বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
যুদ্ধবিরতির ডাক পাকিস্তানই দিয়েছিল। কারণ, তাদের সামনে আর কোনও পথই খোলা ছিল না। বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিলেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু হওয়ার পরে এই প্রথম বার মুখ খুললেন তিনি। জানালেন, পাকিস্তানের সামনে যে যুদ্ধবিরতির জন্য অনুরোধ করা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না, তার প্রমাণ হল ভারতীয় সেনার প্রকাশ করা উপগ্রহচিত্র। ভারতের অভিযানে পাকিস্তান যে কতটা ধাক্কা খেয়েছে, তা ওই চিত্র থেকে স্পষ্ট।
জয়শঙ্কর এ-ও স্পষ্ট করেছেন যে, পাকিস্তানের সেনাঘাঁটি নিশানা করেনি ভারত। তাদের নিশানা ছিল জঙ্গিঘাঁটি। পাক সেনাকে এই অভিযানে নাক গলাতে বারণ করা হলেও তারা শোনেনি। জয়শঙ্করের কথায়, ‘‘জঙ্গি পরিকাঠামো ধ্বংস করার যে লক্ষ্য ছিল, তাতে আমরা সফল হয়েছি। অভিযানের শুরুতেই আমরা পাকিস্তানকে বার্তা দিয়ে জানিয়েছিলাম যে, আমরা জঙ্গিঘাঁটিতে হানা দিচ্ছি। সেনাঘাঁটিতে নয়। এই বিষয়ে নাক গলাতে বারণ করা হয়েছিল পাক সেনাকে। ওরা সুপরামর্শ শোনেনি।’’ তিনি আরও জানান, ভারতের অভিযানে পাকিস্তানের ১১টি সেনাঘাঁটি বিপর্যস্ত হওয়ার পরে যুদ্ধবিরতির ডাক দেয় শাহবাজ় শরিফ সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘১০ মে সকালে বড়সড় ধাক্কা খেয়ে... উপগ্রহ চিত্র দেখলেই স্পষ্ট হবে, আমরা কতটা ধাক্কা দিয়েছি আর ওরা কতটুকু আমাদের ক্ষতি করেছে। এর থেকেই স্পষ্ট, কে যুদ্ধবিরতি চেয়েছে।’’
ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে যুদ্ধবিরতির ডাক দেয় পাকিস্তান। দুই দেশ ১০ মে যুদ্ধবিরতির পথে হাঁটে। ভারত স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, এ ক্ষেত্রে অনুরোধ এসেছিল পাকিস্তান থেকে। শনিবার সকালে কখন প্রথম যোগাযোগ করা হয়, তা-ও সময় প্রকাশ করে জানিয়েছে ভারত। যদিও পাকিস্তান পাল্টা দাবি করেছে, তারা যুদ্ধবিরতির ডাক দেয়নি। এ বার তাদের সেই দাবি আবার খারিজ করলেন বিদেশমন্ত্রী। প্রমাণ হিসেবে উপগ্রহচিত্রের কথা তুলে ধরলেন তিনি। আর তা করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবিও উড়িয়ে দেন তিনি। ট্রাম্প দাবি করেন, তাঁর মধ্যস্থতার কারণে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হয়েছে। ভারত আরও এক বার স্পষ্ট করল যে, পাকিস্তানই যুদ্ধবিরতির জন্য অনুরোধ করেছে।
জয়শঙ্কর যে কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত ছবির কথা বলেছেন, তা প্রকাশ্যে এনেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। আর তাতেই ধরা পড়েছে পাকিস্তানের বহাওয়ালপুর এবং মুরিদকেতে হামলার পরবর্তী চিত্র। পাশাপাশি, পাসরুরে পাক বিমান প্রতিরক্ষা রেডার এবং বিমানঘাঁটিগুলিতে ভারতের প্রত্যাঘাতী হামলার পরবর্তী ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে। সেই উপগ্রহচিত্রের কথাই তুলে ধরেছেন জয়শঙ্কর। তার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সুরেই বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এর পরে পাকিস্তানের সঙ্গে শুধুই সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কথা হবে। পাকিস্তানের কাছে বেশ কয়েক জন জঙ্গি রয়েছে, যাদের তুলে দিতে হবে। সন্ত্রাসবাদের পরিকাঠামোও বন্ধ করতে হবে।’’ এই প্রসঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় ভারত প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে এ-ও জানিয়েছেন যে, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় রাজি ভারত। তাঁর কথায়, ‘‘তবে এ ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির অবস্থা স্পষ্ট। বেআইনি ভাবে পাকিস্তানের দখল করা কাশ্মীর খালি করতে হবে।’’ কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতায় আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প। ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, এই বিষয়ে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা মানবে না তারা।