্যারন স্টোনকে মাত দেওয়ার সুযোগটি হারালেন নিতিন গডকড়ী। বছর চারেক আগে আরএসএসের খাকি হাফপ্যান্ট পড়ে নিতিন গডকড়ী আর শ্যারন স্টোনের ‘লেগ-শো’র ছবি ভাইরাল হয়েছিল স্যোশাল মিডিয়ায়। হাসি-ঠাট্টা-মস্করাও কম হয়নি।

Advertisement

আরএসএস নেতৃত্বও বুঝতে পেরেছেন, একবিংশ শতাব্দীতে আর হাফপ্যান্টের রেওয়াজ টানছে না নতুন প্রজন্মকে। হাফপ্যান্ট থেকে হাঁফ ছাড়তে চাইছে যুব সমাজ। গত কয়েক বছর ধরে বিস্তর কালঘাম ছুটিয়ে আলোচনা করে শেষপর্যন্ত আজ হাফ ছেড়ে ফুলপ্যান্টেই আশ্রয় নিল আরএসএস। খাকির বদলে রংও গেল বদলে। এ বার বাদামি ফুলপ্যান্ট পড়েই অনুষ্ঠানে আসতে পারবেন স্বয়ংসেবকরা।

আরএসএসের সমালোচকেরা বলেন, ইতালির মুসোলিনি আর জার্মানির হিটলারের অনুপ্রেরণায় একসময় খাকি সার্ট আর হাফপ্যান্টের প্রচলন করেছিল আরএসএস। কিন্তু ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেগড়েওয়াড় ১৯২০ সালে নাগপুরে কংগ্রেসের অধিবেশনে খাকি সার্ট, খাকি সর্টস, কালো টুপি, লম্বা মোজা আর বুটের প্রচলন করেছিলেন। টুপিটি না কি গাঁধী থেকে অনুপ্রাণিত। পরে কংগ্রেস আর গাঁধীর থেকে মোহভঙ্গ হওয়ায় ১৯২৫ সালে আরএসএস প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু পোশাকটি অপরিবর্তিত থেকে গিয়েছে। তখন থেকে সার্টের রং বদলে খাকি থেকে সাদা হয়েছে। চামড়ার বুট, বেল্ট বদলেছে। কিন্তু নব্বই বছরে হাফপ্যান্ট কখনও ফুল হয়নি।

Advertisement

গত বছর রাঁচিতেই আরএসএসের প্রতিনিধি সভায় মোটের উপর সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল, আর হাফপ্যান্ট নয়। বিরোধ ছিল না তা নয়, কিন্তু ঝক্কি ছিল রং নিয়ে। কারও পছন্দ ছিল নীল, কারও ধূসর। কেউ বা চেয়েছিলেন খাকিই থাক। কিন্তু রাজস্থানের নাগৌরে তিনদিনের প্রতিনিধি সভা শেষে আজ আরএসএসের নেতা ভাইয়াজি যোশী ঘোষণা করলেন, বাদামী রংয়ের ফুলপ্যান্টই চলবে এখন।

কিন্তু কেন এই রং? নব্বই বছরের ঐতিহ্যকে ইতিহাসের পাতায় ঠেলে দেওয়াই বা কেন?

ভাইয়াজি বলেন, যেই রংই আমরা বাছতাম, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠত। যদি সাদা বা কালো রং বাছা হত, তাতেও প্রশ্ন উঠত। গেরুয়া রং-এ আরও আলোচনা হত। বাদামী রং দেখতে ভালো। আর সহজে পাওয়া যায়, তাই শেষপর্যন্ত এই রং বাছা হয়েছে। আমাদের কোনও জড়তা নেই। সময়ের সঙ্গে খাপ খেয়ে নিতেই এই সিদ্ধান্ত। গত এক বছরে ১ লক্ষ ৩৫ হাজারের বেশি যুবক সঙ্ঘের থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। শাখার সংখ্যাও বাড়ছে। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় নরেন্দ্র মোদীও হাফপ্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্ট করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ নেতা রাকেশ সিনহার মতে, একসময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়বার জন্য পোশাকের রং খাকি রাখা হয়েছিল। বিভিন্ন শারীরীক অনুশীলন ও কসরতের জন্য সেই সময় হাফপ্যান্টই শ্রেয় ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বদলেছে। নতুন প্রজন্ম হাফপ্যান্টে সচ্ছন্দ নয়। শীতের সময় সঙ্ঘের শাখায় বাচ্চা ও বৃদ্ধদের অসুবিধা হয়। আর খাকি রংয়ের সঙ্গে পুলিশের পোশাকের মিল আছে। তাই সব ভেবেই রং বদলও করা হয়েছে। তবে রং বদলালেও আমাদের বিচারধারার কোনও পরিবর্তন হয়নি।

তবে বিরোধী দল এই সুযোগেও আরএসএসকে আক্রমণ করতে ছাড়েনি। সদ্য গতকালই কংগ্রেসের নেতা গুলাম নবি আজাদ আরএসএসকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী আইএস-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। কংগ্রেসের নেতা প্রদীপ জৈনের মতে, পোশাক আর তার রং বদলালেও আরএসএসের বিচারধারার তো কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। যতই ইমেজ মেকওভার করুক তারা, আরএসএসের দলিত ও মহিলা বিরোধী মানসিকতা যাবে কোথা থেকে?

আরও পড়ুন-বিজয় মাল্যের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন