ডলারে ঋণ নিয়ে হুঁশিয়ারি সঙ্ঘেরও

শুধু তা-ই নয়। মহাজন মনে করিয়ে দিয়েছেন, গত অর্থ বছরে সরকারের অনুমানের তুলনায় কর বাবদ আয় অনেক কম হয়েছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেটে সে কথা স্বীকার করেননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০২:২৮
Share:

নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এ বার সঙ্ঘ-পরিবারের মধ্যে থেকেই আপত্তি উঠল। আরএসএসের সংগঠন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ রীতিমতো বিবৃতি জারি করে জানিয়ে দিল, এই পদক্ষেপ বিপজ্জনক হতে পারে। মঞ্চের যুগ্ম-আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজনের মতে, কম সুদ মেটাতে হবে ভেবে বিদেশ থেকে ধার করতে গিয়ে ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, আর্জেন্তিনা, মেক্সিকো-র মতো ঋণের বোঝার ফাঁদে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ারও ঝুঁকি বাড়বে।

Advertisement

শুধু তা-ই নয়। মহাজন মনে করিয়ে দিয়েছেন, গত অর্থ বছরে সরকারের অনুমানের তুলনায় কর বাবদ আয় অনেক কম হয়েছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেটে সে কথা স্বীকার করেননি। তবে ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখার কথাই আউড়েছেন। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, সরকার বিদেশে সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত বন্ড ছেড়ে ডলারে ঋণ করবে। কম সুদে ঋণ পেতেই এই পরিকল্পনা। আমলারা জানিয়েছেন, চলতি অর্থ বছরের ৭ লক্ষ কোটি টাকা রাজকোষ ঘাটতির প্রায় ১০%বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়া হবে। অর্থাৎ, ডলারের বর্তমান দর হিসেব করলে তা দাঁড়ায় প্রায় হাজার কোটি ডলার। এর মধ্যে প্রথম দফায় জল মাপতে ৪০০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হবে বলে অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর।

মোদী সরকারের এই পরিকল্পনা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন রঘুরাম রাজন, সি রঙ্গরাজনের মতো রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নরেরা। রঘুরামকে সমর্থন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রথীন রায়। রঘুরাম রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের পদে থাকাকালীন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ নিত্য দিন তাঁর সমালোচনা করত। এ বার মোদী সরকারের সমালোচনায় আরএসএসের নেতারা রঘুরামের পাশে। রঘুরাম বলেছিলেন, বিদেশি ব্যাঙ্কের কর্তারা এসে অর্থ মন্ত্রকে বিদেশি মুদ্রায় ঋণ নিতে সওয়াল করে। কারণ এতে তাদের লাভ। অশ্বিনী মহাজনের দাবি, সরকারের মধ্যে কারা এই সব সুপারিশ করছে, তাদের মুখোশ খোলা দরকার। শুধু আমলাদের কথায় না চলে সরকারের উচিত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা। অশ্বিনী মহাজনের যুক্তি, বাজপেয়ী জমানায় অনাবাসী ভারতীয়দের থেকে বন্ডের মাধ্যমে টাকা তোলা হয়েছিল। বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আইএমএফ, এডিবি-র থেকেও ঋণ নেওয়া হয়। কিন্তু ডলারে ঋণ নেওয়া হয়নি। বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার যখন ৪৩০০০ কোটি ডলার, তখন বিদেশি মুদ্রায় ঋণ নেওয়ার কোনও যুক্তিই নেই। মোদী সরকারের যুক্তি ছিল, জিডিপি-র তুলনায় সরকারের ঋণের হার ৫ শতাংশের কম। তা বাড়লেও ক্ষতি নেই। কিন্তু মহাজনের মতে, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো-র মতো দেশগুলি ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে ঋণ নিতে গিয়েই এখন তাদের ঋণের পরিমাণ ৩০ শতাংশ ছাপিয়ে গিয়েছে। সেই ধার মেটাতে আরও ধার করতে হচ্ছে। কারণ কম সুদে ধার মিললেও ডলারের দাম বেড়ে গেলে সুদের বোঝাও বেড়ে যাবে। ডলারে ধার নিলেও তা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকায় বদলে নিতে হবে। ফলে মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে। প্রাক্তন অর্থসচিব অরবিন্দ মায়ারামের বক্তব্য, ‘‘২০১৩-তেও মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের নীতির ফলে দেশের বাজারে ডলারের টানাটানিতে টাকার দাম পড়ে যায়। বিদেশি ব্যাঙ্কাররা অর্থ মন্ত্রকে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করেন। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রাজন ও অর্থসচিব হিসেবে আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম, কোনও সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত বন্ডে ডলারে টাকা তোলা হবে না।’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন